কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার এক যুবকের সঙ্গে অভিনব কায়দায় প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে কুমিল্লায় একটি প্রতারণা মামলা করেছেন ভুক্তভোগী যুবক। ভুক্তভোগী যুবক নবী নেওয়াজ (৩৯) উপজেলার পায়ব গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার চন্দ্রবাড়ি গ্রামের শাহজাহান আলীর মেয়ে কামরুন্নাহারের সঙ্গে পরিচয় হয়। যা পরবর্তীতে গভীর প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। একপর্যায়ে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বাড়ির কাউকে না জানিয়ে ঢাকা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কোর্ট ম্যারিজের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর থেকে তারা কুমিল্লা শহরের উত্তর রেইসকোর্স এলাকার স্বপ্ন ভিলা নামের ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করলেও ২০২১ সালে কামরুন্নাহার ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের স্টাফ নার্স হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে থাকতে শুরু করেন। এরপর থেকেই তাদের মাঝে দূরত্বের সৃষ্টি হতে থাকে। একপর্যায়ে নবী নেওয়াজ জানতে পারেন কামরুন্নাহার ডালিম নামে এক ছেলের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে গেছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি (শনিবার) কামরুন্নাহারের বাবা শাহজাহান আলী ও মা শাহিদা বেগম মেয়ের ভাড়া বাসায় বেড়াতে গিয়ে গোপালপুরে জমি ক্রয়ের কথা বলে নবী নেওয়াজ থেকে ধার হিসেবে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নেন। এদিকে টাকা নেয়ার পর থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মাঝে কলহের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে তার পাওনা টাকা ফেরত চাইলে তাকে নানা অজুহাতে মিথ্যে আশ্বাস দিতে থাকেন।
গত ১৩ এপ্রিল (বুধবার) কামরুন্নাহার কুমিল্লার ভাড়া বাসায় ফিরে এসে তিনদিন অবস্থান করেন। ১৬ এপ্রিল (শনিবার) নবী নেওয়াজের অনুপস্থিতিতে গোপনে আলমারি থেকে ৭ লাখ টাকাসহ প্রয়োাজনীয় কিছু কাগজ নিয়ে পালিয়ে যান। বিষয়টি জানতে পেরে নবী নেওয়াজ টাকা ফেরত চাইলে কামরুন্নাহার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
পরবর্তীতে গত ২৫ মে (বুধবার) নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নবী নেওয়াজকে তালাক নামা প্রেরণ করেন কামরুন্নাহার। বিষয়টি নিয়ে তিনি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গত ১৯ জুন (রোববার) কুমিল্লা আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেয়।
এদিকে মামলা তুলে নিতে কামরুন্নাহার ও তার পরিবারের লোকজন মুঠোফোনে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। হুমকির অভিযোগে গত ২৬ জুন (রোববার) কুমিল্লা কোতয়াালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
ভুক্তভোগী স্বামী নবী নেওয়াজের দায়ের করা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে স্ত্রী কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, আমি কামরুন্নাহারকে অনলাইনে পছন্দ করে বিয়ে করি ও তার চাকরির ব্যবস্থা করি। বিয়ের পর থেকে তার বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো নয় বলে নানা অজুহাতে টাকা নিতেন। সবশেষ তার বাবা-মা আমার থেকে ধার নেন ও তিনি আমার আলমারি থেকে টাকা চুরি করেন। এসব চাইতে গেলে আমায় হুমকি ও তালাক দেন। আমি একাধিকবার সংসার বাঁচাতে সামাজিক সমাধানের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি এবং এমন প্রতারকদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার প্রার্থনা করছি।
কুমিল্লার ভাড়া বাসার কেয়ার টেকার সাজ্জাদ জানান, এ বছরের রোজার মাসের মাঝে তাকে তাড়াহুড়া করে বাসা থেকে বের হতে দেখেছি। এরপর থেকে আর দেখিনি কখনো।
দায়ের করা মামলার কথা অস্বীকার করে কামরুন্নাহারের মা শাহিদা বেগম বলেন, আমরা বিয়ের বেশ পরে এসব ঘটনা শুনেছি। সে বিয়ে করেছে নিজের পছন্দে এবং পরে নিজের পছন্দেই তাকে তালাক দিয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে এমন করে কারো টাকা নিতে পারে না। এসব মিথ্যা কথা।
কামরুন্নাহারের মামা আব্দুল হাই বলেন, চাকরির জন্য কোনো টাকা লাগেনি। আমাদের ভাগ্নি নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে।
কামরুন্নাহারের এক প্রতিবেশী বলেন, ঈদে কামরুন্নাহারকে বেশ দামি মার্কেট করে বাড়ি আসতে দেখেছি। ছোট চাকরি করে এমন মার্কেট একটু অন্যরকম লাগে।
কামরুন্নাহার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো মিথ্যে, বানোয়াট ও মনগড়া কথা দিয়ে মামলা সাজিয়েছে। ডিভোর্সের পর থেকে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।