কুমিল্লায় বিপন্ন হয়ে গেছে ১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

এক সময় আষাঢ়- শ্রাবন মাসে কুমিল্লা জেলার খাল বিল ও জলাশয়ে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। সকালে স্থানীয় হাটে সেসব মাছ বিক্রি হতো। দেশীয় জাতের এসব ছোট বড় মাছে পূরণ হতো আমিষের চাহিদা। তবে বিভিন্ন কারনে ৫২ প্রজাতির মধ্যে কুমিল্লা জেলা থেকে ইতিমধ্যে ১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন হয়ে গেছে । এখন খালে বিলে জলাশয়ে দেখা যায় না ছোট-বড় দেশীয় মাছ। ১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিপন্ন হওয়ার খবরের মধ্যে দিয়েই আজ কুমিল্লায় শুরু হচ্ছে মৎস্য সপ্তাহ।
কুমিল্লা মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ১৮ প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে মহাশোল, নাপ্তি কই, গুতুম, বাতাসি, খলিশা , নানদিনা, রিটা, বাচা, সেনুয়া, গাত্তার, বুইতা, বাগাইড়, আইড়, নামাচান্দা, তারাবাইম, বড় বাইম, দারকিনা, মেনা বা ভেদা ও রানী মাছ।
আবুল কালাম আজাদ। তিনি এখন কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করতেন। তার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুরে। আবুল কালাম বলেন, তিনি তার বাড়ির চারপাশে জলাশয়ে মাছ ধরে গঞ্জে নিয়ে বিক্রি করতেন। প্রায় বছর পাচেক ধরে সেসব জলাশয় খাল বিলে আর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় না। বছরের অন্তত ৬ মাস তিনি দেশীয় মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতে পারতেন। এখন আর সেসব দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না বলে পেশার পরিবর্তন করেছেন।
আদর্শ সদর উপজেলার আবু মিয়া বলেন, ভাই ক্ষেতি কিষি করে সংসার চালাই। হাওন ( শ্রাবন) মাসে খাডি হিচ্ছা কত মাছ ধরছি। টেংরা, বইচা, পুডি, টাহি, হইল। এহন আর এডি পাওন যায় না। কই গেলো মাছডি।
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ভান্তি এলাকার গোমতীনদীর পাড়ের বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বলেন, গোমতীর পানিতে আগে তক বাগাইড়, কালি বাউশ, বোয়াল পাইতাম। বহুত দিন অইল বোয়াল-কালিবাউশ মাছ দেহিনা । কই গেলো বোয়াল-হইল কালি বাউশ।

কেন দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে…
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনপাল গ্রামের বাসিন্দা নোয়াব মিয়া বলেন, যেমনে ক্ষেতের ভিতরে ঔষধ দেয় মানুষ, এরপর ক্ষেতের ভিতর ফিশারি কইরা মাছের চলাচলের পথ নষ্ট কইরা লাইছে। এহন আগের মত খাডি নাই। বিলডি সব পুরাইয়া বাড়ি ঘর বাইন্ধা লাইছে। মাছ আইবো কইত্তে।
বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমডা এক সময় নৌকা লইয়া পয়াতের জলায় মাছ ধরতাম। পাঁচ সাত বছর আগেও চাই আর আন্তা দিয়া পুডি, টাহি, বইচা, টেংরা, টাহি, ময়লা ডেলা কত মাছ ধরছি। অহন পানি নাই। মাছও নাই। কেন এই মাছ নেই এমন প্রশ্নে আক্ষেপ করে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমডা ক্ষেতগুলা মাডি দিয়া পুরাইয়া বাড়ি ঘর করতাছি। এরপর যে যেমনে পারে ঔষুধ দেয়। মাছ মইরা যায়। এল্লাই অহন আর মাছ পাওন যায় না।
কথাগুলোর সাথে একমত পোষণ করে কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন বলেন, ৫৬ প্রজাতির মধ্যে ১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিভিন্ন কারনে বিপন্ন হয়েছে। এখন খালে বিলে দেশীয় মাছগুলো খুব একটা দেখা যায় না। তবে আমরা চেষ্টা করছি দেশীয় প্রজাতির মাছের রেনু সংগ্রহ করার জন্য। আমরা বিশ্বাস করি এখন জেলা মৎস্য অধিদপ্তর যেভাবে দেশীয় মাছ রক্ষার্থে কাজ করছে আগামী বছর পাঁচেকের মধ্যে দেশীয় মাছে আবারো জলাশয় পূর্ণ হবে।