কুমিল্লায় বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ

শীত মৌসুমেও মিলছেনা খেজুরের রস
জাহিদ হাসান নাইম||
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

শীতকাল মানেই খেজুরের রস। তবে, খেজুর রসের আগ্রহ থাকলেও আগের মতো খেজুর গাছ না থাকায় অনেকের স্বাদের রস পান করার ইচ্ছা থাকলেও তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কুমিল্লাতেও যেন একই চিত্র। এই জেলায় এক সময় মানুষের বাড়িতে, সড়কের দ্বারে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেত। শীতকাল আসলে গাছিরা সন্ধ্যায় গাছ কেটে হাঁড়ি বসিয়ে ভোর সকালে রস বিক্রি করত। এখন গাছ নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে দু’একটি খেজুর গাছ থাকলেও তাও সবল নয়। দুর্বল প্রকৃতির গাছগুলোতে আগের মতো আর রস পড়ে না। শুক্রবার কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।

তবে, খেজুরের রসের বিলুপ্তির কারণ হিসেবে বর্তমানে গাছিরা পরিবেশ দূষণকে দায়ী করে বলেন, আগে পরিবেশ ছিল ভালো, প্রতিটি ফল মূলের গাছে ছিল ফুলে ফলে ভরা। বিভিন্ন পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে ফলমূলের গাছে আগের মতো ফল ধরে না। আগে সকালে হাঁড়ি নামিয়ে রস নিয়ে যাওয়ার পরও গাছে ফোঁটায় ফোঁটায় অবিরত ঝড়তে থাকত দুপুর পর্যন্ত। এখন আর সেটি দেখা যায় না।

খেজুর রস সংগ্রহকারী লালমাই উপজেলার বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের ইদ্রিস মিয়া বলেন, ২/৩ বছর আগে আমার ৫টি গাছ থেকে দৈনিক রস সংগ্রহ হতো প্রায় ২৪-২৫ কেজি। আর এ বছর এসে সংগ্রহ হচ্ছে ৫-৬ কেজি। তিনি আরও বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন দূষণে গাছের শক্তি ও ভিটামিন কমে গেছে। আমার গাছগুলোর পাশে গর্ত করে প্রতিদিন পানি দিয়ে গাছগুলো সবল রাখার চেষ্টা করছি। তাছাড়া, আগে প্রচুর খেজুর গাছ ছিল এলাকায়। কিন্তু পরিবেশ দূষণ ও গাছের মালিকরা গাছগুলো লাকড়ি হিসেবে বিক্রি করে দেয়ায় খেজুর গাছ এখন খুব কম। তিনি জানান, অগ্রহায়ণ মাস থেকে এ পর্যন্ত ৫টি গাছ হতে প্রায় ৫শ’ কেজি রস বিক্রি করেছেন ৭০ টাকা কেজিতে। এক সময় প্রতি কেজি খেজুর রস বিক্রি হতো ২০-৩০ টাকায়। বর্তমান সে খেজুরের রস ৭০ টাকা। অনেক জায়গাতে ১০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। আগামী বৈশাখ মাস পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যাবে বলেও ইদ্রিস মিয়া জানান।

এদিকে আরো কয়েকজন খেজুরের রস সংগ্রহকারীর সাথে কথা বললে তারা জানান, রসের চাহিদা অনেক, কিন্তু এরপরও চাহিদা মতো দেয়া যায় না। অনেকে রসের জন্য ঝগড়াও করেন। পালা করে করে রস দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। খেজুরের রসের পিঠার মজাই আলাদা বলে বছরে একবার প্রতিটি পরিবারে রস সংগ্রহ করে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ডুই পিঠা (ভাপা পিঠা), মেরা পিঠা, চিতল পিঠা, পাটিসাপটা, হাতজারা পিঠা খেয়ে থাকেন। আবার অনেকেই আপনজনের বাসায়ও নিয়ে যান দৃষ্টি গোছরের জন্য খেজুর রস। সুযোগের অভাবে দুরন্ত কিশোররা আগের মতো পথের খেজুর গাছের ফোঁটা রস আর খেতে পারে না। খেজুর রস পানের আগ্রহ কোনো কালেই যেন বিলুপ্ত না হয় সেজন্য সরকারিভাবে খেজুর গাছ রোপনের দাবি সর্ব মহলের।

এ নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, খেজুরের রসের সঙ্গে বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি মিল রয়েছে। নানা কারণেই দিন দিন খেজুর গাছগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে সরকারি বে-সরকারিভাবে খেজুর গাছ রোপণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরাও গত বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারীভাবে খেজুরের চারা রোপণ করছি এবং কৃষকদেরকেও খেজুরের চারা রোপণে উৎসাহিত করছি।