কুমিল্লা ইপিজেডে বেড়েছে রপ্তানি ও কর্মসংস্থান

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে কুমিল্লা ইপিজেড এখন একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ক্ষেত্র। রপ্তানি ও কর্মসংস্থান উভয়ই বেড়েছে এখানে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে চলতি অর্থবছরে নতুন দিগন্তের সূচনা করছে কুমিল্লা ইপিজেড। দেশের বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এই অঞ্চলে। গত আট মাসে কুমিল্লা ইপিজেড থেকে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, অর্থবছর শেষে এ সংখ্যা ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০০০ সালে কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ চর্থা এলাকায় কুমিল্লা ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে বর্তমানে ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ৫০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী। গত তিন অর্থবছরে কুমিল্লা ইপিজেড থেকে মোট রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৮১৪ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৯০ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭১১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই রপ্তানি হয়েছে ৬৪৬ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের তুলনায় এটি বেশি। কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি ছাড়াবে ১০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেডে ৩০টি বিদেশি, সাতটি যৌথ ও ১১টি দেশীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এসেছেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, বেলজিয়াম, ইতালি, সুইডেনসহ ৩০টি দেশ থেকে। ২৬৭ একরের কুমিল্লা ইপিজেডে রয়েছে ২৪০টি শিল্প প্লট। শুধু রপ্তানিই নয়, নারীর ক্ষমতায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই অঞ্চল। কোভিড-পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতায় কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘পণ্য রপ্তানির অর্ডার বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে শ্রমিকের সংখ্যাও। খালি কোনো প্লট না থাকায় নতুন বিনিয়োগ বাড়েনি। তবে পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে।’ বর্তমানে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক, যার ৬৫ শতাংশই নারী। উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ, সোয়েটার, ইলেকট্রনিক্স পার্টস, ফুটওয়্যার ও সেফটি জ্যাকেট। নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘প্রতি মাসে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাবদ ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। তাদের ঘিরে নতুন বাজার ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ইয়াছিন মার্কেট, পকেট গেট, নেউরা, চর্থা, মেডিকেল রোড এলাকায় বাড়ছে অর্থনৈতিক লেনদেন। বাড়ছে কর্মসংস্থান। বাড়ি ভাড়া ও অবকাঠামো উন্নয়নও চোখে পড়ার মতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানে কুমিল্লা ইপিজেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার লোক অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। এখানে কর্মরত ২৭০ জন বিদেশি কর্মকর্তা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। তাদের ব্যয়ের অর্থ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।’
তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য পর্যাপ্ত প্লট নেই। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাধ্য হচ্ছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে। এতে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।
কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি জামাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট ঠিক ছিল। ব্যবসায়ীরা এখানে কাজ করে সন্তুষ্ট। যদি প্লটের সংখ্যা বাড়ানো হয়, তাহলে আরও বেশি ক্রেতা আসবে এবং রপ্তানি বাড়বে।’