কুমিল্লা জুড়ে চলছে অস্ত্রের মহড়া: গ্রেপ্তার হয় নি কেউ!

# সন্ত্রাসীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, # উদ্ধার করা হচ্ছে না অস্ত্র # ১০ মাসেও তিন ঘটনায় গ্রেফতার হয়নি কোন অস্ত্রধারী # জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আতঙ্কিত জেলাবাসী
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সাপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ করে শুরু হয়েছে কুমিল্লা জুড়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি। রাজনৈতিক সহিংসতা ছাড়াও অপেশাদার সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে এসব অস্ত্র।কেউ কেউ ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহার করেও চালাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র।
এদিকে জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে,ততই অশান্ত হয়ে উঠছে কুমিল্লার বেশ কয়েকটি উপজেলার রাজনীতি। এছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সম্প্রতি প্রাণহানি ঘটেছে বেশ কিছু। ক্ষমতাশীন দল ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা হচ্ছে এসব অবৈধ অস্ত্র। কিন্তু এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো বিশেষ ভূমিকা ।
জানা গেছে, কুমিল্লার ১০ মাসে তিন ঘটনার প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র হাতে একাধিক ব্যক্তির ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হলেও পুলিশ একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারও হয়নি। ক্ষমতাশীন দলের আধিপত্য বিস্তারে নিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে।
সম্প্রাতিক জেলার বরুড়া উপজেলার একটি অনুষ্ঠানে স্কুল মাঠে দুই যুবককের আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার আট দিনেও অস্ত্রধারীদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি অস্ত্রগুলো। এছাড়াও গত ৬ জুন জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীরা নিজেদের অবস্থান ও শক্তির জানান দিতে ছয়জন যুবকের হাতে অত্যাধুনিক অবৈধ অস্ত্র প্রকাশ্যে মহড়া দিলেও, তাদের গ্রেফতার বা অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর দেখা যায়নি প্রশাসনের।
দুইটি ঘটনার ঠিক ১০ মাস আগেও ২০২২ সালে ৫ নভেম্বর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গণমাধ্যমে চার নেতাকর্মী হাতে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিলেও একজনকে আটক করেনি পুলিশ।
কেনো,কি কারনে তাদের আটক করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রাজেস বড়ুয়া বলেন, জেলা বিভিন্ন স্থানে যারা অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করছে, আমরা তাদের চিহ্নিত করে দ্র্রুতই তাদেরকে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন),কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মাদ আলমগীর খান বলেন,আগামী নির্বাচনে সুন্দর পরিবেশ রাখতে হলে এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। না হয় সামনের নির্বাচনে মানুষ আর ভোট কেন্দ্রে যাবে না। আমি অবাক হয়েছি কুমিল্লার বেশ কয়েকটি উপজেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র মহড়া হলেও, অস্ত্র উদ্ধার বা অস্ত্রধারী কাউকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এ সব অস্ত্র উদ্ধারে এগিয়ে আসা। অস্ত্রধারী যে দলের হউক তাদের ছাড় দেওয়া যাবে না। না হয় আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা চাই রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে প্রশাসনের যৌথ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে বিচারের মুখামুখি করতে হবে।

কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) খন্দকার আশফাকুজ্জামন বলেন, অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার ও অভিযুক্তদের ধরতে আমরা কাজ করছি । অস্ত্র মহড়া জড়িত প্রতিটি ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হচ্ছে, যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে।
র‌্যাব-১১,সিপিসি-২,কুমিল্লার উপপরিচালক স্কোয়াড্রন লীডার এ কে এম মুনিরুল আলম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কুমিল্লার যেসব এলাকায় অস্ত্র প্রদর্শন হয়েছে,আমরা প্রতিটি ঘটনার গুরুত্ব সহকারে দেখছি । র‌্যাব বিশেষভাবে অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ আমরা খুব তাড়াতাড়ি অস্ত্রধারীদের ও অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে পারবো।

১০ বিজিবির কুমিল্লার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মাদ রেদওয়ালু ইসলাম বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র যেন না আসতে পারে সেক্ষেত্রে আমরা ১০ বিজিবি সবসময় সতর্ক অবস্থানে আছি। আর অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি আমাদের নয়,এটি স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনীর বিষয় ।