কোম্পানীগঞ্জে গোমতীর বেড়িবাঁধে স্থায়ী স্থাপনা নিমার্ণ করে কোটি টাকার বাণিজ্য

# প্রতিবাদে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন # দেড় শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), কুমিল্লা থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারের দক্ষিণে গোমতী নদীর বেড়িবাঁধের ৪৫ শতাংশ জমি ইজারা নেন উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভুবনঘর গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে নজরুল ইসলাম।
অভিযোগ উঠেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নাম ভাঙিয়ে লিজ নিয়ে নজরুল ইজারার শর্ত ভেঙেছেন। ওইস্থানে নজরুল স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে শতাধিক দোকান তৈরি করেছেন।
এদিকে, স্থায়ী স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য পাউবো থেকে চিঠি দেওয়া হলেও নজরুল বিষয়টিকে পাত্তা দেননি। শুধু তাই নয়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নামে ইজারা এনে সেখানে ১শ ৫টি দোকান নির্মাণ করে বাণিজ্য করেছেন কোটি টাকার বেশি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বসবাস করা দেড় শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করেছেন তিনি। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করেছে। গতকাল শনিবার কুমিল্লা নগরীর একটি হোটেলে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন উপজেলার উত্তর ত্রিশ গ্রামের মো.মোস্তফা। তিনি ওই বেড়িবাঁধে গত ৬০ বছর ধরে স্টেশনারি ব্যবসা করছিলেন। প্রভাবশালী নজরুল অন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাকেও উচ্ছেদ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোস্তফা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভূমি ইজারা নিয়ে ওই উপজেলায় অবৈধভাবে ১০৫টি দোকান স্থায়ীভাবে স্থাপন করেছেন নজরুল ইসলাম। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরে আসলে গত ২২ মে নজরুল ইসলামকে নোটিশ প্রদান করা হয় স্থায়ী স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থে একসনা লিজ এনে বিষয়টি গোপন করে স্থায়ী লিজের কথা বলে প্রতিটি দোকান গড়ে দশ লাখ টাকা করে বিক্রি করে ১০৫টি দোকান থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইজারাদার নজরুল ইসলাম।
কুমিল্লা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, ৪৫ শতাংশ ভূমি ইজারা দেওয়া হয়েছে নজরুল ইসলামের নামে। ইজারাদারের সঙ্গে ২০টি শর্তে চুক্তি হয়। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ভূমি ইজারার শর্তে বলা আছে, ইজারা দেওয়া ওই ভূমিতে অস্থায়ী দোকান ঘর করা যাবে। স্থায়ী স্থাপনা বা দালান নির্মাণ করা যাবে না। এর ব্যতিক্রম হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইজারা বাতিল বা স্থাপনা অপসারণ করতে পারবে। ইজারাদার শর্ত ভঙ্গ করে যাতে স্থায়ী ভবন নির্মাণ করতে না পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার (জরিপকারী) ও অফিস সহকারী তদারকির দায়িত্বে থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা বলেন, ইজারা নেওয়া ভূমিতে প্রায় ১০৫টি দোকান নির্মিত হয়েছে স্থায়ীভাবে। কোম্পনীগঞ্জ বাজারের দক্ষিণে গোমতী নদীর বেড়িবাধেঁর উপরে বাজারের দুই পাশে ৪৫ শতাংশ জমিতে দোকান তৈরি করা হয়েছে। আগে যেখানে এক থেকে দেড়শ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন তাদেরকে ওই জায়গা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে অনেকে পথে বসেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ী মো.মোস্তফা আরো বলেন, যেই স্থানটি লিজ দেওয়া হয়েছে- সেই স্থানের সম্পত্তি পাউবো ১৯৯০ সালের দিকে আমাদের থেকেই অধিগ্রহণ করেছেন। সেই হিসেবেও লিজ পাওয়ার যোগ্য দাবিদার আমি। কিন্তু এখানেও নিয়ম ভেঙেছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ। ২০০৯ সালের মে মাসে কোম্পানীগঞ্জ বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে আমাকে অস্থায়ী দোকান ঘর স্থাপনের জন্য ৪৫ শতাংশ জমি একসনা লিজ প্রদান করে পাউবো। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকা দিতে পারিনি বলে ওই সময় আমাকে জমি বুঝিয়ে দেয়নি পাউবোর কর্মকর্তারা। দীর্ঘ ১১ বছর চেষ্টা করেও জমি বুঝে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে আমি ২০২০ সালে উচ্চ আদালতের সুপ্রীম কোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দাখিল করি লিজের সম্পত্তি বুঝে পেতে। কিন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তি না হতেই একই স্থানে গত বছরে ডিসেম্বরে ৪৫ শতাংশ জমি নজরুলকে অবৈধভাবে লিজ দেয় পাউবো। নজরুল ইসলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নাম ভাঙ্গিয়ে ইজারা নিলেও শর্ত ভঙ্গ করে প্রায় দেড়’শ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে সেখান খেকে উচ্ছেদ করছেন।
শনিবার দুপুরে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কলটি কেটে দেন। এরপর বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসে নজরুল লিজের শর্ত ভঙ্গ করে সেখানে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। পরে আমরা তাকে স্থায়ী স্থাপনা অপসারণ করতে চিঠি দিয়েছি। এছাড়া ওই এলাকায় মাইকিং করেছি। তবে ইজারাদার আমাদের কাছে দাবি করেছেন- তিনি স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেননি। সবই অস্থায়ী স্থাপনা। আমরা বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। বোর্ড যেই সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে স্থায়ী কোন স্থাপনা করা হলে সেগুলোকে ভেঙে দেওয়া হবে।