জানা যায়, কুমিল্লার চান্দিনা সাহাপাড়া এলাকায় ইসকন এর নিজস্ব কেনা জমিতে মন্দির উদ্বোধন ও ১৬তম বাৎসরিক অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। দিবসটি উদযাপন করতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার সহ উপজেলা প্রশাসনকে লিখিত চিঠি দেয় ইকসন নেতৃবৃন্দ। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসন থেকে র্যালী বের না করা শর্তে মন্দিরের জায়াগায় অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য বলা হয়। সেই মোতাবেক শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইসকন ভক্তরা অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। দুপুর আড়াইটার দিকে জুম্মার নামাজ শেষে কয়েকটি মসজিদের ইমাম ও খতিবের নেতৃত্বে প্রায় দেড় শতাধিক মুসল্লী ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি ও ইসকন বিরোধী নানা শ্লোগান নিয়ে ইসকনের ওই বাৎসরিক অনুষ্ঠান স্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তারা। তখন ৪-৫শ ভক্ত প্রসাদ গ্রহণ করছিল, আবার কয়েকশ ভক্ত প্রসাদ গ্রহণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। এমন পরিস্থিতিতে হৈ হুল্লোড় করে খাবার ফেলে ছুটাছুটি করে স্থান ত্যাগ করে ভক্তরা। মুসল্লীদের এমন ক্ষুব্ধ মিছিলের সামনে পুলিশ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেও মুসল্লীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসকন ভক্তদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর চান্দিনা উপজেলা শাখা সভাপতি দিব্য মিহাবিষ্ণু দাস জানান, আমরা প্রশাসনকে অবহিত করেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। শুক্রবার সকালে চান্দিনা থানা পুলিশ আমাদের অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে র্যালী করতে বাধা দিয়ে বলেন- ‘আপনারা অনুষ্ঠান স্থলেই অনুষ্ঠান করেন, ভিতরে আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দিব, বাহিরে র্যালী করার দরকার নেই।’ প্রশাসনের এমন কথায় আমরা র্যালী বন্ধ রেখে সনাতন ধর্মাবলম্বী অর্ধ্যূষিত এলাকা সাহাপাড়ায় আমাদের মন্দিরের নিজস্ব জায়গাতে অনুষ্ঠান করছিলাম। দুপুরে যখন ভক্তরা প্রসাদ গ্রহণ করবে, ঠিক তখনই মুসল্লীদের বাঁধায় আমরা ভক্তরা ভীত সস্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনীসহ চান্দিনা থানা পুলিশ অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে আমাদেরকে ১০ মিনিটের মধ্যে সব অনুষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। খাবাররত অবস্থায় অন্তত ৪-৫শ ভক্ত খাবার ফেলে চলে যায় এবং প্রসাদ না নিয়ে দুই হাজারেরও বেশি ভক্ত কোন রকমে স্থান ত্যাগ করে।
তিনি আরও বলেন, ইসকন নামহট্ট চান্দিনা শাখা গত ১৫ বছর যাবৎ প্রতি বৎসর এই বাৎসরিক অনুষ্ঠান করে। এতে কখনও অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ১৬তম অনুষ্ঠান করার জন্য দেশের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা আমরা প্রশাসনকে লিখিত অবহিত করেছি। তারপরও এমন ভাবে আমাদের অনুষ্ঠান পন্ড করার পাশাপাশি ৩ হাজার ভক্তদের খাবার নষ্ট করা কতটুকু যৌক্তিক?
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চান্দিনা পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকির সালেহ আরমানী বলেন- ‘ইসকন ভারতীয় জঙ্গি সংগঠন। কুমিল্লার কোথাও তারা কোন প্রোগ্রাম করতে না পেরে চান্দিনায় এসে প্রোগ্রাম করে এবং মানুষ একত্রিত করে। আমরা ছাত্র সংগঠনের সাথীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে জুম্মার নামাজের পর তাদেরকে বাঁধা প্রদান করতে রওয়ানা হই। পরবর্তীতে প্রশাসন আমাদের একটি জায়াগায় দাঁড় করিয়ে প্রশাসনের লোকজনই ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
ভক্তদের খাবাররত অবস্থায় উঠিয়ে দেয়াকে ইসলাম কতটুকু সমর্থন করে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা (ভক্তরা) খাবার খাচ্ছিল কিনা আমরা জানি না। সেটা প্রশাসন বলতে পারবে। আমরা শুধু ইসকন এর প্রোগ্রাম বন্ধ করতে প্রস্তুতি নেই।
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. নাজমূল হুদা জানান, আমরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে গিয়েছে। ইসকনের অনুষ্ঠান সেনা বাহিনী বন্ধ করে দিয়েছে। যা জানার তাদের কাছে জানে নিতে পারেন।