জরায়ুমুখের ক্যান্সার নিরাময় যোগ্য চিকিৎসায় প্রতিরোধ সম্ভব – মাশহুদা খাতুন শেফালী

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের (নউক) একটি বেসরকারি নারী উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন। সমাজের সকল স্থানে নারী-পুরুষের সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমতা আনয়ন তথা নারীর পূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে যুব নারী নেতৃত্ব গঠন, বাল্যবিবাহ রোধ, নারীর নিরাপদ স্বাস্থ্য ও নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে নারী উদ্যোগ কেন্দ্র বিগত ত্রিশ বছর যাবত বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে নারীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃত্যু বিবেচনায় নারীদের স্তন কন্সার প্রধান ও জরায়ুমখের ক্যান্সার দ্বিতীয় অবস্হানে রয়েছে ।
প্রতিবছর জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৮৩০০ নারী এবং মারা যান ৪৯০০ জন, কারণ দেশে সার্বিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও অপ্রতুল। বেসরকারী হাসপাতাল গুলো রোগের প্রকোপ ও প্রশোমনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন বলে এখন কিছু কিছু অত্যাধুনিক পরীক্ষা,ও নিরাময়ের সহজ পথ তৈরী হচ্ছে,যদি ও তা ব্যায়বহুল। এ পরিপ্রেক্ষিতে নারী উদ্যোগ কেন্দ্র নারীর নিরাপদ স্বাস্থ্য সুরক্ষার তাগিদে একটি বিশেষ কর্মসূচী হিসেবে “উইমেন ক্যান্সার কন্ট্রোল প্রোগ্রাম” হাতে নিয়েছে।এর মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্বি ও ক্যাম্পইন কর্মসুচীর পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে ক্যান্সার প্রতিরোধমূলক সেবা সমন্বিত করা হয়েছে। এই কর্মসুচিিট ব্যাপকভাবে ও অতি অল্পসময়ে সারা দেেশ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তৃনমল পর্যায়ে স্হানীয় সরকার প্রতিনিধি,এনজিও যুব সয়গঠনের প্রতিনিধিদের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করছে। কুমিল্লায় ও আমাদের কর্মসুচিটি সম্প্রসারিত করেছি। সামনের দিনগুলোতে স্থানীয় উদ্যোক্তা,যুব সংগঠন,প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখালে আমরা তাদের সহযোগী হয়ে কর্মসম্পাদনে মনোযোগী হবো। জরায়ু মুখের ক্যান্সার বলতে কি বুঝায় এবং এটা কতটা মারাত্মক তা কিশোরী থেকে যুব নারী জনগোষ্টির জন্য জানা একান্ত জরুরী।
জরায়ুর সবচেয়ে নিচের সরু অংশের নাম জরায়ু মুখ। জরায়ুমুখ কান্সার নারীর জরায়ুমুখের একটি মারাত্বক ক্ষতিকারক রোগ। অন্যান্য অঙ্গের মতো জরায়ু মুখের ও ক্যান্সার হতে পারে। নারীরা প্রধানত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (ঐচঠ) নামক একটি ভাইরাস দ্বারা জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
এটি একটি যৌনবাহিত ভাইরাস।পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা নারী আক্রান্ত হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এই ক্যান্সার রোগীর দেহে নানা অস্বস্তিকর ও বিপদজনক উপসর্গ তৈরী করে এবং মৃত্যুর কারন পর্যন্ত হতে পারে। সারা পৃথিবীত নারীদের শরীরে যত ধরনের ক্যান্সার দেখা যায় তারমধ্যে সংখ্যার বিচারে জরায়ু মুখের ক্যান্সার চতুর্থ স্থানে রয়েছে ।বাংলাদেশে এর অবস্থান দ্বিতীয় শীর্ষে । বাংলাদেশে প্রতিবছর ৬ থেকে ৮ হাজার নারী এই রোগে নতুন করে আক্রান্ত হয়।
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হলো,
➤ দুর্গন্ধ যুক্ত সাদা স্রাব,
➤ মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত যাওয়া
➤ দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তপাত
➤ তলপেটে ব্যাথা হওয়া,
➤মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও রক্তপাত.
➤ স্বামী স্ত্রীর মিলনের সময় রক্তপাত হওয়া
এমন লক্ষণগুলো জরায়ু মুখের ক্যান্সার ছাড়া অন্যান্য কারণেও হতে পারে। তাই এই ধরনের লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরী।
জরায়ু কন্সারের ঝুকির মধ্যে কারা আছেন?
➤ অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া বা
➤ যৌন মিলনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া
➤ ঘনঘন সন্তান ধারণ করা
➤ একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে মেলামেশা
➤ দীঘর্দিন জন্মনিয়ন্ত্রন পিল সেবন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ,
➤ ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব( বিশেষ করে মাসিকের সময়টাতে)।
হিউম্যান পেপেিলামা ভাইরাস (এইচপিভি) নামক একটি ঘাতক ভাইরাস দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমনের মাধ্যমে জরায়ু মুখে ক্যান্সার হয়ে থাকে। তাই এইচপিভি টিকা আবিষ্কারের মাধমে জরায়ু মু্খরে কান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হিসেবে এইচপিভি টিকা দেওয়ার জন্য পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণীর ছাত্রী অথবা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েদের একডোজ টিকা দিতে বাধ্যতামুলক প্রচারনা হাতে নিয়েছেন। এই টিকাটি ২০২৩ সালের শেষের দিকে ঢাকা বিভাগে সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে ২৪শে অক্টােবর থেকে বাকী ৭টি বিভাগরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ম হতে ৯ম শ্রেনী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্হিভুত ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী কিশোরীদের ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে বিনামুল্যে একডোজ টিকা প্রদান করা হবে। বিনামুল্যে এইচপিভি টিকার জন্য যে ওয়েবসাইডে নিবন্ধন করতে হবে-িি.িাধীবঢ়র.মড়া.নফ। এই টিকা গ্রহন করার ফলে আমাদের কিশোরী মেয়েরা পরিনত বয়সে জরায়ু মুখের ক্যান্সার ভীতি বা আশংকা থেকে মুক্ত থাকবে।এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত,নিরাপদ ও কার্যকর। জরায়ুমুখ কান্সার প্রতিরোধে টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট। এই গ্রহনরে ক্ষেত্রে কিছু গুজব শুনা যায় যে,এই টিকা গ্রহন করলে মেয়রো বন্ধা হয়ে যাবে যা সম্পুর্ন ভিত্তিহীন। এই গুজবে কান দেয়া যাবেনা।
প্রাপ্ত তথ্য মোতাবক দেশে বর্তমানে ৫কোটির ও বেশী নারী জরায়ুমুখের কন্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিতে রয়েছে। অর্থাৎ যৌন সক্রিয় প্রতিটি নারীই এইি ঝুকিতে রয়েছে। কাজেই, সর্স্তবররে ও শ্রনেীর কিশেরী ও যুব নারী বেিশষ করে ১০ থেকে ৪৫ বছরের নারীরা সচেতন হলে জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। কেননা, এটি একমাত্র ক্যান্সার যা প্রতিরোধযোগ্য।
এছাড়াও ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরী ও প্রতিবছর নিয়মিতভাবে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে জরায়ুমুখে এই ভাইরাসের উপস্থিতি চিহ্নিত করা গেলে এই ভাইরাসকে নির্মূল করার মাধ্যমে জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব ।
কিন্তু সময়মত পরীক্ষা না করালে কিংবা ক্যান্সারের বিস্তার ঘটলে নিরাময় দুরুহ হয়ে পড়ে।
জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে করনীয়ঃ
যৌন মিলনে অভ্যস্ত একুশ বছরের উপরে যেকোনো নারী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর তাদের নিকটস্থ সরকারি বেসরকারি কিংবা এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বহিঃবিভাগে নিয়মিত ভায়া,প্যাপস,এইচপিভি টেস্টে মাধ্যমে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের উপস্থিতি কিংবা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভাইরাসের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারেন।
যদি উপস্থিতি ধরা পড়ে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মত সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তারা ক্যান্সার মুক্ত থাকতে পারেন কিংবা পূর্ণ আরোগ্য লাভ করতে পারেন। তাই বলবো, জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য ও পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে যদি এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় তাহলে চিকিৎসায় এটি নিরাময় যোগ্য একটি ব্যাধি। বিনা খরচে কিংবা নাম মাত্র খরচে উপজেলা,জেলা ও বিভাগীয় সকল সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালের গাইনীকোলজিস্ট বা মিডওয়াইফ নার্সগননে মাধ্যমে ভায়া টেেস্টর মাধ্যমে নিজেকে জরায়ু মুখের ক্যান্সার থেকে মুক্ত রাখুন, সচেতন হন এবং অন্যকেও সচেতন করুন।।
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, ক্যান্সার কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র(নউক) ও কেন্দ্রিয় সদস্য,বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম।
অনুলিখনঃ রাশেদা আখতার।