এবার যা পাবেন গতবার থেকে

অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বাংলাদেশে নতুন এক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে ওমিক্রনের নতুন উপধরন “বিএফ-৭”। চারজন চৈনিক নাগরিককে এটা সন্দেহ করে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। ২৬শে ডিসেম্বর ’২২ শাহজাহালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অ্যান্টিজেন টেষ্টে পজিটিভ হন তারা। মহাখালীর কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে তাদেরকে রাখ হয়েছে। জনমনে উৎকন্ঠার তৈরি হয়েছে। মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব থাকলেও সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের দাবী, সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের আছে। দেশে এখন পর্যন্ত ২০ লক্ষ ৩৭ হাজার ১০২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ শে ডিসেম্বর’২২এ ২৪ ঘন্টায় ৮৩ জনসহ সুস্থ হয়েছেন ১৯ লক্ষ ৮৭ হাজার ৬৮৬ জন করোনায়। করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৩৯ জন। দেশের প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ই মার্চ। দেশে গত ২৯.১২.২০২২ সকাল ৮টা থেকে ৩০.১২.২০২২ সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এসময় করোনায় আক্রান্ত কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি।
বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার ২১ ডিসেম্বর রোগতাত্ত্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১২ই ডিসেম্বর’২২ থেকে ১৮ই ডিসেম্বর’২২ পর্যন্ত এক সপ্তাহে চীনে ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হন। এ সময় মারা যান ৩৩৭ জন। এর পূর্বের সপ্তাহেও দেশটিতে প্রায়ই একই সংখ্যক লোক আক্রান্ত হন এবং মারা যান। এই সময় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। কয়েকটি দেশে বেশি করে দেখা দিলেও সার্বিকভাবে বৈশি^ক সংক্রমন পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে বলে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছেন। আইইডিসিআর এর পরামর্শক ডা: মুশতাক হুসেন বলেন, করোনা ভাইরাসের একটি ধরন হচ্ছে ওমিক্রন। আর ওমিক্রনের একটি উপধরন হচেছে বিএ-৫। বিএ ৫ এর উপধরন হচ্ছে বিএফ (বিএ ৫.২.১.৭)। চীন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে এ নতুন উপধরণ শনাক্ত হয়েছে। বি.এফ অন্য যে কোন উপধরনের চেয়ে দ্রুত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। বলা হচ্ছে অন্য যে কোন উপধরনের চেয়ে এটি চারগুন সংক্রামক। ফলে কম সময়ে বেশি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনে সংক্রমন বেড়ে যাওয়ার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। তিনি দেশবাসীকে মাস্ক পরতে অনুরোধ করেছেন পাশাপাশি ভাইরাসটির জীন বিশ্লেষন করার কথাও বলেছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমন বাড়লে বা নতুন ধরন শনাক্ত হলে বাংলাদেশের উদ্বেগ বেড়ে যায় অনেক। যদিও বাংলাদেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তবে মনে রাখতে হবে চীনের উহানের গুটিকয়েক মানুষের কাছ থেকে সারা বিশে^ করোনা ছড়িয়ে পড়েছিল। কোভিড হাসপাতালগুলি প্রস্তুত রাখা উচিত। সম্প্রতি করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সভা হয়েছে যা সকল প্রস্তুতি নিশ্চিত করবে বলে সর্বসাধারনের বিশ^াস। এদিকে ২০ শে ডিসেম্বর’২২ থেকে নিয়মিত টিকাদান কেন্দ্রগুলিতে চতুর্থ ডোজ টিকা দেয়া শুরু হয়েছে ২২ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত গোটা দেশে চতুর্থ ডোজ টিকা নিয়েছেন ৪৭ হাজার ১০৬ জন। তবে টীকার মেয়াদ নিয়ে মানুষের মনে কিছু সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। পাঠানো সাধারন টিকায় গায়ে লেখা রয়েছে ৩০ নভেম্বর’২২ টিকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছেন এই টিকা ২৮ শে ফেব্রুয়ারি’২৩ পর্যন্ত নেয়া যাবে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক্রমে অধিদপ্তর ফাইজারের টিকার মেয়াদ বাড়িয়েছেন।
আক্রান্তের স্বল্পতা দেখে স্বস্থি পাওয়ার কোন কারণ নাই। করোনা এমন একটি রোগ যা দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। টিকা দেয়া নিয়ে আমাদের অনেক সাফল্য থাকা স্বত্ত্বেও কিছুটা পিছিয়ে আছি বলে মনে হয়। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। ২য় ও ৩য় ডোজ পেয়েছেন যথাক্রমে ৭৪ ও ৩৮ শতাংশ। ইহাতে পরিলক্ষিত হয় অনেক মানুষই টিকার বাইরে রয়েছেন। টিকা দেয়ার ব্যাপারে প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে অনাগ্রহ থাকলেও পরে কিন্তু তা বেড়েছে। ব্যবস্থাপনাও আগের চেয়ে অনেক উন্নত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে একবছর পর্যন্ত ডোজের কার্যকারিতা বলবৎ থাকে। সেক্ষেত্রে যাঁরা তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের সকলেই চতুর্থ ডোজ নিতে পারেন।
করোনা চলে গেছে এটা যাঁরা ভেবেছিলেন, তাঁদের কথা ভুল প্রমান করেছে চীন জাপানসহ কয়েকটি দেশে নতুন করে ব্যাপক সংক্রমন। করোনার নতুন সংক্রমন বাড়ুক না বাড়ুক আমাদের সদা সতর্ক থাকা একান্ত দরকার। যদি কোন কারনে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায় বিপদ বেড়ে যেতে পারে। নতুন ধরনের কোভিড-১৯ (বি.এফ ৭) সংক্রমন প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রণে সচেতন হতে হবে এবং নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে:-
 মাস্ক পড়ুন, নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখুন
 কোভিড-১৯ সামলাতে ঝুঁকিপূর্ন জনগন, জটিল রোগে আক্রান্ত এবং ৬০ বৎসরের উর্ধের ব্যক্তিসহ সকল প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য কোভিড-১৯ এর সকল ডোজ (১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ) টিকা গ্রহণ করতে হবে।
 হ্যান্ড স্যানিটাইজ ও হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাট-বাজার, মসজিদ, মন্দিরসহ অন্যান্য উপসনালয়, বিয়ে, জন্মদিনসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশসহ সকল জনসমাবেশ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
 বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রীনিং করে পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হলে হাসপাতালে আইসোলেশন করতে হবে।
 বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিনের মধ্যে করোনার উপসর্গ (জ¦র, কাশি, শরীর ব্যাথা ইত্যাদি) দেখা দিলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।
 কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে পরীক্ষা করাতে হবে এবং আইসোলেশনে থাকতে হবে।

সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ