তিন বছরে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ইউনুছ

“কুমিল্লার সবচেয়ে বড় কুল বাগান মুরাদনগর তিন বিক্রিতে অর্ধ কোটি পাশাপাশি করছেন গরুর খামার নতুন করে ইজারা নিছেন ২০০ শতক পাগল বলেও দমাতে পারেনি তাকে”
এন, এ মুরাদ ।।
প্রকাশ: ১ বছর আগে

প্রায় দেড় দশক প্রবাসে কাটিয়েছেন ইউনুছ ভূঁইয়া। কয়েক বছর আগে একেবারে দেশে ফিরে আসেন। একদিন তিনি ইউটিউব দেখে বড়ই ও লেবু চাষে উদ্বুদ্ধ হন। কাজিয়াতল গ্রামে নিজের ৩শ’ শতক জমির সাথে আরো ১৫শ’ শতক ইজারা নিয়ে শুরু করেন চাষ। যা দেখে নানা টিপ্পনী, ঠাট্টা ও কটুকথা বলতে থাকেন এলাকার মানুষ। এসবে দমে যাননি ইউনুছ। ৩ বছরের মধ্যেই বড়ই চাষে সাফল্য এনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিক্রি করছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বড়ই।
ইউনুছ ভূঁইয়া কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে তিনি ১৪ বছর সৌদি আরবে কাটিয়েছেন।
২০২০ সালে করোনা শুরুর দিকে দেশে আসেন ইউনুছ । বিদেশে একটি কৃষি খামারের তত্ত্বাবধানে কাজ কাজ করতেন তিনি । তাই কৃষির প্রতি ছিল দুর্বলতা। উদ্যেক্তা হয়ে কাজ করার মানসিকতায় ইউটিউব দেখে বড়ই ও লেবু চাষে উদ্বুদ্ধ হন। মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে নাটোর গিয়ে কুল বাগান পরিদর্শন করেন। পরে সেখান থেকেই বল সুন্দরী জাতের চারা কেনেন। ওই চারা ১০ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া ৬০ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন।

ইউনুছ ভূঁইয়া “আমাদের কুমিল্লাকে” বলেন, মাছের প্রজেক্টে ফল বাগান করার ব্যাপারে মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করতে যান। স্থানীয়রা বলেছিলেন, এখানে কোন ফল-ফলাদি হবে না। এটি একটি পুকুর বৃষ্টি হলেই পানিতে সব ডুবে যাবে। মানুষজন নানা টিপ্পনী, ঠাট্টা, কটুকথা বলেছেন। একসময় আমাকে পাগলও বলেছেন। কিন্তু তাতে তিনি নিরাশ হননি।
লোকজনের কথায় কান না দিয়ে বাগান করতে গিয়ে একটি কৌশল অবলম্বন করেন। বাগানের চার দিক দিয়ে খাল খনন করে তাতে পানি নামার ব্যবস্থা করেন। ওই পানি সরানোর জন্য সেলু মেশিন লাগান। তারপর দৃঢ় মনোবল নিয়ে বড়ই ও লেবু চাষে মন দেন। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বাগানে আসেন এবং তখন পরার্মশ দিয়ে বাগানটি দেখা শোনা করছেন। বিএডিসির একটি প্রকল্প ওই বাগানে দেওয়া হয়। এখন আর তার মেশিন লাগেনা । কৃষকের জন্য বিএডিসির পানি ইউনুছ ভূইয়ার বাগানের চার পাশের খননকৃত খাল থেকে তুলা হয়।
এখন উপজেলা ও জেলার অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আমার বাগান দেখতে আসেন। যাওয়ার সময় বড়ই কিনে নিয়ে যান।’
একেকটি গাছ থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ থেকে ৫০ কেজি বড়ই বিক্রি করেছেন ইউনুছ
ইউনুছ ভূঁইয়া আরো বলেন, সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও শনিবার লোকের ভীড় থাকে। পাইকারী বিক্রি করি ৮৫টাকা কেজি খুচরা ১০০টাকা। এখন পর্যন্ত পুরো বাগান করতে আমার এক কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। তিন বছরে বিক্রি হবে প্রায় ষাট লাখ। এই প্রজেক্টে আরো ২ একর জমি নিয়েছি। পুঁজি উঠে নাই। আশা করছি আগামী বছরে আমার পুঁজি উঠে যাবে।
বাগানে প্রতিনিয়ত ১০-১২জন শ্রমিক কাজ করেন। সাথী ফসল থেকে যেই আয় হয় ওটা দিয়ে তাদের বেতন চলে যায়। বাগানের চারদিকে ৮শ’কলা গাছ লাগানো আছে। এছাড়াও বাগানের মধ্যে রয়েছে লেবু, মাল্টা ও আম গাছ।

মিশ্র বাগানের পাশাপাশি ইউনুছ ভূঁইয়া ৩২টি গরুর নিয়ে একটি খামারের কাজ শেষ করেছেন। নিজ বাড়িতেও রয়েছে তার একটি গরুর খামার। খামারের গোবর বাগানের এনে চাষের কাজে ব্যবহার করেন।
উপজেলার বিভিন্ন জয়গা থেকে আসা দর্শনাথীরা বলেন, বাজারের বড়ই থেকে ইউনুছ ভূঁইয়ার বাগানের বড়ই আকারে বড় স্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। দামও ঠিক আছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, আমি ও উপসহকারী কর্মকর্তা রীতিমত এই কৃষি প্রজেক্টটি দেখাশোনা করছি। ইউনুছ ভূঁইয়া একজন উদ্যেগী ও পরিশ্রমী কৃষক। তার বাগানের বড়ই ও লেবুর চমৎকার ফলন রয়েছে। পাশাপাশি তিনি কলাও বিক্রি করছেন।