দিবস উদযাপনের টাকা গেলো কোথায়?

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

মহিউদ্দিন মাহি, কুবি ।। বাজেটের অভাব দেখিয়ে ‘জাঁকজমকপূর্ণভাবে’ ১৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদাযাপন করতে পারছে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দিবসটি উদযাপন করতে মূল্য সংযোজন করসহ ৮ লক্ষ ১ হাজার টাকার একটি বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২ উদযাপন কমিটি। তবে টাকার অভাব দেখিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে শুধুমাত্র র‌্যালি, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো ও কেক কাটা এবং সংক্ষিপ্ত আলোচনার জন্য ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮৬৪ টাকার অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ প্রতিটি অর্থবছরের শুরুতেই বিভিন্ন দিবস উদযাপনের জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করে থাকে কর্তৃপক্ষ। সেই বরাদ্দের টাকা দিয়েই বছরব্যাপী বিভিন্ন দিবস পালন করে তারা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ওই খাতে শুধুমাত্র চার হাজার টাকা আছে বলে দাবি করছে প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বরাদ্দের টাকা গেলো কোথায়?

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ’অন্যান্য দিবস উদযাপন’ খাতে ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল কর্তৃপক্ষ। তবে এ খাত থেকেই শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতিসহ অন্যান্য সংগঠনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৩ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা ব্যয় করেছে তারা। মূল খাত তথা বিভিন্ন দিবস উদযাপনে ব্যয় করা হয়েছে ৮ লক্ষ ৮১ হাজার ৩৮৫ টাকা। আবার এ টাকার মধ্যে শুধুমাত্র ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বর এবং ২৬ মার্চে যথাক্রমে ব্যয় করা হয়েছে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার ৪২২ এবং ১ লক্ষ ৮১ হাজার ৬৩১ টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত উদযাপন করা ১০ টি দিবসের তিনটিতেই ব্যয় হয়েছে দিবস বাবদ মোট ব্যয়ের ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ টাকা। আর মূল বরাদ্দের ২৬ শতাংশেরও বেশি টাকা ব্যয় করা হয়েছে শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের অন্যান্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে। এসব ব্যয়ের পর দিবস উদযাপন খাতে বরাদ্দ আছে শুধুমাত্র ৫ হাজার ৬১৬ টাকা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করতে ‘বিবিধ খাত’ থেকে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮৬৪ টাকার অনুমোদন দিতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।

দিবস উযাপনের বরাদ্দের টাকা অন্যান্য খাতে ব্যয় করে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনে টাকা বরাদ্দ দিতে না পারায় ওবায়দুল্লাহ খান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশাসন দিবস উদযাপনের টাকা বরাদ্দকৃত খাতের বাইরে গিয়ে অন্যান্য জায়গায় ব্যয় করে এখন বিশ্ববিদ্যালয় দিবসই উদযাপন করতে পারছে না। এ দায় এড়াতে পারে না।’

আবার শুধুমাত্র ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার ৪২২ তথা দিবস উদযাপনে মোট ব্যয়ের ৫৫ দশমিক ৬৪ টাকাই খরচ করা হয়েছে দু’দিনে। নাম প্রকাশে অনাগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, তৎকালীন উপাচার্য তাঁর মেয়াদের শেষদিকে দিবস উদযাপনের জন্য বড় অংক বরাদ্দ না দিলে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না। এ খাত থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া যেত।

এদিকে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বাজেট প্রস্তাব করেছি। প্রশাসন আমাদেরকে বাজেট না দিয়ে স্পন্সর ব্যবস্থা করতে বলেছে। কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বাজেট না দিলেতো আমাদের কিছু করার নেই।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড এ. এফ. এম. আবদুল মঈন বলেন, দিবসটি উদযাপনের জন্য ফান্ডে শুধুমাত্র চার হাজার টাকা ছিল। তবু আমরা ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকার অনুমোদন দিয়েছি। কমিটি যে বাজেট নিয়ে এসেছে, আমরা তার পুরোটাই অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি। তবে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কমিটি স্পন্সর জোগাড় করতে না পারায় অনুষ্ঠানটি সবার উপস্থিতিতেই তারা বাদ দিয়েছে।

শুধুমাত্র ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরে দিবস উদযাপনে মোট ব্যয়ের ৫৫ দশমিক ৬৪ টাকা খরচ করে ফেলার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে এ বিষয়ে তৎকালীন উপাচার্যকে প্রশ্ন করতে বলেন তিনি।

তবে দিবস উদযাপনের বরাদ্দের টাকা অন্যান্য  খাতে ব্যয় করার বিষয়টি এড়িয়ে যান অধ্যাপক আবদুল মঈন।