বিএনপিকে নিয়ে এনসিপি মুখপাত্র হাসনাত আব্দুল্লাহর কুরুচিপূর্ণ ও অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে কুমিল্লার দেবীদ্বারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় দেবীদ্বার উপজেলার শহীদ মিনারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়, যা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রেজবিউল আহসান মুন্সী।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপির প্রস্তাবিত সিনিয়র সহ-সভাপতি, প্রফেসর সুলতান কবির। দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপির প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক, আবুল কালাম আজাদ। কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি সুফিয়া বেগম। দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপির প্রস্তাবিত সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম। দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপির প্রস্তাবিত সাংগঠনিক সম্পাদক, মো: এনামুল হক। দেবিদ্বার উপজেলা পৌরসভার প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক মো: হারুন মাষ্টার। দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সাহাজ উদ্দিন সাজু। দেবিদ্বার উপজেলা যুবদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, মো: রবিউল আউয়াল। দেবিদ্বার উপজেলা যুবদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, সালাউদ্দিন রুহুলসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
বক্তারা সাত দিনের মধ্যে হাসনাত আব্দুল্লাহর বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় তাকে দেবীদ্বারে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এনসিপির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর উপর সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়ে, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, ব্যারিস্টার রেজবিউল আহসান মুন্সি বলেন, আজকের ঘোষণা, এই দেবিদ্বারের মানুষের ঘোষনা, এটি একটি সতর্কতা। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয় হাসনাত আব্দুল্লাহ তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে অনেক কিছুই করতে পারেন। জুলাই আন্দোলনে এবং আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধে আপনার ভুমিকা নি:সন্দেহে অতুলনীয়। আপনার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে বলছি যে, এই বক্তব্যটি আপনার রাজনৈতিক পরিপক্ষতার প্রদর্শন নয়। আপনার বক্তব্যে আপনার অস্ত নই আমরা আহত। এটি কোন ব্যাক্তিগত মতামত বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই বক্তব্য আমাদের জন্য একটা গভীর অপমান। শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শের অপমান। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীনতার অপমান। দেশনায়ক তারেক রহমানের অপমান। বিএনপির লক্ষ লক্ষ নির্যাতিত কর্মীর আদর্শের অপমান।
তিনি আরো বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ এটা শুধু বলেন ই নি, তিনি দাবি করেন কুমিল্লার অধিকাংশ উপজেলা বিএনপি নাকি আওয়ামিলীগের টাকায় চলে, এটা শুধু ব্যাক্তিগত মন্তব্য নয়। এটা একটি আন্দোলনের মানহানির সমান। পক্ষ বিপক্ষের উর্ধ্বে গিয়ে দেবিদ্বার সবসময় ছিল ধানের শীষের ঘাটি। আপনি যাদের নিয়ে এই বক্তব্য করলেন এখানে রয়েছে বিএনপির অনেক বড় বড় ত্যাগী নেতাকর্মী। এটা কোন তামাশা নয়। আপনি জানেন কুমিল্লাতে বিএনপির সমৃদ্ধি কি। কুমিল্লাতে বিএনপি ছাড়া কেউ দুটো আসন পাওয়ার যোগ্যতা নেই।
এসময়ে রিজভিউল আহসান মুন্সি বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব সেলিম ভুইয়ার বক্তব্যের সাথে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে বলেন, জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহ, আপনাকে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেয়া হলো। এর মধ্যে আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে আপনাকে দেবিদ্বার থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে। ভবিষ্যতে বিএনপি নিয়ে কোন অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি সুফিয়া বেগম বলেন এনসিপির কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের মুখপাত্র জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহ বিএনপিকে নিয়ে একটি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। আমরা তার তীব্র নিন্দা জানানোর জন্য দেবিদ্বারে এসেছি। তারেক জিয়া এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে আমরা এখানে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। আমরা তাকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলতে চাই, ভাতিজা- কতধানে কত চাল তুমি দেখ নাই। তুমি শুধু হাসিনাকে হটাইছো, কিন্ত এই ১৫ বছরে বিএনপি সকল গুম, খুন অত্যাচার, মামলা, ঘরে ঘুমাতে পারে নাই। এই অত্যাচার সহ্য করে, হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৬ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। সেই আন্দোলনের প্রতিফলন হিসেবে এই দেশের সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ছাত্রীদের যে মনোভাব, ধিক্কার সেগুলোর প্রতিফলন ঘটেছে এই ৫ ই আগস্টের মাধ্যমে। এই দেবিদ্বারে বিএনপির নেতাকর্মী খুন, আহত হয়েছে। তোমার কয়টা ছাত্র নিহত হয়েছে। তুমি প্রথমে দেশনায়ক তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করেছো আমরা এভাবে মাঠে নামি নাই। তুমি আমাদের সন্তান, তুমি যদি তোমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাও তাহলে সারাদেশের বিএনপির নেতাকর্মী তোমার উপর ঝাপিয়ে পড়বে।