জৌলুস হারাচ্ছে কুমিল্লার নমশূদ্র পল্লীর বাঁশ-বেত শিল্প। ঐতিহ্যবাহী নমশূদ্র পল্লী কুটির শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বংশগত কারণে নমশূদ্র্ররা এ পেশা ধরে রেখেছেন। আয় রোজগার যেমনই হোক, কাজটা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে চড়া সুদ্রের ঋণ এবং ঠিকমতো ঋণ না পাওয়ায় সংকটের মুখে পড়েছেন কুটির শিল্পীরা। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারী উদ্যোগ চান পল্লীর মানুষ।
কুমিল্লার গোমতী নদীর পালপাড়া ব্রিজ। এ ব্রিজ থেকে ৫০ গজ পূর্বে গোমতীর বেড়িবাঁধ ঘেঁষা নমশূদ্র পল্লী। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামে অবস্থিত এ পল্লীতে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতি। বংশ পরম্পরায় বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে চলে এখানকার বাসিন্দাদের সংসার। তাদের এসব পণ্য বিক্রি হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি, হোমনা, নগরীর চকবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর বাজারে। সরাসরি পল্লীতে এসেও ব্যাপারিরা পণ্য সংগ্রহ করেন।
জানা যায়, এ পল্লীর অন্তত এক হাজার মানুষ সম্পৃক্ত আছেন এ পেশায়। এর মধ্যে ছয় শতাধিক নারী। প্রতিমাসে খাবার খরচ বাদে একজন কুটির শিল্পী যা আয় করেন তা থেকে সন্তানদের লেখাপড়া, ঋণ পরিশোধ ও আনুষাঙ্গিক খরচ মেটান। মানভেদ্রে ১২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ি অঞ্চল থেকে তল্লা, মুলি ও বাঁশ সংগ্রহ করেন কুটির শিল্পীরা। সেই বাঁশ প্রথমে পানিতে ভেজান, তার পর শুকান। শুকনো বাঁশ আবার ভেজানোর পর পুনরায় শুকিয়ে শুরু হয় বেত তোলা। এ বেত থেকেই বাঁশেরকুলা, খাঁচা, ওরা, ঝুঁড়ি ও ডালা তৈরি হয়। মাছ ধরার ফাঁদও তৈরি হয় বর্ষা ঋতুতে। গড়ে ১২০-১৫০ টাকা দামে বিক্রি হয় এসব পণ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কাঁচামালের দাম ও পরিবহন খরচের কারণে এ শিল্পীরা সংকটে আছেন। এ পেশায় জড়িতরা বলেন, দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই কারিগররা। বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় কুটির শিল্পের চাহিদা আর তেমন নেই। তাছাড়াও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। অনেকেই ভালো পুঁজি খাটাতে না পারায় অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছেন বিদেশে।
এ পল্লীর সুধন চন্দ্র্র দাস, কালী দাস ও নিতাই চন্দ্র দাস বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আর সংসার চালানো যাচ্ছে না। বাঁশ-বেত ও অন্য সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলেও আমাদের তৈরীর পণ্যের দাম আগের তুলনায় বেশী বাড়েনি। তাই এখন আগের মতো লাভ হয় না। বাধ্য হয়ে এ পেশার পাশাপাশি অন্য কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। তারা বলেন, যেখানে দুবেলা ভাত খাওয়ার টাকাই জোগার করতে কষ্ট হচ্ছে সেখানে ছেলেদের মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ দিব কেমনে ? এ কারণে এ পল্লীর অনেক নারী এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও পুরুষ কুটির শিল্পীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। তারা বলেন, এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারী-বেসরকারি ঋন সহায়তা প্রয়োজন। বিভিন্ন এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ক্ষুদ্র ঋন দেয়া হলেও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে জমি না থাকায় ঋন সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও তারা অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুমিল্লার উপমহাব্যবস্থাপক মো. মুনতাসীর মামুন দৈনিক আমাদের কুমিল্লাকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ পল্লী পরিদর্শন করে এ শিল্পের সাথে জড়িতদের নানা সমস্যার কথা অবগত হয়েছি। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তাদের নিবন্ধনের মাধ্যেমে ঋণ সহায়তা দিবে বিসিক। এছাড়াও তাদের গ্রুপ করে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
Bengali
English
