পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কুমিল্লা কার্যালয়ে ভূক্তভোগী গ্রাহকদের হাহাকার

বীমার টাকা ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের কুমিল্লা শাখার ২৭ হাজার গ্রাহকের বিড়ম্বনার শেষ নেই। ঢাকা-কুমিল্লা শাখা অফিস ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত গ্রাহকরা। অভিযোগ রয়েছে মেয়াদ শেষ হলেও গ্রাহকরা পাচ্ছে না তাদের বীমা দাবীর টাকা।
এমনই একজন ভুক্তভোগী গ্রাহক আলমগীর হোসেন। কুয়েত প্রবাসী। জীবনের অনেকটা সময় কাটাচ্ছে প্রবাসে। লাকসাম উপজেলার গোপালপুর। একটু ভালো থাকার আশায় ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের জন্য একটি বীমা করেন পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে। তিনি বীমার সকল কিস্তি পরিশোধ করেছেন। তার দাবি অনুসারে বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন পদ্মা ইসলামী লাইফের কাছে তার পাওনা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। তিনি বীমার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য সকল কাগজপত্রসহ কোম্পানিতে আবেদন করেন।

এরপর কেটে যাচ্ছে মাসের পর মাস। কিন্তু এখনো বীমার টাকা পাননি আলমগীর হোসেন। কিছুদিন আগে ঢাকা অফিসে ঘুরে-ঘুরে কোম্পানিটির কর্মকর্তাদের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও কাজ হয়নি। ওনার বাড়ির নিকটবর্তী লাকসাম বাজারের শাখা অফিসটিও এখন উধাও।

শুধু আলমগীর হোসেন ছাড়াও এমন আরো অনেক বীমা গ্রাহক রয়েছেন যারা পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুইরেন্সের ভোগান্তির শিকার।

জানা গেছে, এসব গ্রাহকদের মেয়াদ উত্তীর্ণ বীমা দাবি, পেইড আপ দাবি, সমর্পনসহ মৃত্যুদাবির টাকাও পরিশোধ করছে না পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

কুমিল্লা জেলা শাখা থেকে ২০০৫ সালে একটি শিক্ষা বীমার পলিসি করেছিলেন সাজেদা বেগম।তিনি ১ বছর অন্তর একুশ হাজার ৭২০ টাকা করে টানা ১২ বছরে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রিমিয়াম জমা দিয়েছেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পলিসির মেয়াদ শেষ হলে দেলোয়ার পদ্মা ইসলামী ইনস্যুরেন্স কুমিল্লা কার্যালয়ে যান। কোম্পানিটির কুমিল্লা শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট গিয়াস উদ্দিন প্রিমিয়ামের রসিদের সব কাগজ ও দলিলপত্র নিয়ে নেয়। বীমার পাওনা টাকা কবে মিলতে পেতে পারে এ বিষয়ে কোম্পানি থেকে গিয়াস উদ্দিনকে সঠিক কোনো তথ্য দেয়নি।
সাজেদা বেগম বলেন, ফ্যামেলি প্লানিং এ চাকরীরত অবস্থায় কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে প্রিমিয়াম জমা দিয়েছি। এত দিন টাকা দেওয়ার পর আমার টাকা দিচ্ছে না। তাহলে এত দিন টাকা কেন দিলাম, কেউ আমার দায়িত্ব নিচ্ছে না।

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে এই কোম্পানির কাছে গ্রাহকের প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকা দেনা আছে। কোম্পানীর জমিজমা, এফডিআর আছে। আগের পর্ষদের ঝামেলার জন্য বর্তমান কমিটি ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর ভোগান্তির শিকার সিরাজুল ইসলাম লিটন। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ৮ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বীমা দাবির ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পাচ্ছেন না। তিনি জানান, বীমা কোম্পানিটি দেবো দেবো করছে, কিন্তু দিচ্ছে না। তার এক ধরনের চিটারি করছে। আমাদের টাকাই আমাদের দিচ্ছে না। নির্দিষ্ট কোন তারিখও উল্লেখ করছে না। শুধু ঘুরাচ্ছে।

আরেক বীমা গ্রাহক তাহমিনা জানিয়েছেন, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের কর্মকর্তারা বলছেন সিরিয়াল আসলে টাকা পাবেন। তবে এ জন্য সময় লাগবে অনেক। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করেও তিনি কোন সমাধান পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, গ্রাহকরা খুবই অসহায়। টাকা নেয়ার সময় কোম্পানির লোকজন ঘুর ঘুর করে। আর মেয়াদ শেষ হলে তাদের পাওয়া যায় না। টাকা দেয়ার নামে তালবাহানা করে।

সাহিদা নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, আমি ২০০৮ সালে বীমা করিয়েছি। আমার বীমার মেয়াদ শেষ হলেও কোম্পানি টাকা দিচ্ছে না। আমি এখন মানসিক অশান্তির মধ্যে আছি।

কুমিল্লা শাখার সিনিয়র অফিসার জুয়েল জানান, এসব বিষয়ে সকলের সম্বলিত রিপোর্ট ঢাকায় পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত চাওয়া হচ্ছে।

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের এমডি নূর মোহাম্মদ জানান, করোনার সময়ে যে ক্রাইসিস ছিলো সেটি এখনও কেটে উঠা সম্ভব হয়নি। শুধু পদ্মা নয় সকল ইন্সুরেন্স কোম্পানীদেরও একই অবস্থা। তবে এটা কনফার্ম কারও টাকা কোম্পানি আত্মসাৎ করবে না। আশা করি আগামী ১ বছর পর সকলে তাদের টাকা বুঝে পাবে। তার জন্য একটু সময় প্রয়োজন।