বখাটের ছুরিকাঘাতে তরুণের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

নবীনগর প্রতিনিধি ॥

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের এক তরুণ ‘রাফি’সদ্য এইচ এস সি পাস করে একটি সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখছিলেন। পরিবারের একমাত্র ছেলেটিকে নিয়ে বাবা মায়ের ছিল আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। চাকুরি করে অভাবের সংসারের হাল ধরবে। বাবা মা’র কষ্ট লাঘব করে তাদের নিয়ে নিজের একটি ছোট্ট সুখের সংসার গড়ে তুলবে। তার সেই সুখের স্বপ্ন এক বখাটের ছুরির আঘাতে ধুলিসাৎ হয়ে গেল।

মঙ্গলবার ছিল সেই স্বপ্নের ‘পুলিশ কনস্টেবল পদে’ রিটেন পরীক্ষার দেওয়ার কথা ছিল রাফি’র। কিন্তু তার আগের রাত সোমবার বখাটের ছুরির আঘাতে মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ল রাফি। উপজেলার লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের আহাম্মদপুর গ্রামে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই বখাটে যুবকের ছুরির আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। ঘাতক সেই খুনি আহম্মদপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে প্রদীপ হাসান(২০)। এই ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে নবীনগর থানার পুলিশ উপজেলার লাপাং গ্রামে অভিযান চালিয়ে ঘাতক প্রদীপ হাসানকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় আহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে নবীনগর সদর সরকারি হাসপাতালে আনা হলে কতব্যবরত ডাক্তার সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহম্মদপুর গ্রামের একজন ক্ষুদে মুদি ব্যবাসায়ী নিয়ামুল ভুইয়ার ছেলে রাফি ভূঁইয়া(১৭) ২০২১ সালে স্থানীয় ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেছেন । এক ভাই এক বোনের পরিবারে রাফি ভূঁইয়া পরিবারের বড় ছেলে। রাফি ভূইয়া’র মায়ের স্বপ্ন ছিল একদিন সে অনেক বড় পুলিশ অফিসার হবে।

প্রত্যদর্শী সূত্রে জানায়, বখাটে প্রদীপ বেশ কিছু দিন ধরে নিয়মিত কোমরে ছুরি নিয়ে ঘুরতেন এবং স্কুল কলেজের মেয়েদের প্রায়ই উত্যক্ত করতো। এই নিয়ে কারো সাথে তর্ক বিতর্ক হলেই মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। এরই মধ্যে সোমবার রাতে সেই রাফি ভুইয়ার উপর ছুরি চালায়। রাফি সোমাবার সন্ধ্যায় চাকুরীর ইন্টারভিউ দেওয়ার লক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পথিমধ্যে এলাকার কিছু ছেলে মেয়েদের উত্যক্ত করার বিষয়ে প্রদীপকে সর্তক করছিলো। অতর্কিতে ছুরিঘাকাত করে সে পালিয়ে যায়।

এই ঘটনায় এলাকায় চলছে শোকের মাতম। বাবা মা’র আহাজারিতে আকাশ যেন ভারি হয়ে উঠছে। নিহত রাফির মা পাগলের মত বিলাপ করতে থাকেন,‘আমার ছেলেকে হত্যা করে আমার পুরো স্বপ্ন নষ্ট করে দিল ওই ঘাতকের দল। আমার একমাত্র ছেলে রাফি অনেক কষ্ট করে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে ছিলাম। আমার মতো যেন আর কোন মায়ের বুক খালি না হয় আমার ছেলের মৃত্যুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই,শাস্তি চাই।

প্রত্যক্ষদর্শী বিদ্যুৎ চৌধুরী বলেন, প্রদীপ এলকায় মেয়েদের উক্তপ্ত করা সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় আমারা কয়েকজন তাকে মেয়েদের উত্তপ্ত না করার জন্য বুঝাছিল্লাম। কিন্তু উল্টো সে আমাদেরকে ছুড়ি দেখিয়ে খুন করবে বলে উদত্ত হয়। ভয়ে আমরা সরে যায়। সে সময় হঠাৎ রাফি তার সামনে পড়ে। রাফি অতন্ত ভাল ছেলে ।

রাফির কাকা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন,আমি আমার এই ভাতিজাকে নিজের ছেলের মেয়ের মতো লালন পালন করেছি।কখনো তাকে কোন অভাব বুঝতে দেয়নি।আমার সন্তানের মতো ভাতিজাকে ওই বখাটে খুন করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ইচ্ছে ছিল ভাতিজা আমার পুলিশ হয়ে সাধারন মানুষের সেবা করবে।সেই স্বপ্ন তারা নষ্ট করে দিল।

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুর রশিদ বলেন,আমরা মঙ্গলবার বিকালে লাপাং গ্রাম থেকে খুনি প্রদীপ হাসানকে গ্রেপ্তার করেছি। নিহতের বাবা ছেলের দাফন কাপন শেষে সন্ধ্যায় মামলা করার কথা জানিয়েছেন।