বরুড়ায় পরকীয়া প্রেমের জেরে দিনব্যাপী ভাংচুর, তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের মুহুরি বাড়িতে প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। একদিনব্যাপী এই তাণ্ডবে গ্রামের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এলাকাবাসী শঙ্কিত। স্থানীয়রা জানায়, এক ত্রিভুজ প্রেমের জেরে পরিস্থিতি এমন অশান্ত হয়ে ওঠে। ঘটনার সূত্রপাত হয় জান্নাতুল মাওয়া নামের এক তরুণী এবং জিহাদুল ইসলাম নামে এক যুবকের সম্পর্কের মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের পর, দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর কিছুদিন সুখী জীবন যাপন করার পর, স্বামী জিহাদ কর্মসূত্রে ঢাকায় চলে যান। এর মধ্যেই জান্নাতের সাথে তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় শিহাবের যোগাযোগ শুরু হয়।একপর্যায়ে শিহাব জান্নাতকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে চেষ্টা করেন। জান্নাত বিষয়টি স্বামী জিহাদকে জানান, এবং তারা শিহাবকে ধরার জন্য একটি পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, জান্নাত শিহাবকে একটি নির্জন স্থানে ডেকে আনেন, যেখানে জিহাদ এবং তার বন্ধু রাকিব শিহাবকে আটক করে। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জিহাদের আত্মীয় সাগর, যিনি চেষ্টা করেন বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করতে। কিন্তু রাকিব সাগরের বাধা উপেক্ষা করে শিহাবকে মারধর শুরু করেন।
এ ঘটনাটি দ্রুতই অন্য রূপ ধারণ করে, রাকিব তার বন্ধুদের ফোন দিয়ে আশেপাশের এলাকা থেকে শতাধিক যুবক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুহুরি বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় শিহাবের সহযোগীরা জিহাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে, গ্রিল ভেঙে ঘরে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং খড়ের মাচায় আগুন লাগিয়ে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুলিশকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়ার পরেও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কিছুটা সময় নেয়। পুলিশ আসার আগেই দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে পুলিশ শিহাবকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। জান্নাতুল মাওয়া বলেন, “আমি জিহাদকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। কিন্তু শিহাব আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমরা তাকে ফাঁদে ফেলে ধরলেও পরিণতি আমি কল্পনাও করিনি।”
জিহাদের বাবা আবদুল জলিল জানান, “আমার ছেলের বিয়ের পর থেকে সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এই ঘটনায় আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।” এদিকে বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাজমুল হক জানান, “ঘটনার পরপরই পুলিশ পাঠানো হয়েছে, তবে লিখিত অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা এই হামলাকে ভয়াবহ সহিংসতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা দ্রুত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শান্তি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।