বিএনপির গণসমাবেশ মঞ্চে না থেকেও আলোচনায় শীর্ষে সাক্কু- কায়সার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

গত ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে এসেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,স্থায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খানসহ দলের শীর্ষ নেতারা। কুমিল্লায় থাকাকালীন বিভিন্ন ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের কথাবার্তা ও বক্তব্য ইতিমধ্যে কুমিল্লাসহ সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। তাদের নানা আলোচনায় উঠে এসেছে বিএনপির দুই বহিস্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের নাম।

কে এই দুই বহিষ্কৃত নেতা!
কুমিল্লা বিএনপির জনপ্রিয় এই দুই বহিষ্কৃত নেতাদের একজন হলেন কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু। আর অপর জন হলেন, গেল সিটি নির্বাচনে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়ে নগরবাসীকে তাক লাগিয়ে দেওয়া, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কায়সার। এই দুই নেতাই দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে গত সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কৃত হন।
কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু মেয়র থাকাকালিন সময়ে নানা কারণে দলের কাজে খুব একটা সম্পৃক্ত না হওয়ার কারণে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। পরে মেয়র নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর আবার দলের কাজে নিজের অনুসারীদের নিয়ে পূনরায় সম্পৃক্ত হন ।
বিএনপির গণসমাবেশে নিজের ৭৮টি ফ্ল্যাটে দূরের নেতাকর্মীদের থাকার ও নিজ পয়সায় খাওয়ার ব্যবস্থা করে এবং দীর্ঘদিন গণসমাবেশ সফল করতে নিজ উদ্যোগে কাজ করে ব্যাপক ভাবে আলোচনায় আসেন । প্রায় দশ হাজার নেতাকর্মীকে তিনি খাওয়ার ব্যবস্থাও করেন।
আর অপর দিকে,সাবেক স্বেচ্ছাসেবক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার ছাত্র দলের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি শুরু করার পর থেকেই অদ্য পর্যন্ত কখনো বিএনপির দলীয় রাজনীতিতে এক দিনের জন্যও নিস্কৃয় থাকেননি। ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সর্বশেষ সংসদে সে সহ সম্পাদক ছিল। ছিলেন কলেজ ছাত্রদল সভাপতিও। পরবর্তী পর্যায়ে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর কুমিল্লা মহানগরের স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রথম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সিটি নির্বাচনের আগে যেমন সক্রিয় ছিলেন। ঠিক নির্বাচন করতে গিয়ে বহিস্কৃত হওয়ার পরেও এক দিনের জন্য দলের কাজ থেকে নিস্কৃয় থাকেননি। কখনো মুল দলের পেছন থেকে আবার কখনো নিজের অনুসারীদের নিয়ে বর্তমান সরকার বিরোধী নানা আন্দোলন সংগ্রামে সরব রয়েছেন নিজাম উদ্দিন কায়সার।
বিএনপির গত ২৬ নভেম্বর গণসমাবেশ উপলক্ষে বিএনপির তরুণ নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারও ব্যাপক ভাবে কাজ করেন। এক দিকে পেছনে থেকে মূল দলকে সহযোগিতা করেছেন। অপর দিকে, নিজ উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ, সংবাদ সম্মেলন, নেতাকর্মীদের খাওয়ার ব্যবস্থা এবং সমাবেশের দিন টাউন হল মাঠে নিজের টাকা দিয়ে নেতাকর্মীদের জন্য ২০ হাজার বোতল পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করে সকল মহলের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন।
বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার দুই জনেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে মাঠে অবস্থান করেন এবং গণসমাবেশ সফল করতে ভুমিকা রাখেন।

কেন বহিষ্কার হলেন এই দুই নেতা?
আজীবনের জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। দলীয় শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে সাক্কুকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। মূলত দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দীন কায়সারের বিরুদ্ধে এর আগে দলের কোন শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর নিজাম উদ্দীন কায়সার স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করেন। পরে নিজাম উদ্দীন কায়সারকেও প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠনের সব পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে স্বেচ্ছাসেবক দল। তাকেও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
কেন আলোচনায় বহিষ্কৃত এই দুই নেতা :
বিএনপির গণসমাবেশ ঘোষণার পর থেকে আঁটঘাঁট বেঁধে মাঠে নামেন সাক্কু ও কায়সার। প্রচারণার অভিনব যত উপায় আছে সবভাবেই প্রচার করেন তারা। অন্তত দুই সপ্তাহ ধরে সমাবেশ সফল করার জন্য প্রচার প্রচারণা করেন দুই বহিস্কৃত নেতা। কর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। দিন রাত এক করে সমাবেশ সফল করতে মাঠে থেকেছেন দুই নেতা। লক্ষ্য করলে অন্যসকল নেতাকর্মীদের তুলনায় বহিষ্কৃত এই দুই নেতাকে মাঠে ময়দানে তুলনামূলক বেশিই দেখা গেছে। বহিস্কৃত হয়েও দলের জন্য এমন নিবেদিত প্রাণ হওয়ার কারণেই তাদের নিয়ে আলোচনা চলছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে।

বহিস্কারাদেশে প্রত্যাহারের অনুরোধ :
বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার দুই নেতাই কেন্দ্রের কাছে তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে ইতিমধ্যে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন।

সমাবেশের দিন কোথায় ছিলেন দুই নেতা :
২৫ নভেম্বর সকালেই মাঠে স্থায়ী অবস্থান নেন মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার। মাঠের কোণে নিজের কর্মীদের বহর নিয়ে রাতদিন তাদের অবস্থান ছিল অবিচল। সমাবেশের দিন সমাবেশস্থলেও নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে অবস্থান নেন দুই নেতা। জানান দেন তাদের সক্রিয় অবস্থান।
সাক্কুর অবস্থান ছিল মাঠের পূর্ব কোণে। কর্মীদের নিয়ে তিনি কর্মীদের কাতারে দাঁড়িয়ে অবস্থান নেন। হলুদ পাঞ্জাবি পরা সাক্কুও জানান দেন তার অবস্থান।
আর সবুজ রঙের টি-শার্ট গায়ে দেয়া কায়সার পুরো সমাবেশে মাঠের ঠিক মাঝের অংশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে মুখ করে। নিজেকে কর্মী হিসেবেই তুলে ধরেন হালের এই তরুণ জনপ্রিয় নেতা।

বহিষ্কৃত দুই নেতার বক্তব্য :
বহিস্কার হয়েও সমাবেশ সফল করার বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সমাবেশের কথা শোনার পর থেকে প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ, মিছিল শুরু করি। দূর থেকে আসা নেতাকর্মীদের জন্য ৭৮টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ রেখেছি। নেতাকর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার কর্মী। দলকে ভালোবাসি বলেই এত কিছু করেছি। দল আমাকে ছাড়লেও আমি দলকে ছাড়তে পারবো না।
তিনি আরও বলেন, আমার সাথে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কথা হয়। তারা আমাকে বলেছেন দলের জন্য কাজ করতে। আমি কাজ করছি এবং আগামীতেও করবো। তবে আশা করেছিলাম কেন্দ্রীয় নেতারা আমার নাম নিবে। এটাও হয় নি। তবে আমার বিশ^াস কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ একদিন আমার কাজের মূল্যায়ন করে আমার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নেবে। আমার ভুল হলে ক্ষমা করবে।
এ বিষয়ে তরুণ বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতি করি। নির্বাচনের জন্য আমাকে বহিষ্কার করেছে। কি পরিস্থিতিতে নির্বাচন করেছি সবাই জানে। দলকেও বিষয়টি জানিয়েছি। সমাবেশস্থলে গিয়েছি বিএনপির কর্মী হিসেবে। এর আগেও বলেছি। আমি দলের জন্য কাজ করে যাবো, জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। কারণ আমি জিয়ার সৈনিক। আমার পরিবার বিএনপির পরিবার। বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে এই ক্ষুদ্র জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি। প্রয়োজনে নিজের জীবন বিলিয়ে দিব। তারপরেও গণতন্ত্রের মা প্রিয় দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি,তারুণ্যের অহংকার আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে যে আন্দোলনের ডাক আসছে , সেই আন্দোলন থেকে আমাকে কেউ সরাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

অবশেষে কি পেয়েছেন :
সমাবেশকে সফল করতে কিনা করেছেন এই দুই নেতা । তবুও মন পেলেন না কেন্দ্রীয় নেতাদের। বহিষ্কৃত দুই নেতার আশা ছিলো সমাবেশ সফলে তাদের ভূমিকার প্রশংসা করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। টেনে বুকে নেবেন। ভুলে যাবেন সকল অতীত। আশায় গুড়ে বালি! হলো কি! তাদের নামও মুখে আনেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। তাকানও নি তাদের দিকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা আপাতত এই দুই নেতার দিকে না তাকালেও গণসমাবেশে আসা অসংখ্য নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ছিল সাক্কু , কায়সারের নাম। স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়া জুড়ে ছিল তারা। তারা মঞ্চে না থেকেও কুমিল্লা তথা সারা দেশের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন।