ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভক্ত বিএনপি, পথসভা করেননি কেন্দ্রীয় নেতারা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ।।
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে সিলেট পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ পালন করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশ অতিক্রম করে রোডমার্চটি। এ রোডমার্চকে কেন্দ্র করে পৃথক স্থানে জমায়েত হয়েছিল জেলা বিএনপির দুটি গ্রুপ। ফলে অন্য জায়গায় পথাসভা করলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাঁড়াননি কেন্দ্রীয় নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৯ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান মারা যান। তার মৃত্যুর সাড়ে তিন মাস পর কেন্দ্র থেকে জেলার নবীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয় সিরাজুল ইসলাম, সদস্য করা হয় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন ও নূরে আলম সিদ্দিকীকে।

ঘোষণার পর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও জহিরুল হক খোকন কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। এ নিয়ে পৌরশহরে উত্তেজনা দেখা দেয়। ১১ আগস্ট প্রতিবাদ সভা করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে নতুন আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান ও সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলামকে। সভায় কমিটি দেওয়ার পেছনে নাটেরগুরু হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী আব্দুর রহমান সানি ও তার বড়ভাই কবির আহমেদ ভূঁইয়াকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন জেলা ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা।

১২ আগস্ট নতুন সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল বের করলে শহরের পাওয়ার হাউজ রোডে ধাওয়া করেন কচি-জহির গ্রুপের লোকজন। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটে এবং লাঞ্ছিত হন সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম। এসব ঘটনার পর শহরের ভেতরে কোনো কর্মসূচি করতে পারেনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ গ্রুপ উদযাপন করে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিসীমা মাঠে।

অন্যদিকে কচি-জহির গ্রুপ শহরের মৌড়াইল থেকে টিএ রোডে শোভাযাত্রা করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে। এরপর থেকেই মূলত প্রকাশ্যে আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির গ্রুপিং।

তারুণ্যের রোডমার্চে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পৃথক স্থানে জমায়েতের ঘোষণা দেয় জেলা বিএনপির দুটি গ্রুপ। কচি-জহির গ্রুপ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের খাঁটিহাতা মহাসড়কের পাশে হোটেল লালশালুকের সামনে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

অপরদিকে আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান গ্রুপ সরাইলের কুট্রাপাড়ায় অবস্থানের ঘোষণা দেন। রোডমার্চের আগে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী-খান সোহেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পথসভা করতে স্থান পরিদর্শনে আসেন।

এরআগে কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমও পথসভা করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থান পরিদর্শনে আসেন। দুইগ্রুপের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো স্থান নির্ধারণ করেনি কেন্দ্রীয় বিএনপি। ফলে বৃহস্পতিবার ভৈরব থেকে রোডমার্চ শুরু হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো পথসভা করেননি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিক্রম করার পর সিলেটের আগে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার রোডমার্চে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো পথসভা না হওয়ায় হতাশ বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

রোডমার্চে আসা আলী আহমেদ নামের বিএনপির এক কর্মী বলেন, সেই সকাল থেকে বিশ্বরোড মোড়ে এসে বসে আছি রোডমার্চে নেতারা আসবেন। কিন্তু নেতারা এসে গাড়ি থেকে নামেননি। দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেননি। বিএনপির গ্রুপিংয়ের কারণে আজ এ অবস্থা হয়েছে।

ইসহাক হোসেন নামের আরেকজন বলেন, কিছুদিন পর জাতীয় নির্বাচন। এখন যদি দলের এ অবস্থা হয়, সামনে নির্বাচনে কী হবে! আমরা তো বিএনপিকে ভালবাসি। বড় নেতাদের গ্রুপিংয়ের কারণে দলের এ অবস্থা।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির একাংশের নেতৃত্ব দেওয়া আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি জাগো নিউজকে বলেন, যারা মাঠে রাজনীতি করে তাদেরকে নিয়ে আমরা সমবেত হয়েছি। অনেকে আছে যাদের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই। যখন দেখা যাচ্ছে বিএনপির সূর্য উদয় হচ্ছে তখন তারা হাজির হচ্ছেন। আমাদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। যাদের কোন কিছুই নেই অথচ দলের জন্য নিবেদিত, তাদের মূল্যায়ন আমার কাছে আছে। যারা টাকা খরচ করে উটে এসে জুড়ে বসে, তাদেরকে সমাজের মানুষ ঘৃণা করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আরেক অংশের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের আজকের কর্মসূচি শতভাগ সফল হয়েছে। জেলার সব নেতাকর্মীরা কুট্টাপাড়া মোড়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। অন্যদের বিষয়ে জানা নেই।