কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ৫নং দেবিদ্বার ইউনিয়নের সম্পূর্ণ অংশ নিয়ে ২০০২ সালে গঠিত হয় দেবিদ্বার পৌরসভা। প্রতিষ্ঠার দুই যুগ অতিক্রম করলেও এখনও নির্মিত হয়নি কোনো নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন। ফলে প্রতিদিনের ঘরোয়া ও বাণিজ্যিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা জায়গা ও রাস্তার পাশে। এসব জায়গা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাছাড়া এসব উন্মুক্তস্থানে স্তুপ করে রাখা বর্জ্য আগুনে পোড়ানোর কারনে সৃস্ট ধোয়া পৌরবাসীর জন্য হয়ে উঠেছে চরম দুর্ভোগের কারন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পৌর এলাকায় বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জমা হয়। এর বড় একটি অংশ ফেলা হয় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে। বারেরা থেকে শুরু করে মহিলা কলেজ, ফিশারী ও সাইলচর এলাকায় ভ্যানে করে এনে এসব বর্জ্য স্তুপাকারে ফেলেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। এছাড়া হাসপাতাল রোড, শান্তি রোড ও চান্দিনা রোড এলাকাতেও যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা হয়। এতে একদিকে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, অন্যদিকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধে নাগরিক চলাচল হয়ে ওঠে কষ্টকর। বর্ষাকালে এসব জায়গা কাদায় ভরে যায়, মশার উপদ্রব বাড়ে, আর দুর্গন্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
পৌরসভা সূত্রে জানাযায়, দেবিদ্বার পৌরসভায় প্রতি বছর কঠিন বর্জ্য উৎপাদন হয় আনুমানিক ৩৬৫০ টন। এর মধ্যে অব্যবস্থাপিত কঠিন বর্জ্য আনুমানিক ১৮৮৫ টন। ৮৪.২৫% পরিবার তাদের বর্জ্য সরাসরি পরিবেশে ফেলে দেয়। মাত্র ১৫.৭৫% পরিবার ডাস্টবিন ব্যবহার করে। দেবিদ্বার পৌরসভা বর্জ্য সংগ্রহ করে সাইলচর এলাকায় নির্ধারিত স্থানে জমা করে পুড়িয়ে ফেলে। তবে পৌর এলাকার ফতেহাবাদে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের জন্য এক একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে ৪৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাস্টার এন্টাপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। চলতি বছরের জুন মাসে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও সরকার পতনের পর ওই কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর পর সম্প্রতি টার্ন এন্টার প্রাইজ নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে নতুর করে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় । যা সমাপ্ত করতে আবারও সময় সম্প্রসারন করতে হবে বলে জানা গেছে।
সাইলচর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন বাড়ি থেকে কাজে বের হলেই পৌর এলাকার সবচেয়ে বড় ময়লার ভাগাড় অতিক্রম করতে হয়। এখানে ময়লা পোড়ানোর ধোয়ায় পুরু এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। যাওয়া-আসার পথে ধোয়া আর দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয় পথচারীদের। এই অবস্থা আর কতদিন চলবে? আমরা এর থেকে মুক্তি চাই।”
হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সুদীপ রায় বলেন, “হাসপাতাল রোড এবং শান্তি রোড এক সময় দেবিদ্বারের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন আবাসিক এলাকা ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সংযোগস্থলে যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে এলাকায় সারাবছরই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। বর্ষাকালে ময়লা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন চলাচল দুরূহ হয়ে যায়। পৌর কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই দুর্ভোগ আরও বাড়বে।”
জানতে চাইলে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার সাদ্দাম হোসেন বলেন, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য পোড়ালে কার্বন মনোক্সাইড, ডাই-অক্সিনসহ বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয় যা মানুষের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে। এই গ্যাসগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে হাঁপানি, ক্যান্সার, চর্মরোগ, চোখ ও গলা জ্বালাপোড়া ইত্যাদি রোগের কারণ হতে পারে। এছাড়া উন্মুক্ত বর্জ্য ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বাড়াতে পারে।
নাগরিক অধিকার সংগঠন ‘হ্যালো ২১২’-এর সভাপতি কাজী নাছির বলেন, “দুই যুগ ধরে পৌরবাসী পৌরবর্জ্য, কাদা আর দুর্গন্ধ নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। একটি আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন এখন সময়ের দাবি।”
এ বিষয়ে দেবিদ্বার পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রায়হানুল ইসলাম জানান, “পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ফতেহাবাদ এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে একটি আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণে কাজ করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। আশা করছি, দ্রুতই এর নির্মাণ সম্পন্ন হবে এবং দেবিদ্বার পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।”
দেবিদ্বার উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী অর্জিন চাকমা জানান, ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৫ আগস্টের পর চলে যাওয়ায় নতুন প্রতিষ্ঠান টার্ন এন্টারপ্রাইজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই তারা কাজ শুরু করেছেন। আশা করি আগামী বছরের মধ্যে তারা নির্মাণ সম্পন্ন করবেন।