মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ মাস হলো রমজান। সারাদিন উপবাস থেকে সংযম দেখিয়ে দিন পার করে মুসলমানরা। সংযমের পাশাপাশি তাদের অন্যতম প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সেহরির খাবারে পুষ্টিকর খাবার নেই বললেই চলে।
রমজান শুরু হওয়ার পর থেকেই খাবার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আবাসিক শিক্ষার্থীদের। অনেক শিক্ষার্থী খাবারের মান ও মূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও আবার কিছু শিক্ষার্থী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং এ রমজান মাসে শিক্ষার্থীদের সেহরিতে পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা, খাবারের মান, মূল্য ও পরিষেবা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া কী, খাবারের মান উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নিয়ে কথা হয়েছে শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের সাথে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. শাকিল মেহরাজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ও প্রশাসিক ভাবে প্রায় ২০ রমজান পর্যন্ত আমাদের পাঠদান ও পরীক্ষা চলমান থাকবে, তাই আমাদের এই সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা শিক্ষার্থী আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা।
আমরা যারা হলে অবস্থান করছি তাদের হলে সেহরি খেতে হচ্ছে। কিন্তু হলের ডাইনিং এ প্রতি মিল খাবারের দাম ৯০ টাকা করা হলো, ২য় রমজান রাতে নজরুল হলে ৯০ টাকায় সাদা ভাত, তেলাপিয়া মাছ, লালশাক দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত দামে এই মানহীন খাবার খেয়ে আমাদের সিয়াম পালন করা খুব সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। আমরা যদি শুধু মাত্র এক বেলায় ৯০ টাকা দিয়ে খেতে হয়, তাহলে আমাদের ইফতার করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহন জরুরি, যেনো বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নিয়ে অতিরিক্ত দাম ও খাবারের মানের দিকে নজর দিলে, আমাদের এই মাসে সিয়াম পালনে সহযোগিতা হবে। এবং হলের অতিরিক্ত উচ্চ মূল্যে মানহীন খাবারের দিকে নজর দেওয়ার জন্য হল প্রশাসনের নিকট অনুরোধ রইলো।
একই হলের ১৭তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী মো. আসাদুজ্জামান সৌরভ বলেন, হলের সেহরির খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের, যা দামের তুলনায় গ্রহণযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে এই খাবার খেয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ।
এই পরিস্থিতিতে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হলের ডাইনিংয়ে ভর্তুকির ব্যবস্থা করার দাবি জানাই, যাতে সেহরিতে মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা যায়।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়- ২৪ হলের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. দিলোয়ার হোসেন বলেন, আগের তুলনায় হলের খাবারের মান কিছুটা ভালো হলেও দামটা বেশি। কোন ধরনের হালাল ভর্তুকি থাকলে ভালো হতো। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৬০-৭০% মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসে। তাদের কাছে একবেলা খাবারের দাম ৮০ টাকা অনেক বেশি।
তাছাড়া রোজায় একবেলা খাবার খেতে হয় শুধু তাই না, ইফতারেও দেখা যায় অনেক টাকা খরচ হয়। তাই আমি বলবো যদি কোন হালাল ভর্তুকি বা স্পন্সরের ব্যবস্থা করা যায়, অবশ্যই সেটা আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক উপকারে আসবে।
এবিষয়ে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট মোঃ হারুন বলেন, এখন হলের ফান্ড তো অনেক ক্রাইসিস আছে।
আমাদের আগে দেখতে হবে আমাদের ফান্ড আছে কিনা যথেষ্ট। ইউনিভার্সিটিতে তো বিভিন্ন ফান্ড থাকে। সরকারি ইউনিভার্সিটি অপারেশন করতে যে পরিমান ফান্ড দেয়া দরকার সরকার সে পরিমানও তো দেয়না। উল্টো এখান থেকে ইনকাম জেনারেট করতে বলতেছে।
জার্মানিতে গিয়েছিলাম সেখানে একটা ডিপার্টমেন্ট চালানোর জন্য যে টাকা খরচ হয় এখানে সে টাকা দিয়ে পুরো ইউনিভার্সিটি চালাতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি যথেষ্ট ফান্ড থাকে তবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভাবে সব খাবারের ভর্তুকি দেয়াকে সমর্থন করি।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি এটা দিতে পারে তো আমি অবশ্যই এটা চাইবো। আমার শিক্ষার্থীরা যদি ভালো খাইতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি এটা ভর্তুকি দেয়ার সক্ষমতা থাকে তাহলে অবশ্যই এটা চাইবো।
এবিষয়ে বিজয়-২৪ হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান বলেন, এখন তো আসলে আমাদের কোনো বাজেট নেই, হলে বাজেট দূরের কথা, ইউনিভার্সিটিরও নেই। তবে আমি স্যারের কাছে এপ্লাই করেছি, যদি ওখান থেকে পাই আমরা অবশ্যই দিবো। এর মধ্যে আমি একটা বিকল্প পদ্ধতি নিয়েছি যে আমরা এক মাস দুমাস পরে এজটা ফিক্সড করি, আমাদের হল প্রশাসন কমিটির সাথে মিটিং করে দেওয়ার চেষ্টা করি। একটা এমাউন্ট আমরা দিয়েছি খাবারের মান ভালো করার জন্য। তো সেহেরির জন্য হয়তো ৫-১০ বেশি দেওয়া লাগতে পারে, হয়তো-বা একটা ইফতার পার্টি করবে সেখানে কিছু ভর্তুকী দিবো আমরা।
রেগুলার ভর্তুকী দেওয়ার মতো সামর্থ তো হলের নাই ই বরং প্রশাসনের ও নাই। আর ইউনিভার্সিটির একটা নিয়ম হচ্ছে খাত অনুযায়ী খরচ করা। এ ব্যাপারে যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন যদি একমাস ভর্তুকী দিতে চায় তাহলে এটা তে আমার ২০০% সমর্থন থাকবে আমার। আমি ছাত্রদের জন্য সর্বোচ্চটুকু ঢেলে দিবো, এটা তে আমার কোনো সমস্যা নেই।
এবিষয়ে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের প্রভোস্ট ড. সুমািয়া আফরীন সানি বলেন,এটা তো অ্যাজ ইউজুয়াল সবসময়ই যেমন ছিল এমনটাই হয়তো থাকবে । আর বিগত সময়গুলোতে তো একটা প্র্যাকটিস ছিল , ঐভাবেই ম্যানেজ করছে হলগুলোতে। আর আমাদের তো ডাইনিং এ যারা খাচ্ছে তারা তো মেয়েরা নিজেদের তত্ত্বাবধানে কাজ হচ্ছে । ভর্তুকির বিষয়ে উপর মহল থেকে এখনো কিছু বলা হয়নাই। আর এ ধরনের কোনো কথা আমাদের কাছে আসেও নাই। তো যার ফলে এটা নিয়ে কোনো আলোচনাও হয় নাই।
আর আমি রমজান উপলক্ষে বাবুর্সিদের বলেছি যে খাবারের কোয়ালিটির দিকে যেন নজর দেয়া হয়,তারা যেন সচেতন থাকে সতর্ক থাকে, স্টুডেন্টের দিক থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ যাতে না আসে। আর ভর্তুকির কথা আসলে কি করব বা কি বলব সেটা যখন আসবে তখন ওদের কাছে জানিয়ে দেবো।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. হায়দার আলী বলেন, এ ব্যাপারে নতুন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি এরকম কোন দাবি আসে তাহলে চিন্তা করা যাবে। হয়তো দেয়া যেতে পারে কোনো অন্য খাত থেকে। আচ্ছা দেখি কি করা যায়। আমি এখনই এব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না।
ভর্তুকির বিষয়ে আমি আলোচনা করবো সবার অনুমতিক্রমে। এখানে প্রশাসন আছে। এখন সুনির্দিষ্ট আইনের বাইরে একটুও কিছু করবো না এবং আমরা সকলে মিলেই সিদ্ধান্ত। এখানে হল প্রশাসন আছে। ৫ টা প্রভোস্টরা আছেন। প্রক্টরিয়াল বডি আছেন। সবার আলোচনার সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হবে।