শর্তসাপেক্ষে জমজমের পানি বিক্রি ‘জায়েজ’

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মত
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে দেদারসে বিক্রি হতো বোতলজাত জমজমের পানি। দুই মাস আগে খবর পেয়ে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পবিত্র এ পানির বৈধ কোনো সোর্স উল্লেখ করতে না পারা ও বিক্রির নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে সে সময় বন্ধ করে দেওয়া হয় বিক্রি। পরে এই পানি বিক্রির বৈধতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্টদের। যাচাই শেষে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, শর্তসাপেক্ষে জমজমের পানি বিক্রি করা জায়েজ।

এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘জমজমের পানি বিক্রি জায়েজ আছে। এটা আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিত সিদ্ধান্তে জানিয়েছি। সীমিত পরিসরে এনে প্যাকিংসহ অন্য খরচের বিনিময়ে তারা (ব্যবসায়ীরা) এটা বিক্রি করতে পারবেন।’

এর আগে ভোক্তা অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সম্প্রতি জমজমের পানি বিক্রি জায়েজ বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। তবে এ মতামত এখনো ভোক্তা অধিদপ্তরে এসে পৌঁছায়নি। পানি বিক্রি চালু হবে নাকি বন্ধই থাকবে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

জমজমের পানি পুনরায় বিক্রির বিষয়ে মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এর মধ্যে অনেক শর্ত রয়েছে। এক কথায় বৈধ-অবৈধ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। অনেক শর্ত মানতে হবে। সারসংক্ষেপ হচ্ছে, জায়েজ আছে। তবে সেটা বৈধ সোর্স থেকে আসছে কি না, প্রকৃত জমজমের পানি কি না এবং প্রতারণা হচ্ছে কি না এমন অনেক শর্ত রয়েছে। সেগুলো মেনে পানি বিক্রি করতে হবে, যা কঠিন।’

গত ২৯ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররম মার্কেটে বোতলজাত জমজমের পানি বিক্রি হচ্ছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে ৫ লিটার ও ২৫০ মিলিলিটারের বোতলে জমজমের পানি বিক্রি করতে দেখা যায়। কিন্তু এ পানি কোথা থেকে আসে সে বিষয়ে স্পষ্ট জানাতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। আবার আসলেই সেটা জমজমের পানি কি না, তারও কোনো প্রমাণ মেলেনি বিক্রেতাদের কাছে।

এ অবস্থায় পরের দিন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে জমজম কূপের পানি খোলাবাজারে বিক্রি সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা হয়। এতে জমজমের পানি বিক্রির আইনগত ও নৈতিক বৈধতা নিয়ে আলোচনার পর পানি বিক্রি বন্ধ করা হয়। এসময় সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে ব্যবসায়ীরা জানান, তারা এই পানি হাজি কিংবা হজ পরিচালনাকারী বিভিন্ন এজেন্সি থেকে পান।

এরপর সফিউজ্জামান এই পানি বিক্রির কোনো বৈধতা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতামত চান।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতামত এখনো ভোক্তা অধিদপ্তরে পৌঁছায়নি জানিয়ে সফিকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কী মতামত দিয়েছে সেটা এখনো আমরা পাইনি। সেটা পেলে পানি বিক্রি চালু হবে নাকি বন্ধই থাকবে সে বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শর্তসাপেক্ষে সেটা জায়েজ বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসলামিক ফাইন্ডেশন- এমন জানানো হলে তিনি বলেন, শর্ত থাকলে সেটার অবশ্যই বৈধ সোর্সের কথা বলা হবে। আমি যতটুকু জানি এ পানি বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয় না। তাহলে কীভাবে বৈধভাবে এটা বিক্রি হবে?

সফিকুজ্জামান বলেন, বিষয়টি সংবেদনশীল। এটা আমাদের সামনে আসার পরে দ্রুত সভা করেছি। সে সময় যেটুকু আলোচনা হয়েছে, তার ভিত্তিতে সাময়িকভাবে পবিত্র এ পানি বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ এমন ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। এমনকি সৌদি আরবেও এই পানি বিক্রি হয়- এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। এটি বিনামূল্যে হাজিরা পান।

এর আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমার এটাও মনে হয় না কোনো হাজি সৌদি থেকে জমজমের পানি নিয়ে আসবেন বায়তুল মোকাররমের এ মার্কেটে বিক্রি করার জন্য। ছোট ছোট বোতলে যেভাবে মার্কেটে পানি বিক্রি হচ্ছিল সেটা সত্যিকারের জমজমের পানি কি না সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সৌদি সরকার যদি এটা জানে, তাহলে আমাদের দেশের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া এমনও হতে পারে যে বাংলাদেশিদের জন্য জমজমের পানি নিয়ে আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

এদিকে বুধবার (২৯ মার্চ) সরেজমিনে বায়তুল মোকাররম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটে এখন জমজমের পানি বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

সেখানে একজন ব্যবসায়ী বলেন, সরকার এটা বন্ধ রেখেছে। দোকান মালিক সমিতি বলেছে, কেউ বিক্রি করলে দোকান বন্ধ। ভয়ে আর কেউ বিক্রি করে না।

এ বিষয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের এফ ক্যাটাগরি (টুপি, আতর, তজবিহ ও জায়নামাজ) মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই মার্কেটে নোটিশ করা হয়েছে। কেউ বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেজন্য এখনো কেউ বিক্রি করেনি। আমরা নিজেরাও জমজমের পানি বিক্রি হচ্ছে কি না, তা তদারকি করি।

সারাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বা অনলাইনে এই পানি বিক্রি করা হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে সরকারি অন্য সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

ভোক্তা অধিকার বায়তুল মোকাররম মার্কেটে অভিযান পরিচালনার সময় দেখা যায়, জমজমের পানি হিসেবে ছোট বোতল ৩০০ টাকা, আর ৫ লিটারের বোতল ২ হাজার ৫০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযান পরিচালনার খবর পেয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের আশপাশে এই পানি বিক্রির পাইকারি বাজার রয়েছে বলেও সে সময় জানা যায়।