সরিষা জমিতে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সন্তান জন্ম অতঃপর

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

১৬ জানুয়ারি সোমবার দুপুর। সরিষা ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটছিলো ভারাসাম্যহীন এক নারী। হঠাৎ করে সেই নারী সরিষার জমিতে ঢলে পড়েন। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। ফুটফুটে এক কন্যার আগমন ঘটে৷ পাগলিটা মা হলো। বাবা কে জানা গেলো না। পরে স্থানীয়রা সেই নারী সমেত নবজাতককে নিয়ে যায় হাসপাতালে। সেই হাসপাতাল থেকে নবজাতক রেখে সেদিন সন্ধ্যায় উধাও হয়ে যায় সেই মানসিক ভারাসাম্যহীন মা।
তারপরেই স্থানীয়দের মধ্যে শিশুর মালিকানা নিয়ে শুরু হয় বিবাদ। কেউ বলে ওই নারীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। তার চিকিৎসার সরঞ্জাম দিয়েছি। সে জন্য এই নবজাতক তার। আবার কেউ বলে আমি প্রথম দেখেছি নবজাতকটি আমার। যে জমিতে নবজাতকটি জন্মগ্রহণ করে সেই জমির মালিকও নবজাতকের দাবি জানান। এভাবে তর্কা বিতর্কের পরে শুরু হয় দর-কষাকষি৷ দাম উঠে ৫০ হাজার, ১ লাখ তারপর গিয়ে থামে দেড় লাখে।
১৬ জানুয়ারী সোমবারের সেই ঘটনার সূত্রপাত হয় কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলার গলিয়ারা উত্তর ইউনিয়নের ভূমি অফিস সংলগ্ন সরিষা জমিতে।
এমন চাঞ্চল্যকর সংবাদটি পৌঁছে যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভাশিস ঘোস বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভাশিস ঘোষ বলেন, সেদিন ঘটনা শুনে আমি ও থানার
ওসি দেবাশীষ চৌধুরী মিলে মেডিকেল টিম ও উপজেলা শিশু কল্যান বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে নিয়ে হাজির হই কুমিল্লা ম্যাডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন আমরা ম্যাডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হই ততক্ষণে বেশ কয়েকজন দম্পত্তি হাজির। আমরা যখন আইনানুগ বিষয়গুলো বলে ওই নবজাতকে এ্যাম্বুলেন্সে করে শিশু সদনে নেয়ার প্রস্তুতি নেই তখন এক দম্পতি কান্না শুরু করেন। যে কোন কিছুর বিনিময়ে তারা নবজাতকের বাবা মা হতে চান।

ওই দম্পত্তি জানায়, তাদের বিয়ের ১৭ বছর হলো সন্তান হয় না। এই নবজাতককে তাদের সন্তান হিসেবে নিতে চায়। সে জন্য গত দুই দিন তারা হাসপাতালে এসে নতুন জামাসহ নবজাতকের জন্য যা দরকার সব নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে ওই দম্পতির হাতে কন্যাটিকে তুলে দেই। তার নাম দেই জয়ীতা।
ওই দম্পতির পরিচয় প্রকাশ করতে চাই না। তবে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে এবং প্রতি তিন মাস পর পর উপজেলায় হাজির হওয়ার শর্ত আরোপ করি। কন্যার বয়স ১৮ হওয়া পর্যন্ত এই শর্ত তারা মানবে বলে স্বীকার করেছে।
ইউএনও শুভাশিস ঘোষ আরো বলেন, আমরা যখন নবজাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃস্তান দম্পতির হাতে তুলে দেই তখন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ গোলাম সারোয়ারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এক আবেগঘণ দৃশ্যের অবতারণা হয়।