সাংবাদিকের রক্তে রঞ্জিত হলো মুরাদনগর পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ !

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

গত ১৯মে সক্রিয় তিন সাংবাদিকের রক্তে রঞ্জিত হলো কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা। জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকরা যখন সন্ত্রাসীদের কর্তৃক আক্রান্ত হচ্ছেন ঠিক তখনি মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে সাহায্য চান মুরাদনগর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক কালের কন্ঠের মুরাদনগর প্রতিনিধি আজিজুর রহমান রনি । কিন্তু ফোন করার ৪০ মিনিট পরেও থানার ওসি আজিজুল বারী আসবে বলেও নিজে তো আসেননি এমনকি পুলিশও পাঠান নি। ফলে সন্ত্রাসীরা সহজেই নির্মম ভাবে তিন সাংবাদিককে একাধিকবার মেরে রক্তাত্ব করে বীর দর্পে চলে যায়।
পরবর্তী পর্যায়ে আহত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে থানায় যখন মামলার জন্য যাওয়া হলো তখনও তিনি নানা অজুহাতে মামলা নেননি। যার কারণে আইনের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে গতকাল ২২ মে সোমবার কুমিল্লার আদালতে মামলা করেছে চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মুরাদনগরের কলম সৈনিকেরা।
ঘটনার বিবরনে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত সাংবাদিক আজিজুর রহমান রনি বলেছেন, শুক্রবার বিকেলে মুরাদনগর উপজেলা প্রেস ক্লাবের ভিতর নিউজ লিখতেছিল সাংবাদিক শামিম ও ফয়সাল। এমন সময় দেশীয় নানা অস্ত্র নিয়ে এক দল সন্ত্রাসী উপজেলা প্রেস ক্লাবের ভিতর হামলা করে বেধরক পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে সাংবাদিক শামিম ও ফয়সালকে।তারা তাদের ক্যামেরা ,মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। সন্ত্রাসীদের হাতে মার খেয়ে যখন নিরাপদ স্থানে আহত দুই সাংবাদিক চলে যেতে ছিল তখন আবার তাদের গতিরোধ করে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় সাংবাদিক ফয়সাল সাহায্য চায় সাংবাদিক রনির কাছে। সাংবাদিক রনি নিজে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল বারীর কাছে ফোন করে সাহায্য চায়। কিন্তু ওসি সাহেব পুুলিশ পাঠাননি। পরে আহত সাংবাদিক শামিম ও ফয়সালকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাংবাদিক রনি গেলে সেখানে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রনিসহ অপর আহত দুই সাংবাদিককে মাটিতে ফেলে এালোপাতারীভাবে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় সন্ত্রাসীদের ভয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক,নার্স,হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা দ্বিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে বলে জানিয়েছেন কালের কন্ঠের সাংবাদিক রনি। হামলার পর মুরাদনগর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক আমাাদের সময়ের প্রতিনিধি, মুরাদনগরের সিনিয়র সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হাবিব মামলা করার জন্য মুরাদনগর থানায় যায়। সাংবাদিক হাবিব নিজে এজাহার লিখে নিয়ে গেলেও থানার ওসি সাহেব নাকি বলেছেন, আপনারা লিখলে হবে না। আমার থানার লোক মামলা লিখবে। বার বার ওসি সাহেবকে সাংবাদিকদের এজাহার গ্রহন করতে বললেও তিনি তাদেরটা গ্রহন না করে থানার কম্পিউটার অপারেটরের কাছে যেতে বলেন। তখন সাংবাদিক হাবিব মামলা না করেই চলে আসেন। অবশেষে ২২ মে সোমবার কুমিল্লার আদালতে মামলা করে সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক রনি কান্না জর্জরিত কন্ঠে এই প্রতিবেদককে বলেন, ভাই, আমি ফোন করার পরেও যদি ওসি সাহেব পুলিশ পাঠাত তাহলে তারা কিন্তু আমাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে মারতে পারে না। মুরাদনগরে তিন জন সক্রিয় সাংবাদিকের রক্ত ঝড়ার পরেও আজ পর্যন্ত ওসি সাহেব আমাদের কোন খবর নেননি। মামলা করতে চেয়েছি আমাদের লেখা এজাহারে কিন্তু ওসি সাহেব অদৃশ্য প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে আমাদের এজাহার বাদ দিয়ে থানার কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে লিখাতে চেয়েছেন মামলা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুরাদনগরের প্রায় এক ডজন মাাঠের সাংবাদিক এই প্রতিবেদককে বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ওসি সাহেব আমাদের স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে গ্রুপিং লাগিয়ে নিরাপদ অবস্থানে মজা লুটাতে চান। মুরাদনগর থানার পুলিশ চান সাংবাদিকরা যেন তাদের দাস হয়ে মুরাদনগরে সাংবাদিকতা করেন। তাদের অন্যায় এবং অপরাধ যেন না লেখেন। একই দিন মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন পেশার প্রায় ১৫ জন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দদের সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে অর্ধেকই সরকার সমর্থক কিংবা ত্যাগী আওয়ামীলীগার। তাদের সাফ বক্তব্য, মুরাদনগরের শীর্ষ নেতা চান, মুরাদনগরের সাংবাদিকরা যেন উনার কর্মচারী হয়ে চলেন। তারা যেন সাংবাদিকতার নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে শুধু উনার পক্ষে কথা বলেন। এজন্য তিনি ঠান্ডা মাথায় সাংবাদিকদের মধ্যে ভাগ করে রেখেছেন। যখন যে গ্রুপকে ব্যবহার করা প্রয়োজন, সে ভাবে ব্যবহার করেন। যার ফলে উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনও শীর্ষ নেতার মুখের দিকে চেয়ে সাংবাদিকদের উপর ঘুরি উড়ান। মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের নাম প্রকাশ না করার কঠোর শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আহত সাংবাদিকদের উপর যেভাবে হামলা করেছে তা এক কথায় বলব, বর্বর। মুরাদনগরে হাসপাতালের ভিতর এভাবে কোন সাংবাদিকের উপর হামলা আমি এই প্রথম দেখলাম। এর জন্য দায়ী কে জানতে চাইলে তিনি স্পস্ট ভাবে বলেন, আমাদের নষ্ট রাজনীতি আর রাজনীতিক ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করার ফসল। পুলিশ যখন দেখল যে, আহত সাংবাদিকরা উপজেলার শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দের তালিকায় নেই। তাই পুলিশও শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে খুশি করতে আহত অসহায় সাংবাদিকদের উপর থেকে মুখ সরিয়ে নেয়।
আামি আমার এই কলামে দ্বার্থহীন কন্ঠে পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, সাংবাদিকদের মধ্যে গ্রুপিং লাগিয়ে , দ্বন্ধ সংঘাত সৃষ্টি করে কারো আখেরে ভালো হয়নি। বরং ক্ষমতার মসনদ থেকে নেমে আসলে তাদেরকে সালাম দেওয়ার লোকজনও হারিকেন দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না।
এই প্রতিবেদক গতকাল সোমবার এই বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি আজিজুল বারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, অভিযোগ সঠিক নয়। জানার পর পরই আমি পুলিশ পাঠিয়েছি। থানায় কেউ মামলা করতে আসেনি।
গণমাধ্যম হলো একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্বম্ভ। আর সাংবাদিকরা হলো জাতির বিবেক।
সুতরাং সকল পক্ষকেই অনুরোধ করব, গণমাধ্যমের উপর হস্তক্ষেপ করে অতীতেও কেউ পার পায়নি এবং ভবিষ্যতেও পাবেন না। সুতরাং সংযত হোন, সাবধান হোন।
মুরাদনগরের তিন সাংবাদিকের উপর যে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনুন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন।