হোমনায় নিজের অজান্তেই শিশুপুত্রকে

অপহরণকারীর হাতে তুলে দিলেন মা
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

কুমিল্লার হোমনায় চিকিৎসার জন্য এসে নিজের অজান্তে ৭ মাস বয়সী শিশুপুত্রকে অপহরণকারীর কোলে তুলে দিলেন শিউলী আক্তার নামে এক মা। এ যেন নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারলেন। পুত্রকে হারিয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়। অপহৃত শিশুটি উপজেলার রামকৃষ্ণপুর আখন্দপাড়া গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের পুত্র। গতকাল শনিবার বেলা বারোটায় হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, অপহরণকারী মাহমুদার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবিনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার কন্যা এবং একই উপজেলার শাহপুর গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী। সে প্রথমে হোমনা থেকে মুরাদনগর উপজেলার ওপর দিয়ে পালিয়ে যায়। শিশুটিকে উদ্ধার এবং তাকে ধরতে পুলিশের একাধিক টিম অভিাযানে নেমেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা) শিশু মোহাম্মদ মিয়া উদ্ধার হয়নি।
মা শিউলী আক্তার জানান, নিজের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় চিকিৎসা নিতে এদিন সকাল নয়টায় শিশুপুত্র মোহাম¥দ মিয়াকে (৭ মাস) কোলে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন তিনি । সঙ্গে এনেছিলেন মাহমুদা নামের (৩২) পূর্ব পরিচিত প্রতিবেশী এক ভাড়াটে নারীকেও। যথারীতি ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে পুনরায় হাসপাতালে যান তিনি। রোগীর ভীড় থাকায় শিশুপুত্রকে নিয়ে ওই চিকিৎসকের কক্ষের সামনে অপেক্ষা করছিলেন শিউলী আক্তার এবং মাহমুদা। বারোটার দিকে মা শিশুপুত্র মোহাম্মদকে মাহমুদার কোলে দিয়ে ডাক্তারের কক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এমন অন্ধ বিশ্বাসই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পরে ফিরে তার পুত্র এবং তাকে (মাহমুদা) আর দেখতে না পেয়ে পাগলপ্রায় শিউলী আক্তার।
পুত্রকে হারিয়ে পাগলের মতো ছুটাছুটি করছেন হাসপাতালের এ গলি ওই গলি। তার আহাজারীতে হাসপাতালের অন্য রোগীরাও ভারাক্রান্ত। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানান। ততক্ষণে তার স্বজনেরাও হাসপাতাল ও আশেপাশের এলাকায় খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বিষয়টি থানাকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রিপন বালা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে (হাসপাতালে) গিয়ে পুত্রহারা শিউলী আক্তার ও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
মা শিউলী আক্তারের বাবার বাড়ি হোমনা উপজেলার আলীপুর এবং স্বামীর বাড়ি একই উপজেলার রামকৃষ্ণপুর আখন্দপাড়া গ্রামে। এক ছেলে (১০) ও এক মেয়েকে (৯) নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভাড়া থাকেন রামকৃষ্ণপুর আখন্দপাড়ার প্রতিবেশী শাহিনূর মিয়ার বাড়িতে। মাহমুদার মা রামকৃষ্ণপুর কলেজের ছাত্রাবাসে ঝি এর কাজ করেন বলে জানা যায়। পূর্ব পরিচিত হওয়ার সুবাদেই মাহমুদাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, ‘শিউলী চিকিৎসা নিয়ে রিপোর্ট দেখাতেই এসেছিলেন। পরে শুনি, যাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন সেই নারীই নাকি তার শিশুপুত্রকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি থানাকে অবহিত করি। ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রিপন বালা এসেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।’
এ ব্যাপারে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রিপনা বালা বলেন, ‘খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে শিশুটির মা শিউলী বেগম এবং তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের টিম পাঠিয়েছি। শিশুটিকে উদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’