কুমিল্লা ৫ এ আওয়ামী লীগের লোকেরা চর দখলের মত কামড়াকামড়ি করতেছে

জাহিদ হাসান নাইম ।।
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

“শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী ‘ট্রেন’ কি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে!” বিষয়ক টক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিনের যৌথ উদ্যোগে এ টক শো অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাহাজাদা এমরানের সঞ্চালনায় ৬০ তম পর্বের টক-শো তে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা ৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত মাহমুদ।
এসময় টক-শো তে বাংলাদেশের চলমান নির্বাচনী পরিস্থিতিসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে।
আলোচনায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার সাংবাদিকতার প্রতি একটা ঝোঁক কাজ করতো। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১ম অনার্স ব্যাচের ছাত্র। আমি বাসায় না জানিয়েই সাংবাদিকতায় লেখাপড়া করেছিলাম। ১৯৭৮ সাল থেকে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করার মাধ্যমে আমার সাংবাদিকতায় লেখালিখি শুরু। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নানা রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে, বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মেলামেশা হয়েছে। আমি মনে করি এটা জীবনের জন্য একটা সম্পদ। তবে, তৎকালীন সাংবাদিকতার সাথে বর্তমান সাংবাদিকতার অনেক পার্থক্য রয়েছে। এখনকার সাংবাদিকদের সাহিত্যিক ব্যাকগ্রাউন্ড নাই। আগে আমরা লেখা ছাপার আগে পয়সা নিবো নাকি নিবো না, এটা নিয়ে চিন্তাও করতাম না। কিন্তু, এখন সেটা দেখা যায় না।
সাংবাদিকতায় থাকার কারণেই আমার রাজনীতির প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়। রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলে কোনো মানুষকে সরাসরি সহায়তা করা যায় না। মানুষের উপকার করতেই আমি রাজনীতি করতে চেয়েছি। এবারের নির্বাচনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিদেশীরা আমাদের নির্বাচনে মনিটরিং করছে। তারা থার্ড আম্পায়ারের ভূমিকা পালন করছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি ১৮ সালের নির্বাচন কেন করলো। ২০১৮ সাল থেকে দেশের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। সরকারের জুলুম নির্যাতনও কিন্তু কমে নি। গত বছর থেকে বিএনপি যেভাবে আন্দোলন সমাবেশ করে নিরব গণঅভ্যুত্থান শুরু করেছিলো, সেই নিরব গণঅভ্যুত্থানকে সরব গণঅভ্যুত্থানে রূপ দিতে যে কৌশল নেয়া প্রয়োজন ছিলো, বিএনপি সেটা করে নি। আর এই গণঅভ্যুত্থানকে সরব করতে, প্রয়োজন ছিলো বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া, তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা সবাই মুক্ত থাকতো। নির্বাচনের দিন যদি সরকার কোনো নিয়ম কানুন না মেনে কারচুপি করতো তখন ভোটকেন্দ্র ঘিরে যে বিদ্রোহ জ্বলে উঠতো তা থামানোর ক্ষমতা সরকারের থাকতো না। তখন বিদেশীরা বাধ্য হয়ে নির্বাচন বাতিল করতো। গণঅভ্যুত্থানকে সম্পূর্ণ করতে, সরকারের বিরুদ্ধে আমার উচ্চকণ্ঠ জারি রাখতে আমি নির্বাচনে এসেছি। আন্দোলন ও নির্বাচনে আসা ছাড়া একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় আসার আর কোনো রাস্তা নেই। বিদেশীরা যেভাবে নির্বাচন মনিটরিং করছে, আমি মনে করি এবার আর ১৪ কিংবা ১৮ এর নির্বাচনের মতো নির্বাচন করতে পারবে না। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আমি দলের বাইরে যাই নি, দল আমাকে বাইরে ঠেলে দিয়েছে। একটা ভুল বুঝাবুঝির কারণে দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়, স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছি।
আমাদের এই অঞ্চলে ১৫-২০ বছর ধরে মানুষ ভোট ই দিতে পারে নি। আমি জনগণকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে নির্বাচনে এসেছি। বাংলাদেশের এই দূর্যোগের সময়ে আমি মনে করি আওয়ামীলীগের সাথে লড়াই করতে হলে সামনাসামনি করতে হবে। আমি এমপি হলে, হিরু-হূমায়ুনসহ যারা গুম হয়েছে তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে দেশীয় না হয় আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত হওয়ার কথা আমি সংসদে বলবো।
বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেরাই বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। অথচ এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। অথচ আওয়ামী লীগের লোকেরা চর দখলের মত কামড়াকামড়ি করতেছে। রাজনীতি হচ্ছে আদর্শ ও কৌশলের ব্যাপার। নির্বাচন না করলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের নির্বাচনের ট্রেনকে গতিরোধ করা কঠিন। তবে আমি কোনো কিংস প্রার্থী নয়, আমি জনগণের প্রার্থী।
আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, ৮-১০ টা বহিষ্কারের মতো সাধারণ বহিষ্কার নয়। বেগম জিয়া নিজেও আমাকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে দলের হাই কমান্ডকে বলেছে, কিন্তু সেটা কেউ মানে নি। আমাকে যদি আবারো তারা দলে ফিরিয়ে নিতে চায়, তাহলে সেটা নির্ভর করবে আমার সম্মানের ক্ষতিপূরণ কিভাবে দিবে তার উপর। সাধারণ ভাবে প্রত্যাহার করে নিলে আমি সেটা মানবো না। কারণ, এটা আমার রুটিরুজি নয়।
এখন আমার বড় কাজ, আমার এলাকা বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার জনগণের চাহিদার কথা ভেবে কাজ করা। এলাকায় গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করা। বিগত দিনে যারা ছিলেন তারা সেভাবে এলাকার জন্য কাজ করতে পারে নি। আমি আমার এলাকার উন্নয়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য কাজ করবো। আর, এলাকায় মাদকরোধ করতে হবে। আমি মাদককে ঠেকাতে কাজ করবো। মাদক ব্যবসায়ীদের বিকল্প কর্মসংস্থান করতে পারলেই মাদককে রোধ করা সম্ভব হবে।