অনেক স্মৃতি,কত কথা-শত আনন্দ – রেজাউল করিম শামিম

ছোট্ট ভ্রমন
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

 সময় খুব ভালো যাচ্ছিলোনা।একঘেয়ে জীবনযাপন।যাপিত জীবনের নিরানন্দ এড়ানোর চেষ্ঠাতো করতে হয়।আর তাই ঘোরাঘুরি।সেই চেষ্ঠায় বাইরে যাওয়া ভ্রমনে জন্যে।নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।আর তার রাজধানী আগরতলা।আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনেক গুরত্বপূর্ন স্মৃতি জড়িয়ে আছে আগরতলাকে ঘিরে।আমার বাড়ি কুমিল্লা শহরে।ফলে শহর থেকে সহজেই বিবির বাজার ইমিগ্রেশন পার হওয়া যায়।আগরতলা যাওয়া-আসা করাও সহজ। আগরতলার সাথে আমাদের ঐতিহ্য,সংস্কৃতি,আবহাওয়া,ভাষা,আচার-আচরনের নৈকট্যও বেশী।এমনকি গোমতীও আমাদের দু’শহরের অভিন্ন নদী।

প্রতিবেশীর বাড়ীতে যাওয়ার মতো করেই অনেকবার গেছি আগরতলা।ফলে সেখানকার লোকজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা,তাদের ঘিরে কাটানো স্মৃতিও অনেক। তবে শেষবার আগরতলা ঘুরে আসার একান্ত নিজস্ব  স্মৃতিময়তায় ঘেরা সময়ের কিছুটা শেয়ার করছি।

ইমিগ্রেশনের ঝুটঝামেলা॥ অনেকদিন আগরতলা যাওয়া হয়নি।ভিসাও ছিলো।তাই ঘনিষ্ঠজন খাদি ভবনের সানাইসহ সেদিন হঠাৎই বিবির বজার চেকপোষ্ট দিয়েই আগরতলা গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কুমিল্লার ইমিগ্রেশনের বিড়ম্বনা মনে থাকবে দীর্ঘদিন।আমাকে জানানো হলো, আমার পাসপোর্ট নাম্বারটি নাকি অন্যকোন মামলাযুক্ত পাসপোর্টের সাথে ট্যাগ হয়ে গেছে।ফলে তাদের কেন্দ্রীয় সেলের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যার সুরাহা করার চেষ্ঠা করা হচ্ছে।সময় যায়।তাদের যোগাযোগ,কথাবার্তা চলতে থাকে। পরিস্থিতির পরিবর্তন নেই।আমিতো ভেবেছিলাম আমার আর এযাত্রায় বুঝি যাওয়া হচ্ছে না।ফিরে যেতে হবে ঢাকায়।তা যাক ঘন্টা দেড়েক পর সমস্যার সমাধান হলো।এর ফাঁকে চাবিস্কুটও এলো।সিলছাপ্পর মেরে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়া হলো।কাষ্টমস বা বিজিবির কাছে তেমন কোন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। তবে প্রচুর পরিমানে বিজিবি,RABসহ অন্যান্যবাহিনীর লোকজন ছিলো।আগে এমনটি দেখা যায়নি।

অন্তরের আন্তরিকতার স্পর্শ!! বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন দল বা সরকার নয়।জনগনের সাথে জনগনের সম্পর্কের বিষয়টির উপর গুরত্ব দেয়ার কথা শুনছি অনেকদিন ধরে।ইদানিং একটু বেশীই শোনা যায়।কথাটি আমারো খুব পছন্দের।কিন্তু,এটা শুধু বলার জন্যে বলা বা কূটনৈতিক ভাষ্য না হয়ে,বাস্তব হওয়াটাই জরুরি।তবে আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ত্রিপুরার জনমানুষের সাথে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার চেষ্ঠা আমার বরাবরই  রয়েছে।এক্ষেত্রে আমি সংস্কৃতিম মনমানসিকতার মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকি সবসময়ঐ।তারই ধারাবাহিকতায় এবার আগরতলা গিয়ে বিষয়টি আরো গভিরভাবে অনুভব করা গেলো।

আমি ও সানাই আগরতলায় গেছি খবর পেয়ে মৌসুমী আমাদের নিমন্ত্রন করে তাদের বাসায়।মৌসুমীর পুরো নাম মৌসুমী কর।সে জনপ্রিয় কবি,আকাশবানী আগরতলাসহ স্থানীয় ইলক্ট্রনিকস নিউজ পোর্টালের উপস্থাপক-সংঞ্চালক।এছাড়াও সে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথেও জড়িত।মোটকথা সেখানকার অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পরিচিত মুখ।মৌসুমী,আগরতলার একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান।তার প্রয়াত পিতা,ত্রিপুরা রাজ্যের প্রখ্যাত সাংবাদিক মৃণালকান্তি কর।আর মাতা ছবি দেববর্মা ছিলেন,মিউজিক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, অধ্যক্ষ পুলিন দেববর্মা।

সেদিন মৌসুমীদের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক বাসভবনে গিয়ে আমাদেরতো বিস্ময়ের শেষ নেই।সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন,সবিতা স্মৃতি মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক,অবসর প্রাপ্ত সরকারি শিক্ষক,বিশিষ্ট কবি এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেবনাথ,কবি মৃণাল কান্তি পন্ডিত,সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব কৌশিক ভৌমিক, কবি,সাহিত্যিক,শিক্ষক,বাচিক শিল্পী নন্দিতা ভট্টাচার্য,বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সঞ্জীব রায় চৌধুরী প্রমুখ।

আমার জন্যে বিস্ময়কর এবং কিছুটা বিব্রতকর ছিলো তাদের আন্তরিক আনুষ্ঠানিকতা।রীতিমত পুষ্পস্তবক দিয়ে স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে উত্তরীয় পড়িয়ে দেয়া এবং আমাদের সাহিত্য,সংস্কৃতি আর সামাজিক সম্পর্কের অতীত ও বর্তমান নিয়ে আলোচনা।এর ফাঁকে ছিলো বৈকালীক চা-নাস্তা।আর নৈশভোজ হিসাবে মৌসুমীর তৈরী ‘বাসন্তী পোলাও’।

এখানেই শেষ নয়।শেষাংশে ছিলো মৌসুমীর দু’টি কবিতার বই ‘তোমাকে ছুঁয়ে গোধূলি এসেছে’ এবং ‘বিচিত্র ককটেল’ উপহার।সেসাথে কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মৈত্রী সংসদ’এর প্রকাশিত আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থটি আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেয়া।গ্রন্থটিতে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রফেসার ড.আলী হোসেন চৌধুরীর একটি গুরত্বপূর্ন গবেষণালদ্ধ প্রবন্ধও রয়েছে।দু’টি প্রতিবেশী দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার এমনি অসাধারণ উদাহরণ দীর্ঘদিন মনে থাকবে।

লেখক : সাবেক সভাপতি,কুমিল্লা প্রেস ক্লাব