আইনবর্হিভূত বহিষ্কার শুধু মেধা ও আইনের প্রতি অসম্মানই নয় বরং দণ্ডনীয়ও বটে

প্রেক্ষাপট : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি ।।
প্রকাশ: ১২ মাস আগে

গত সপ্তাহে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে আইনবর্হিভূত বহিষ্কার সারাদেশে আলোচনায় জন্ম দিয়েছে। দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ আইনের প্রতি নিজেদের জ্ঞানের দেউলিয়াত্ব দেখিয়েছে। ঘটনার জন্ম গত ৩১ জুলাইয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক এএফএম আবদুল মঈন এক বিভাগের আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন। সেখানে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। তিনি দুর্নীতি ও উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের ইকোনমিক মবিলিটর কথা বলেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের ভুল বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই তো উন্নতি হচ্ছে’। দৈনিক যায়াযায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ার (রুদ্র ইকবাল) বিষয়টি পত্রিকায় তুলে ধরেছেন। আমরা উপাচার্যের বক্তব্যের রেকর্ড শুনেছি। তাতে তিনি দুর্নীতিকেই সমর্থন করেছেন। এতে ক্ষুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে। এখানে একটি কথা বেশ শোনা যাচ্ছে, সাংবাদিক আগে নাকি শিক্ষার্থী আগে। ওই শিক্ষার্থী ও সাংবাদিককে কেন তাকে বহিষ্কার করা হলো তা অপরিষ্কার।
গত ২ আগস্ট রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই বহিষ্কারাদেশে বলা হয়েছে, ‘গত ৩১ জুলাই, ২০২৩ ইং তারিখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ‘নবীন বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠান’ এ মাননীয় উপাচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈন এর বক্তব্যকে বিকৃত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্ত্রমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সুপারিশ অদ্য ০২/০৮/২০৩ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের সভায় অনুমোদিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।’ আদেশে কোনো দাঁড়ি, কমা নেই। ফলে এক শ্বাসে পড়বেন। এই আদেশ পরিপূর্ণভাবে আইনবর্হিভূত। তা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আবার ক্রিটিক্যাল থিংকার হওয়ার প্রয়োজন হবে না। খালি চোখেই বোঝা যায়। এখানে বলা হয়েছে, বক্তব্যকে বিকৃত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃত কিভাবে করা হয়েছে? উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিভাবে পরিমাপ করা হয়েছে? উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তো পরিপূর্ণভাবে একটা আপেক্ষিক বিষয়। যিনি বক্তব্য দিয়েছেন তিনি বা কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যের গন্ধ পেলেও যিনি লিখেছেন তিনি তো সে উদ্দেশ্য নিয়ে নাও লিখে থাকতে পারেন। তিনি তার কাজ করেছেন। কি মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়েছে? প্রকাশিত বক্তব্যে কোনো মিথ্যা কিছুই তো নেই। উপাচার্যের বক্তব্যের রেকর্ড অন্তত তাই বলছে। তাহলে মিথ্যা তথ্য কিভাবে হলো। শিক্ষার্থী তথ্য প্রচার করেছেন কোথায়? বিশাল একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরও বিশাল। আপাতত একটু পরেই না হয় বলা যাবে। এখানে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্নের কথা বলা হয়েছে। সুনাম কিভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে? তাতে নাকি উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবার বলাও হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। এই তিনটি বিষয় এক সূত্রে গাঁথা। যা হোক, অজ্ঞতায় কিনা হয়!
প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ের সভায় অনুমোদিত হয়েছে বহিষ্কারের বিষয়টি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রক্টরিয়াল বডিকে কি ক্ষমতা দিয়েছে, কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এমন প্রতিবেদন দেয়ার, কীসের সেই ভিত্তি? আর উচ্চ পর্য়ায়ের সভাই বা কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে তো এমন কোনো উচ্চ পর্যায়ের সভা নেই। তাহলে কি চা বা শরবতের আড্ডায় এমন সভার বিষয়টি মাথায় এলো? বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও বিধিতে স্পষ্টভাবে কর্তৃপক্ষের সব অংশিদারদের ক্ষমতা ও কার্যক্রম কি হবে তা উল্লেখ আছে, বিধিতে আছে, অর্গানোগ্রামও আছে। আশা করি ক্রিক্রিট্যাল থিংকারবৃন্দ আইন, বিধি ও অর্গানোগ্রামের পার্থক্য বুঝবেন। কী জানি, অনেকে আবার অফিস আদেশ, পরিপত্র, প্রজ্ঞাপনও গুলিয়ে ফেলেন। আমার আবার এমন হয় না। কারণ বুঝি কম, ক্রিটিক্যাল থিংকিং নেই। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আইন ও বিধির প্রক্রিয়া অনুসরণ আবশ্যক। এর বাইরে কোনো ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের (দুঃখিত, এই শব্দ দুটি অনেক পাওয়া যাবে। ঘটনার ক্রমধারায় যারা নজর রেখেছেন তারা কারণ বুঝতে পারবেন) সুযোগ নেই। একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে তার উপরে নির্ভর করে কর্তপক্ষের প্রক্রিয়া। যেমন ধরুন, কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করলে তাকে বহিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রক্টরিয়ার বডির কাজ নেই। এটা বিভাগের সুপারিশে ডিন কমিটি হয়ে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট করবে। একটা কথা, শিক্ষার্থীর অভিভাবক ডিন, তিনি যে অনুষদের শিক্ষার্থী, তার অভিভাবক ওই অনুষদের ডিন। ডিনই তার একাডেমিক প্রধান। যা বলছিলাম, ব্যবস্থার ধরণের ভিন্নতা ও মাত্রা অনুযায়ী প্রক্রিয়ার ভিন্নতা থাকে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো অভিযোগ এনে কাউকে বহিষ্কার করতে হলে শুরুতে তদন্ত কমিটি করতে হবে, অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে তদন্ত হবে, শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ লাগবে, একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশশেষে সর্বোচ্চ পর্ষদ সিন্ডিকেট অনুমোদন করলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ প্রতিপালন করবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে কথা থাকে, জরুরি পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে বহিষ্কার, বরখাস্ত বা কোনো ধরণের শাস্তির ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতিতেও সিন্ডিকেট এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কেননা এটি একটি বিচার। বিচার কখনই জরুরি পরিস্থিতিতে জরুরিভাবে চোখে-নাকে হয় না। আদেশ থেকে কয়েকটি শব্দ রেখে দিয়েছিলাম। মনে আছে? যেমন সুনাম ক্ষুণ্ন, উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গ। এই সব ক্ষেত্রে হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া প্রমাণ বা কথা বললে চলবে না। অকাট্য প্রমাণ থাকতে হবে। সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার পরিমাপ কিভাবে হয়েছিল? শৃঙ্খলা ভঙ্গ তো উচ্চমার্গীয় বিষয়। অপরাধের সংঘটিত করলে পরেই না এসব বিষয়গুলো আসবে। কিন্তু এমন কি কোনো ঘটনা ঘটেছিল? কোনো উত্তর নেই।
আর সাংবাদিককে লেখার কারণে বহিষ্কার! সাংবাদিকতার জন্য শিক্ষাকার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা যায় কি? ওই সাংবাদিক যে প্রতিবেদন লিখেছেন বলে বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন, তার বিষয়বস্তু কারোর-ই অজানা নয়। পাবলিক একটি অনুষ্ঠান। রেকর্ড হাতে হাতে। ধরে নিলাম, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে, কিন্তু ওই প্রতিবেদন যদি শিক্ষার্থী না লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেউ লিখতেন তাহলে প্রশাসন কি তাকে বহিষ্কার করতে পারতো? সুযোগ কি আছে? নেই। তাহলে প্রক্রিয়া কী? সুস্পষ্ট। কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হতেই পারেন। তখন তিনি ওই পত্রিকার কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবাদ পাঠাবেন। ডাকযোগে, তাও আবার অফিসিয়াল প্যাডে। ন্যূনতম সাত দিনের মতো সময় সাধারণত দেয়া হয় প্রতিবাদ প্রকাশের জন্য। এরপরও সুযোগ রয়েছে প্রেস কাউন্সিলে মামলা করার। আইনগত বহুবিধ আশ্রয়ের সুযোগ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির রয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের দায়ভার সম্পাদক, প্রকাশকের। কেননা প্রত্রিকায় প্রকাশ করেন তার কর্তৃপক্ষ। ইকবালের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সরাসরি বহিষ্কার করেছে। এখন আবার উপাচার্য বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন, তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি হয়েছে, সেখানে দোষী প্রমাণিত না হলে তার বহিষ্কারাদেশ উঠিয়ে নেয়া হবে। তবে প্রশ্ন হলো, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন কীভাবে করলো, কোন আইনে। কেননা তারা তো পত্রিকায় লেখার জন্য করেছে। যদিও প্রক্টর গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা কোনো সাংবাদিককে বহিষ্কার করেননি, শিক্ষার্থী বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শিক্ষার্থী বহিষ্কার করা হয়েছে কেন? প্রতিবেদন লেখার জন্যই তো বহিষ্কার করেছেন। তাহলে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে একাডেমিকভাবে বহিষ্কার কীভাবে হয়? উপাচার্যের কাছে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছেন, তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর নিয়েই করেছেন। তারা এমন প্রক্রিয়ায়ই করে থাকেন। কী আজব বিষয়! এ তো ভয়ানক কথা! অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়টি তাহলে এমন আইনবর্হিভূত কাজ করেই আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেমন যেন, আক্রোশে এই কাজ করেছে। মাত্র দুইদিন দুই রাতের মধ্যে। চুপে-চাপে। কর্তারা চা চক্রে বসেছেন, করে দিয়েছেন। এখন কোনো উত্তর নেই। গায়ের জোরে গাউরামি। ওই উচ্চ পর্যায়ের সভা নাকি সিন্ডিকেট সদস্যদের নিয়ে করা হয়েছে। ধরুণ সদস্যদের দল কোথাও বেড়াতে গেলে, মনে হলো একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে দিলেন। নূন্যতম আইনের ভিত্তি যে থাকা প্রয়োজন তা নেয়ার প্রয়োজনই মনে করলেন না। কেউ কেউ আবার বলছেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়ের কথা। এখানে তো এমন কোনো বিষয়ই হবে না। অপরাধই হয়নি, সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থন হয় কীভাবে? আগে তো অপরাধ খুঁজে বের করে, প্রমান পেয়ে তবেই না আত্মপক্ষ সমর্থন। কথার পিঠে কথা, প্রশ্নের পরে প্রশ্ন। কিন্তু কোনো উত্তর নেই।
এবার আসুন, সাংবাদিক আগে নাকি শিক্ষার্থী আগে। আসলে এখানে আগে বা পরেরই তো কোনো বিষয় নেই। যেসব শিক্ষার্থী সাংবাদিকতা করেন সেটা তাদের চাকরি। তিনি সাংবাদিকতার দায়িত্বে। এক মানুষ, ক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা। এই সহজ বিষয়টি ক্রিটিক্যাল থিংকিং যারা করেন তারা বুঝতে পারলেন না! সেই ডিম আগে, নাকি মুরগী আগে, এমন একটি বিষয়ে পড়ে আছেন। তবে শিক্ষার্থী নাকি সাংবাদিকের বিষয়ে ডিম বা মুরগীর মার্কা কোন তুলনা নেই। সাংবাদিকতার জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা যায় না। এমন কোনো সুযোগ কোনোভাবেই আইনে নেই। যারা আইনবর্হিভূত বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠা করতে চিৎকার করে যাচ্ছেন তাদের আরো একটু পড়াশুনা থাকা উচিত। নয়ত কখন দেখবেন, কাঠগড়ায় চলে গেছেন। একটা কথা বলা হয়, উপাচার্য দুর্নীতি নিয়ে বললে তিনি ক্রিটিক্যাল থিংকিং (শব্দের উদ্দেশ্য এবার বুঝা গেছে আশা করি) বলতে গিয়ে উদাহরণ টেনেছেন। তার পুরো বক্তব্য এমন নয়। মুশকিল হলো, ফেইসবুককে গণমাধ্যম মনে করলে তো সমস্যা। কেননা যে থিংকিংই বলা হোক না কেন, অন্যায় ও দুর্নীতিকে উদ্ভুদ্ধ করে এমন বক্তব্য দেয়া যায় না। বরং যিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন তিনিই অপরাধী। আর ৫০ মিনিট বা তার বেশি সময়ের বক্তব্য থেকে সাংবাদিক কোন অংশটুকু নিবে সেটা তার বিষয়। এখানে তো কোনো ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের সুযোগ নেই। অনুষ্ঠানে বক্তাদের লম্বা বক্তব্য থেকে চুম্বক অংশটুকু নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে গণমাধ্যম। ফলে একই অনুষ্ঠান হওয়ার পরও পত্রিকার খবর ভিন্ন ভিন্ন হয়। ওই অনুষ্ঠানে উপাচার্য যা বলেছেন সেখান থেকে চুম্বক অংশটুকু নিয়েছিলেন ওই সাংবাদিক। নিজের কোনো মতামত সেখানে তিনি দেননি। কেননা প্রতিবেদকের সেই সুযোগ নেই। বলা হয়েছে, উপাচার্য যে ধারণায় বলেছেন তা সাংবাদিক বুঝতে পারেন নাই বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন লেখেছেন। আমার কথা হলো, এত বোঝার তো প্রয়োজন নেই। সাংবাদিক দেখবে সত্য কিনা? ওই বক্তব্য তিনি দিয়েছেন? হ্যাঁ, দিয়েছেন। তাহলে তো আর কিছুই বলার থাকে না। আপনি কি ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ে বলেছেন সেটা আপনার বিষয়। সাংবাদিক কোনো থিংকিংয়ে না গিয়ে লিখেছেন। তিনি তার কাজ করেছেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের স্বঘোষিত নেতারা (এদের সবাই সুবিধা ভোগী বলে বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে) উপাচার্যের অন্যায়ের গুনগান গাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বুঝে অন্যায়ের সমর্থন করছেন নাকি না বুঝে করছেন। যদি না বুঝে করেন তবে বুঝতে বাধা নেই। আর যদি বুঝে করে থাকেন তবে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। এখনও সময় আছে ওই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়ে কর্তৃপক্ষ ক্ষমা প্রার্থনা করুক। না হয় উচ্চ আদালতের দারস্থ হলে তখন কিন্তু কোনো থিংকিংয়ে কাজ হবে না। কেননা আদালত কথা বলে আইনের ধারায়। সেখানে কর্তৃপক্ষ কোনো উত্তর দিতে সমর্থ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কেননা মিথ্যা ও অন্যায়ের সামর্থ যে শক্তিহীন তা কালে কালে প্রমাণিত।

লেখক: মো, মতিউর রহমান। সাবেক সভাপতি, কুমিল্লা বিশ্বদ্যিালয় সাংবাদিক সমিতি (কুবিসাস)।
ই-মেইল: mdmotiurrahman17@gmail.com