উজ্জ্বল আঠারোতে লাল মাটির কুবি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে উঁচু-নিচু টিলা ও টিবি। মাঝখানে আঁকাবাঁকা পথ। লাল-মাটির মাঝে সবুজের সমারোহ। প্রত্নবস্তুতে ভরপুর এই লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় (কুবি) আজ ১৮ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে।
কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে শালবন বৌদ্ধ বিহারের পাশে স্থাপিত ৫০ একরের এই ক্যাম্পাস ভূপ্রকৃতিগতভাবেই নান্দনিক হওয়ায় প্রায়ই এখানে দেখা মেলে শত শত পর্যটকের। বিশ^বিদ্যালয় সম্প্রসারণের জন্য ২০১৮ সালে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে প্রায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। একইসাথে চলছে অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজও। এ প্রকল্প শেষ হলে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়।
জানা যায়, খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে অষ্টম শতকে চন্দ্রবংশীয় রাজা ভবদেব শালবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময় জ্ঞানচর্চায় এটি এশিয়ার অন্যতম পাদপীঠ ছিল। বিশে^র বহুদেশের মানুষ এখানে জ্ঞানচর্চার জন্য আসতেন বলে বিশেষজ্ঞরা একে বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে অবহিত করেন। এরই পরিপ্রক্ষিতে গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এ অঞ্চলে একটি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোর দাবি ওঠে। তবে বিভিন্ন কারণে সেটি প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে। ফলে বঞ্চিত থেকে যায় এ অঞ্চলের অধিবাসীরা।
১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কুমিল্লায় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। তবে সে পরিকল্পনা আর আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্থানীয় এক জনসভায় কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ২৮ মে কোটবাড়ির সালমানপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়। দেশের ২৬ তম এ সরকারি বিশ^বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ঠিক একবছর পর ২০০৭ সালের ২৮ মে। বর্তমানে এ বিশ^বিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীন ১৯টি বিভাগে ৭ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। তাঁদের জন্য রয়েছে ৩টি পুরুষ ও ২টি নারী আবাসিক হল। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে দু’টি ডরমিটরি এবং একটি গেস্ট হাউজ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ধ্যুতি ছড়িয়ে আসছেন কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘থিয়েটার’ ‘প্রতিবর্তন’, ‘অনুপ্রাস’, ‘প্লাটফর্ম’, ‘সায়েন্স ক্লাব’, ‘ডিবেটিং সোসাইটি’, ‘বন্ধু’ ও ‘সাংবাদিক সমিতি’সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।
‘রাজনীতিমুক্ত’ ক্যাম্পাসে সম্প্রতি কয়েকগুন বেড়েছে রাজনৈতিক উত্তাপ। গত এক বছরে ছোট-বড় অন্তত ১০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষার পরিবেশ সুষ্টু রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা দরকার। এছাড়া অপ্রতুল বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী নামে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নেতিবাচক বিভিন্ন ঘটনায় সংবাদের শিরোনাম হয়েছে কুবি। এসব বিষয়ে প্রশাসনের সচেষ্ট হওয়া দরকার। এছাড়া গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের খাবারে ভর্তুকি প্রদান, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণসহ শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা আরও উন্নত করলে শিগগির কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছতে পারবে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়।
শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, বিগত ১৭ বছরে গর্ব করার মতো আমাদের অনেক সাফল্য আছে। এরপরও সনদ অর্জনের বাইরে নির্দিষ্ট বিষয়াবলি শিখে যোগ্যতম হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা দরকার শিক্ষার্থীদের। এছাড় অন্যের ভাষায় কথা বলা ও অন্যকে খুশি রাখার চেয়ে তাঁদের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব বা স্বর তৈরি দরকার। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখানোর কাজটা করবে। ব্যষ্টির চেয়ে সামষ্টিক প্রয়াস ও হিতবাদিতার সমন্বয় ও সুষম মিশ্রণ ঘটালে দেশ ও দশের সম্পদে পরিণত হবে এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও এ পরিবারের সদস্যরা।
১৮তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সে ধারা অব্যাহত থাকবে। এ প্রচেষ্টায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদেরও আমরা পাশে চাই। ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিক কোলাবরেশনের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাক্সিক্ষত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা সবাই মিলে কাজ করব-প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।