কুমিল্লার টেকসই পরিকল্পিত নগরায়ন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন যোগ্য সেবক

জাহিদ হাসান নাইম ।।
প্রকাশ: ২ মাস আগে

‘কুসিক নির্বাচন: কেমন মেয়র চান গণমাধ্যম কর্মীরা’ বিষয়ক টক-শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে কুমিল্লা আল নূর হসপিটালের সৌজন্যে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিনের যৌথ উদ্যোগে এ টক-শো অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক, সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক শাহাজাদা এমরানের সঞ্চালনায় ১০৭ তম পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যমুনা টেলিভিশনের ব্যুরো চীফ খোকন চৌধুরী, বৈশাখী টেলিভিশনের কুমিল্লা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন, এখন টেলিভিশনের ব্যুরো চীফ খালেদ সাইফুল্লাহ ও দৈনিক কালের কণ্ঠের কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমান।
এসময় টক-শোতে আসন্ন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে খোকন চৌধুরী বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে আমিও অন্যান্য নগরবাসীর মতো একজন সৎ, যোগ্য ও যারা সত্যিকার অর্থে নগরবাসীর কল্যাণে কাজ করবে এমন মেয়রই চাই। জলজট ও যানজট এখন যেন নগরবাসীর নিত্য ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না বা যতটুকু হচ্ছে সেটাও পরিকল্পনামাফিক হচ্ছে কিনা সন্দেহ। কারণ, উন্নত দেশগুলো ৫০ বছর পরের চিন্তা করে কাজ করে, কিন্তু বাংলাদেশ ১০ বছরের পরিকল্পনা করেও কাজ করে কিনা এই বিষয়ে সন্দিহান আমি। যেকোনো কাজ করলে, একবার কাজ করার কিছুদিন পরেই আবার কাজ করা লাগে। এগুলো থেকে পরিত্রাণ এনে দিবেন এমন একজন মানুষ আমরা মেয়র হিসেবে চাই। গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে, সুষম বন্টনের কথা আমি বলতে পারি না। আর টেকসই উন্নয়নের কথা বললে আমি বলবো, রাস্তা সম্প্রসারণের যে কাজ হচ্ছে সেখানে যদি রাস্তা বাড়ানোর পাশাপাশি বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোও সরানো যেতো তাহলে সেটাকে টেকসই উন্নয়ন বলা যেতে পারে। আমার একটাই প্রত্যাশা, আগামীবারে যিনিই মেয়র হবেন তার কাছে আমার অনুরোধ সাধারণ মানুষের শ্রম ও ঘামঝরানো টাকাগুলো যাতে বিফলে না যায়। সিটি কর্পোরেশনে যে বাজেটগুলো হয়, সে বাজেটগুলো নেওয়ার আগে সেগুলো পরিকল্পনামাফিক বাজেট হয় না। এই কারণে একটি বিশাল অংকের বাজেট এসে আবার ফিরেও গিয়েছে গত মেয়র আসনে থাকাকালীন। এখানে, আমি মেয়রের প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবের কারণে এমন হয়েছে বলতে পারি। যারাই মেয়র হন, তারা নিজেদেরকে নগরপিতা বা নগর কন্যার চাইতে যদি নগর সেবক হওয়ার মন মানসিকতা নিজেদের মধ্যে আনতে পারেন, তাহলেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে একজন সৎ, যোগ্য মেয়রকেই আমি চাইবো, যিনি জনগণের জন্য কাজ করবেন। সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স একবার বিপুল অংকে বাড়িয়ে আবার সেটা সিটি কর্পোরেশনে গেলে কমিয়ে দেওয়া হয়। এটা আমার দৃষ্টিতে ঠিক নয়। নাগরিকদের সাথে আলোচনা করে একটা নির্দিষ্ট অংকে সেই হোল্ডিং ট্যাক্স নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, কুমিল্লা নগরীতে ইজিবাইক পরিবহনের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছেই। এতে করে দূর্ঘটনা অহরহ হচ্ছে। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগি। আগামীতে যিনিই মেয়র হবেন, তিনি যেন এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেন৷ এছাড়াও, নগরীতে প্রকাশ্যে টোকেন পদ্ধতিতে যানবাহন থেকে টাকা আদায় করছে। এগুলো শ্রমিক সংগঠগুলোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এই শ্রমিক সংগঠনগুলোর পৃষ্ঠপোষক কে বা কারা এটা সবারই জানা। জনপ্রতিনিধিরা যদি উদ্যোগ নেন, তাহলেই এটা বন্ধ করা সম্ভব হবে। গোমতি নদীর তীর ঘেঁষে যাতে বিনোদনকেন্দ্র তৈরী করা হয়, সেটাও আগামীর মেয়রের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।
খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, একজন দূরদর্শী মানুষকেই আমরা মেয়র হিসেবে চাইবো। মেয়র যদি একটি চেয়ারে বসার জন্যই নির্বাচিত হন, তাহলে আগের মতোই হবে। আমরা টাকা পাচ্ছি, বাজেট আসছে, উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু, টেকসই উন্নয়ন আমরা পাচ্ছি না। সকল নাগরিক সুবিধা থেকেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। পরিচ্ছন্ন সিটি কর্পোরেশনের আমরা স্বপ্নই দেখি। আমি মনে করি, যারা সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্ব দেন, এটা তাদের গাফিলতির কারণেই হয়েছে। এছাড়া, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিশৃঙখলার কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমিসহ আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও এর ভুক্তভোগী। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে গেলে, তারা বলেন এই বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি বলবো, আগামীতে যিনি মেয়র হবেন তিনি যাতে এই বিষয়গুলোকে কঠোর হস্তে দমন করেন। জলাবদ্ধতা কুমিল্লার আজীবনের সমস্যা। খালগুলো যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা হতো তাহলে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যেতো। কিন্তু, এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন যা বিগত কোনো মেয়রের কাছ থেকে আমরা পাইনি। যারা মেয়র হওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা আগে তাদের পরিকল্পনাগুলো নগরবাসীকে দিক। তাহলে নগরবাসী সিদ্ধান্ত নিবে কাকে নির্বাচিত করবে। আর, ইপিজেডের যে বর্জ্য সেগুলো অপসারণেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এই বিষয়েও পরিকল্পনা নিতে হবে। নগরবাসীর দূর্দশাগুলোর কথা মাথায় রেখে আগামীর মেয়র কাজ করবেন সেটাই চাইবো আমি।
আবদুর রহমান বলেন, নগর পিতা বা নগর কন্যা নয়, আমাদের একজন নগর সেবক দরকার। গতবারে যিনি মেয়র ছিলেন, তিনি কথা দিয়েছিলেন বেশ কিছু৷ সেগুলো পূরণ হয় নি৷ কুমিল্লা নগরীতে যে ভবনগুলো নির্মাণ হচ্ছে, সেগুলো পরিকল্পনামাফিক হয়নি৷ যে উন্নয়নমূলক কাজগুলো হচ্ছে, সেগুলো যদি পরিকল্পনামাফিক করা যায়, তাহলে আমাদের কুমিল্লা নগরী উন্নয়নের নগরী হবে বলে আমি আশা করি। এছাড়াও, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন একটি অস্বাস্থ্যকর সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশন আবর্জনা অপসারণের জন্য বাজেট হলেও সেটি নিয়ে এখনো কাজ শুরু হয়নি। এক্ষেত্রে নাগরিকদের ভূমিকা থাকবে। তারা এমন একজন নগর সেবককে বেছে নিবেন, যিনি নগরের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হবেন। পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। এছাড়াও, পুরাতন গোমতিকে হাতিরঝিলের আদলে তৈরী করার কথা থাকলেও তা আজো বাস্তবায়িত হয় নি। এটা বিগত মেয়রদের ব্যর্থতা। এই জন্য সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে। আমি একজন তরুণ সাংবাদিক হিসেবে প্রত্যাশা করবো সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত নগরী গড়বে আগামীর মেয়র।