উপস্থিতি কম থাকায় পরীক্ষায় বসতে পারেননি ৪ শিক্ষার্থী

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুবি প্রতিনিধি

নির্দিষ্ট একটি কোর্সে মোট ক্লাসের ৪০ শতংশের কম উপস্থিতি থাকায় ¯œাতকোত্তর চূড়ান্ত সেমিস্টারের পরীক্ষায় বসতে পারেননি কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের চার শিক্ষার্থী। রোববার ওই বিভাগের ¯œাতকোত্তর ২০২০-’২১ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র উপস্থিতির কারণে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার নিয়মের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী কোনো কোর্সের মোট ক্লাসে ৪০ শতাংশের কম উপস্থিতি থাকলে ওই শিক্ষার্থী সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। এক্ষেত্রে সাধারণত পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের সাথে পরীক্ষা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। শুধুমাত্র উপস্থিতির কারণেই শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি বছর বাদ পড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই চার শিক্ষার্থী ২য় সেমিস্টারের অন্য সকল কোর্সে উপস্থিতির শর্ত পূরণ করতে পারলেও ‘গভর্নেন্স ইস্যুস অ্যান্ড প্রবলেমস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কোর্সে তা পূরণ করতে পারেননি। ওই কোর্সের ক্লাস নিতেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমীন। ভুক্তভোগীদের একজন মাতৃত্বপরবর্তী জটিলতার কারণে ক্লাস করতে পারেননি। তিনি এ বিষয়ে আগে থেকেই বিভাগে চিঠি দিয়ে রেখেছিলেন বলে দাবি করেন। এক শিক্ষার্থীর মা ও আরেক শিক্ষার্থী নিজে অসুস্থ ছিলেন। উভয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রসহ অন্যান্য প্রমাণাদি বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে দেখিয়েছেন। অপরজন চাকরিতে যোগদান করায় সকল ক্লাস করতে পারেননি। তাঁরা যথাক্রমে ওই কোর্সে ২০, ৩৫, ৩৫ ও ১০ শতাংশ করে ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন। তবে এতসবের পরও নিয়মের বেড়াজালের কারণে তাঁদেরকে পরীক্ষায় বসতে দেয়নি বিভাগের একাডেমিক কমিটি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর পরীক্ষায় বসতে চাওয়ার অনুমতি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিভাগের একাধিক শিক্ষক মানবিক বিষয় বিবেচনা করে তাঁদেরকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার পক্ষে মত দিলে রোববার পরীক্ষা শুরুর দু’ঘন্টা আগে আবারও একাডেমিক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায়ও তাঁদেরকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
ওই চার শিক্ষার্থীর একজন বলেন, বিভাগ থেকে তাদেরকে অফিসিয়ালি কিছুই জানানো হয়নি। তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফর্মও পূরণ করেছে। এরপর বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের একজনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে পেরে তারা শিক্ষকদেরকে অনুরোধ করলে শিক্ষকরা তাঁদেরকে পরীক্ষায় বসতে দেবেন বলে আশ^স্ত করলেও পরীক্ষা দিতে এসে তাঁরা প্রত্যাখ্যাত হোন।
উপস্থিতির শর্তের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নিয়মটির বিষয়ে প্রায় সময়ই তাঁরা সমালোচনা করে আসছেন। রায়হান খান নামে গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক শিক্ষক একটি ক্লাসেই একাধিক উপস্থিতি দিয়ে থাকেন। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে উপস্থিতির ওপর নম্বর দেওয়ার সংস্কৃতি বাদ দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষকের ক্লাস কোনো শিক্ষার্থীর ভালো না লাগলে সে কেন যাবে। একজন ‘খারাপ’ শিক্ষার্থী শুধুমাত্র ক্লাস করে ৫ বা ১০ নম্বর পেয়ে যাচ্ছেন; আর ‘ভালো’ শিক্ষার্থী ক্লাস না করার কারণে শুণ্য পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অনেকে পরীক্ষায়ই বসতে পারে না। এ নিয়ম বদলানো এখন সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে একজন অধ্যাপকের সাথে কথা বলতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসমুখী করার জন্য। অনেক শিক্ষকই ভালো ক্লাস নিতে পারেন না। উপস্থিতির শর্ত না থাকলে তাঁদের ক্লাসে শিক্ষার্র্থী খুঁজে পাওয়া যেত না। আধুনিক সময়ে এসে এ নিয়ম পরিবর্তন প্রয়োজন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বেলায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটালেও শিক্ষকদের বেলায় পুরোপুরো বিপরীত। নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগেই অ্যাকাডেমি সংক্রান্ত সকল বিষয় থেকে ছুটি দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষার জন্য প্রস্ততির সুযোগ দেওয়া হবে। তবে, যে শিক্ষকের কোর্সে শিক্ষার্থীরা উপস্থিতির শর্ত পূরণ করতে পারেননি, ওই শিক্ষকই এখন পর্যন্ত প্রেজেন্টেশন নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, পরীক্ষা শুরুর পাঁচদিন পূর্বেও তিনি মিডটার্ম নিয়েছেন। একদিন পর অন্য আরেক শিক্ষকও মিডটার্ম পরীক্ষা নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘নিয়ম শুধু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই মানা হয়। শিক্ষকরা আইনের উর্ধ্বে।’
নিয়মানুযায়ী এক সপ্তাহ পূর্বেই ইনকোর্সের ফলাফল প্রকাশ করারও কথা রয়েছে। তবে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলেও ওই কোর্সসহ আরও একটি কোর্সের ফল এখনো পাননি লোক প্রশাসন বিভাগের ওই শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, দুইটা কোর্সের ফলাফল এখনো আমার হাতে আসেনি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সকল কোর্স শিক্ষকরা চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে কোনো সমস্যা নেই জানানোয় আমরা পরীক্ষা নিয়েছি।
আবার ৪ ক্রেডিটের একটি কোর্সে শ্রেণি সময়সীমাভেদে ন্যূনতম ২৮ থেকে ৩৭টি ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও অনেক শিক্ষকই সমপরিমাণ ক্লাস নেন না। ওই শিক্ষকও এর বাইরে যাননি। তিনি ওই কোর্সে ২০ টি ক্লাস নিয়েছিলেন। ওই চার শিক্ষার্থীর দুইজন দাবি করছেন, আর একটি মাত্র ক্লাস নিলেই তাঁদের উপস্থিতির শর্ত পূরণ হয়ে যেত। তবে কোর্স শিক্ষক স্বল্প ক্লাস নিয়েই উপস্থিতির হিসেব করেছেন।
এসব বিষয়ে কোর্স শিক্ষক ড. মো. রুহুল আমীন বলেন, এখানে আমার কোনো হাত নেই। এাঁ একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত। আমি একক কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি।
বিভাগীয় প্রধান ড. মোসা. শামছুন্নাহারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও খুদেবার্তা পঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে বিভাগীয় প্রধানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।