কুবি ছাত্রলীগ নেতা খালিদ হত্যা ৮ বছরেও শেষ হয়নি মামলার তদন্ত কাজ

# আমার ছেলেকে লেখাপড়ার জন্য দিয়েছিলাম, কুবি প্রশাসন # আমাকে ছেলের লাশ উপহার দিয়েছে- নিহতের মা
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল শোকাবহ ১ আগস্ট। ২০১৬ সালের এই দিনে রক্তাক্ত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাস। কুবির ছাত্র খালিদ হত্যা মামলার ৮ বছর পূর্তি হলো। কুবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির মোমবাতি প্রজ্বালনের সময় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের কোন্দলে গুলিতে নিহত হন মার্কেটিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ।
তিনি কবি নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক। দীর্ঘ ৮ বছরেও তাঁর হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। বারবার পরিবর্তন হয়েছে তদন্ত সংস্থা। কখনও আসামি বাদ, কখনও নতুন আসামি যুক্ত, আবার কখনও আদালতে নারাজি দিয়ে তদন্ত সংস্থাই পরিবর্তন– এসব চক্রে কেটে গেছে ৮ বছর। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শোকাবহ আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দ্বিতীয় তলার হলরুমে হামলা ও পরে গুলিতে আহত হন খালিদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। খালিদ দাউদকান্দি উপজেলা শহরের স্কুলশিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় পরদিন কুবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন মজুমদার সদর দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ দিন কুবির ছাত্র ও কুবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র জাহিদুল আলম, লোকপ্রশাসন বিভাগ মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আবুবকর ছিদ্দিক, বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র সুদীপ্ত নাথ, বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও কুবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুপম চন্দ্র দেবনাথ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সজন বরণ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
ঘটনার ৩ দিন পর মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের ছাত্র বিপ্লব চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে সবাই জামিনে মুক্ত। কিন্তু গত ৮ বছরেও মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। শুরুতে মামলাটি তদন্ত করে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। কিন্তু নিহতের মায়ের নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত পায় পিবিআই। কিন্তু পিবিআইর তদন্তেও নারাজির পর মামলার তদন্ত পায় সিআইডি। তাদের অভিযোগপত্রেও নারাজি দিলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে পিবিআই। গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রধান আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই। এতেও নারাজি দেওয়ায় মামলাটি অতিরিক্ত পদমর্যাদার একজন পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
খালিদের মা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে যখন গুলিতে নিহত হয় তখন সেখানে শোকের মাসের অনুষ্ঠান চলছিল। ঘটনা যা ঘটেছে সবার সামনে। গুলি ছাত্রলীগ নেতারাই করেছে, সেখানে ছাত্রদল কিংবা শিবির ছিল না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তা জেনেও কেন এজাহারে আসামিদের নাম অজ্ঞাত রাখলেন?’ তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে লেখাপড়ার জন্য দিয়েছিলাম, কুবি প্রশাসন আমাকে ছেলের লাশ উপহার দিয়েছে। এমন ঘটনায় দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহতদের স্বজনদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকলেও আমার পরিবারের খবর নেয়নি কুবি কর্তৃপক্ষ।’ বারবার আদালতে নারাজির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় কুবির ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলেন ইলিয়াস হোসেন সবুজ, সে এ হত্যার দায় এড়াতে পারে না। তাকে অভিযোগপত্রে যুক্ত করতে আদালতে আবেদন করেও ফলাফল পাইনি। আমি ছেলে হত্যার ন্যায়বিচারের জন্য আমরণ লড়াই করে যাব।’
তবে কুবির ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের ভাষ্য, নিহত খালিদ তাঁর গ্রুপে রাজনীতি করতো। তাঁকে গুলি করেছে বিপ্লব। সে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছিল, এখন জামিনে মুক্ত। বিপ্লব তো তাঁর (ইলিয়াস) গ্রুপের কেউ না।
মামলার বাদী কুবির সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) সাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমি মামলার বাদী হলেও এ পর্যন্ত আদালতে তদন্ত সংস্থা পরিবর্তনের বিষয়ে কিংবা ডিবি, সিআইডি ও পিবিআইর দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে কোনো নারাজি দিইনি। নিহতের পরিবারই নারাজি দিচ্ছে। তাই গত ৮ বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন জানান, সম্প্রতি মামলার ডকেট হাতে এসেছে। এখনও তদন্ত কাজ শুরু হয়নি।