কুমিল্লার দিগন্ত জুড়ে সরিষার হলদে হাসি

# এবার সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা কৃষকদের # ২০২৫ সালের মধ্যে কুমিল্লায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হবে-ডিডি, কৃষি অফিস
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

এবার কুমিল্লার দিগন্ত জুরে সরিষার আবাদ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় কুমিল্লায় এবার গত কয়েক বছরের তুলনায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুন সরিষার আবাদ হয়েছে জেলা কুমিল্লায়। সরিষার হলুদ ফুলে রঙিন হয়ে উঠছে কৃষিকের মুখ।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এবার কুমিল্লায় অনেক বেশী সরিষার আবাদ হয়েছে । যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে অল্প পুঁজি,খাটনি কম ,লাভ বেশী এই মন্ত্রে উদীপ্ত হয়ে এবার সরিষা চাষে কৃষিকরা প্রতিযোগিতা করে এগিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর কুমিল্লা জেলায় ১৬ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় যা দ্বিগুনের বেশী। ২০২১ সালে এই জেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৯ হাজার মেট্রিক টন সরিষা। এবার (২০২২) সরিষার উৎপাদন লক্ষমাত্র ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন। যা গেল বছরের তুলনায় তিন গুণের চেয়ে বেশি।
সরিষা চাষে জেলা ব্যাপী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় অর্ধ লক্ষ হাজার কৃষক জড়িত বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জানা গেছে, জেলার অন্যান্য জায়গার তুলনায় গোমতী নদীর পাড়ের মাটি সরিষা চাষের জন্য অধিক উপযোগি। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গোমতী নদীর দক্ষিণ পাড় ঝাকুনীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চাষ হচ্ছে সরিষার। সরিষা ফুলের মধূ সংগ্রহ করতে মৌমাছিরা করছে ভু ভু।
ঝাকুনীপাড়ার মৃত সেকান্দার আলীর ছেলে কৃষক মোহন মিয়া বলেন, আমি এবার ৩০ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত ফলন ভালো হয়েছে। জমি থেকে বাড়িতে নেয়া পর্যন্ত যদি এমন থাকে তাহলে বলতে পারব, ্এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে।
সরিষার চাষ কেন করছেন জানতে চাইলে মোহন মিয়া বলেন, এবার দেশে সোয়াবিন তেলের যে দাম গেছে এতে আমাদের মত গরীবরা তেল ছাড়া তরকারি খাইছি। তাই এবার ভাবছি সরিষা ক্ষেত করব। তেল আর কিনে খাব না।

সরিষা ক্ষেতের বর্তমান বড় আতংক হলো জাপ পোকা রোগ। এই জাপ পোকা থেকে বাঁচতে পারলে এবার গত বছর থেকে বেশী লাভ হবে বলে জানিয়েছেন মোহন মিয়া।

একই এলাকার কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, কৃষি অফিসের লোকেরা আমাদের কোন খোঁজ খবর রাখে না, পরামর্শ দেয় না। তারা যদি ক্ষেতে এসে দেখে বলত, কোন সময় কি সার বা মেডিসিন দিব তাহলে আমাদের ফলন আরো ভালো হতো।

বুড়িচংয়ের চরানল গ্রামের খালেক বেপারী, চৌদ্দগ্রামের নালঘরের মুজিবুর রহমান, মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুরের মহিউদ্দিন মোল্লা ,গোমতী নদীর পাড়ের বাবুল মিয়া ও মোহন মিয়াসহ প্রায় অর্ধশত কৃষক এ্ই প্রতিবেদককে জানান, সরকার যে ভাবে ধান চাষে উৎসাহিত করে এভাবে যদি সরিষা চাষে
উৎসাহিত করত তাহলে খুব দ্রুতই বাহিরের দেশ থেকে আর তেল কিনতে হতো না। এই সকল কৃষকরা প্রায় অভিন্ন কন্ঠে পৃথক পৃথক ভাবে বলেন, আমরা চাই সরকার আমাদের বিনা সুদে কিংবা একেবারে সহজ সুদে ঋণ দিক তাহলে আমরা আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশকে সরিষায় স্বয়ংসম্পন্ন করতে পারব ইনশ্আাল্লাহ।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, একমাত্র মসল্লায় সরকার ৪ % সুদে ঋন দেয়। আর ধান, সরিষাসহ অন্যান্য কৃষি কাজে ৭ % সুদে ঋন দেয়। আমার কুমিল্লা জেলার কোন কৃষক যদি সরিষাসহ যে কোন কৃষি কাজের জন্য ব্যাংক লোন পেতে চায় তাহলে আমার কাছে আসতে বলবেন আমি লোন পেতে সহযোগিতা করব।
কুমিল্লায় সরিষা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে কুমিল্লা জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৩০ হাজার হেক্টর জমি। ইনশাআল্লাহ আমরা এটা পূরণ করতে পারব।