কুমিল্লার লালমাই উপজেলা নির্বাচন : আবদুল হামিদ দুই প্রতিদ্বন্ধিকে হুমকি দিয়ে বললেন, হয় বন্ধ করো আর না হয়….

আমি হুমকি দেইনি,অসুস্থ হয়ে ঢাকা আছি- আবদুল হামিদ
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

# বক্তব্যের জন্য আবদুল হামিদকে সতর্ক করেছি-রিটার্নিং কর্মকর্তা # ওনাদের না দেখে আব্বা দলীয় নেতা হিসেবে হয়তো এই বক্তব্য দিয়েছেন- দলীয় প্রার্থী শাহিন

আগামী ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ হচ্ছে ২৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার। এই মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্ধি দুই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হুমকি দিলেন অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের বড় ভাই ও আসন্ন লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল হাসান শাহিনের বাবা আবদুল হামিদ। তিনি লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার আবদুল হামিদ লালমাই উপজেলার ভুশ্চি এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেয়ার সময় চেয়ারম্যান পদে তার ছেলের দুই প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী আবদুল মমিন মজুমদার এবং মো. হারুন অর রশিদ মজুমদারকে প্রকাশ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি হামিদ কত খারাপ, এটা টের পাইবা। আমি ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময় দিছি দুইজনকে যে আমার ছেলের সাথে নির্বাচন করবা না। হয় বন্ধ করো আর না হয় ২৮ তারিখ দেখা হবে রাস্তায়।’ তার এই বক্তব্য সংক্রান্ত একটি ভিডিও মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হামিদের সোয়া এক মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, যাতে তাঁকে এমনভাবে কথা বলতে দেখা যায়।
লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হামিদ অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) এমপি ও সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি গোলাম সারোয়ারের বড় ভাই। তাঁর ছেলে মোহাম্মদ কামরুল হাসান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি।
২৩ ফেব্রুয়ারির মতবিনিময় সভায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আবদুল হামিদ দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘এখন যাঁরা দাঁড়াইছে আমার ছেলের সাথে। কথা বুঝেন। ওনারা অনেক দায়িত্বে ছিলেন। লোটাস কামাল (অর্থমন্ত্রী) তাঁদেরকে অনেক কিছু দিয়েছেন। এ হারুনকে (মো. হারুন অর রশিদ মজুমদার) ছাড়া। হারুনকে কিছু দিছে কি না, আমি জানি না। এটা কামাল (অর্থ মন্ত্রী)জানে, আর হারুন জানে। কিন্তু মমিনকে (আবদুল মমিন মজুমদার) অনেক কিছু, অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে। সে যা পাইছে, লালমাই উপজেলার আর মানুষ তা পায়নি। লালমাই কলেজে প্রিন্সিপাল করে দিছিল, কালাম মজুমদারে (সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম মজুমদার) চাকরি দিছে, লোটাস কামালে প্রিন্সিপাল বানাইছে। এই যে প্রিন্সিপাল অইল, ভুশ্চির কোনো ছেলেমেয়েকে সে বিনা বেতনে ফরম ফিলাপ করাইছে? দেখাইতে বলেন, পুরা লালমাই উপজেলাতে একটা ছেলে অথবা একটা মেয়েকে ফরম ফিলাপ করাইছে টাকা দিয়া বা ২০০ টাকা কমাই দিয়া—এমন নজির আছে কি না। আমি ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময় দিছি দুইজনকে যে আমার ছেলের সাথে নির্বাচন করবা না। হয় বন্ধ করো আর না হয় ২৮ তারিখ দেখা হবে রাস্তায়। আমার বয়স ৮০ বছর। আর কয় বছর বাঁইছছাম, আমার বাঁচার আর সাধ নাই।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে রোববার(২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হামিদ বলেন, প্রকাশিত ভিডিওটি আমার না। আমি অসুস্থ। দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকায়। কে বা কারা আমার কন্ঠ নকল করেছে তা আমি জানি না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবদুল হামিদের ছেলে ও অর্থমন্ত্রীর ভাতিজা উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ কামরুল হাসান শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আত্মগোপনে আছেন। ওনাদের নির্বাচনী মাঠে না দেখে আব্বা দলীয় নেতা হিসেবে হয়তো এই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আমার জন্য মাঠে নেমেছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোদমে থাকবেন।’
এদিকে আবদুল হামিদের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম বলেন, হুমকির বিষয়ে এ পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরটি দেখে উনাকে(আবদুল হামিদ) সতর্ক করে বলেছি, যদি ভবিষ্যতে একই আচরণ করে তাহলে নির্বাচনী আইন মোতাবেক তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এ দিকে, লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর একাধিক অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, অর্থ মন্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে আলোচিত দুই প্রার্থীকে চাপ দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য। এই জন্য তারা দুই প্রার্থী মোবাইল ফোন অফ করে রেখেছে। প্রত্যাহারের সময় শেষ হলে তারা মাঠে নামবে।
লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক পদের এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগ অর্থমন্ত্রীর পরিবারের কাছে লিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি দু:খ করে বলেন, লোটাস কামাল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, স্থানীয় এমপি ও সরকারের প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী,তার ছোট ভাই, গোলাম সারোয়ার সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি,জেলার সহ সভাপতি এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার চেয়ারম্যান এবং তার (অর্থমন্ত্রী) বড় ভাই,আবদুল হামিদ লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি,জেলার সদস্য।এখন আবার তার (অর্থমন্ত্রী) ভাতিজাকে উপজেলার চেয়ারম্যান করার জন্য দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হামিদের ছেলে কামরুল হাসান শাহিন জেলা দক্ষিণ যুবলীগের আহবায়ক। এখন আবার তাকে আওয়ামীলীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী করা হয়েছে। সদর দক্ষিণ ও লালমাইয়ে কি আর কোন পরিবার আওয়ামীলীগ করে না ?
উল্লেখ্য, আগামী ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লার লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও অর্থ মন্ত্রীর ভাতিজা মোহাম্মদ কামরুল হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মমিন মজুমদার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ মজুমদার।