কুমিল্লায় অবস্থানরত সাতশ বিদেশী মেডিকেল শিক্ষার্থী

বাংলা ভাষা নিয়ে যা বললেন
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লায় সরকারি বেসরকারি চারটি মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করেন বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা। তাদের কাছে বাংলা ভাষা অনেক মধুর। তবে বাংলা ভাষার আঞ্চলিকতাকে বেশী পছন্দ বিদেশী শিক্ষার্থীদের।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ময়নামতি, ইষ্টার্ন , সেন্ট্রাল ও আর্মি মেডিকেল কলেজ। তার মধ্যে আর্মি মেডিকেল কলেজ ছাড়া বাকি চারটাতে অন্তত ৭ শ বিদেশী শিক্ষার্থী এমবিবিএস পড়ছেন।

ইষ্টার্ণ মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, নেপাল, শ্রীলংকাসহ বেশ কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থী রয়েছেন। কেউ নতুন ভর্তি হয়েছেন। কেউবা মাস দুয়েকের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে চলে যাবেন। কেউ আরো বেশ কয়েক বছর থাকবেন।

ভারতে কাশ্মির থেকে আসা সুজাত আহমাদ বলেন, ২০১৬ সালে তিনি ইর্ষ্টাণ মেডিকেলে ভর্তি হন। প্রথম প্রথম সুজাত কিছুই বুঝতেন না। পরে শিক্ষক ও বন্ধুদের সাথে মিলে বাংলা ভাষা শিখেছেন। জয় বাংলা তার প্রিয় ডায়লগ। সুজাতের কাছে বাংলা ভাষাটা এত ভালো লাগে এখন যে সুজাত মনে করেন তিনি এখন নিজের বাড়িতেই আছেন। সুজাতের কাছে বাংলাদেশের গরুর মাংশ এবং সবজি খুব প্রিয়।

কলকাতা থেকে আসা ঋদ্ধি দে বলেন, তার বাড়ি কলকাতা। তিনি ইর্ষ্টাণ মেডিকেল কলেজের ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশে তার ভাষা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। কারন এপাড়া ওপাড় দু বাংলাতেই ভাষা এক। তবে এখনকার আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে অনেক মাধুর্য্য আছে বলে জানান ঋদ্ধি। তিনি বলেন, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল ও সিলেটের আঞ্চলিক ভাষাটার প্রেমে পড়েছেন। এই ভাষাগুলো অনেক মিষ্টি। ভাষার এই আঞ্চলিকতাকে ঋদ্ধি অনেক সম্মান করেন।

ভারত থেকে আসা কপেশ^র বলেন প্রথম প্রথম বাংলা ভাষা শিখতে কষ্ট হয়েছে। এখন তিনি বাংলাতেই কথা বলেন বলে জানান।

ভারতের কেরেলা রাজ্য থেকে আসা আদিত্য বলেন, তিনি এখানে ৫ বছর আগে আসেন এমবিবিএস করতে। তার এমবিবিএস শেষ। আদিত্য বলেন, প্রথম প্রথম বাংলা শিখতে কষ্ট হতো। কারন কেরালায় নিজেদের বাড়িতে তারা বেশীর ভাগই ইংরেজীতে কথা বলেন। তবে বাংলা শিখে তারা আনন্দিত। এখন তাদের প্রিয় ভাষার একটা বাংলা। বন্ধুদের সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন মামা কেমন আছো? ভালো আছো?। দেশে ফিরে গেলে বাংলা ভাষাকে খুব মিস করবেন বলে জানান আদিত্য।

ভারতে মনিপুর থেকে আসা জে শুধু বাংলা ভাষাই শিখেন নি। তিনি এখন নজরুল রবীন্দ্র সংগীতের পাশাপাশি আধুনিক গান গেয়ে বন্ধুদের শোনান।

ইর্ষ্টাণ মেডিকেল কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আতাউল মাসুদ রাজিব বলেন, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হলে প্রথমে আমরা ভাষা শিখার ক্লাশ নেই। শিক্ষকরা বিদেশী শিক্ষার্থীদের সাথে ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলাতেও কথা বলেন। কারন বিদেশী শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাশের বাইরে গেলে তাদের যোগাযোগটা সহজ হয়। এতে করে বাংলা ভাষাটা দেশের বাইরেও সমৃদ্ধ হয়।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল আজাদ বলেন, প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা কুমিল্লায় আসেন। এখনো কুড়ি জনের বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। তারা বাংলা শিখেন। এদেশের সংস্কৃতি সর্ম্পকে জানেন। সেগুলো আবার নিজের দেশে গিয়ে প্রচার করেন। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আমাদের প্রানের ভাষা সারা বিশে^ এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে।