কুমিল্লায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন,ফসলি জমি হুমকির মুখে!

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় ফসলি জমিতে নিষিদ্ধ বরিং ড্রেজার (স্থানীয় নাম আত্মঘাতী ড্রেজার) দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কোনোরকম সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে প্রায় কয়েক মাস ধরে মুরাদনগরের বেশ কিছু বালুখেকোচক্র বালু তোলার মহোৎসবে মেতে উঠেছে। কিন্তু নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

বিশেষ করে এ উপজেলার সমতল ফসলি জমি, পুকুর, খাল থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার ফলে ভূমি ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে গোমতি নদীর পাড়ের এ উপজেলার পরিবেশ।

স্থানীয় জমি মালিকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মুরাদনগরে ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের ছালিয়াকান্দি ও ডুমুরিয়া গ্রামে দিন-রাত চলছে অন্যের ফসলি জমি থেকে জোর করে বরিং ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। সেই বালু দিয়ে পাশের তিতাস উপজেলার একটি সরকারি খাল ভরাট করা হচ্ছে । ওই গ্রামের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের শিকারীপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল মান্নান মেম্বারের ছেলে মো: ডালিম ও একই ইউনিয়নের দক্ষিণ ছালিয়াকান্দি গ্রামের লতিফ মেম্বারের ছেলে হারুন মুন্সির নেতৃত্বে এক ডজন ড্রেজার দিয়ে সমতল ফসলি জমির তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি দেবে যাওয়াসহ আশপাশের পরিবেশেরও ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মুরাদনগর উপজেলার ছালিয়াকান্দি এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার ফসলি জমিতে পাঁচটি ড্রেজার মেশিন বসানো। এর প্রতিটি মেশিনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একেকটি বাল্কহেড। প্রতিটি বোটে ১২/১৩ জন লোকের পাহারা।

ছালিয়াকান্দি এলাকায় ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দেদারচ্ছে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাল্ডহেডের মাধ্যমে পাশের একটি সরকারি খাল ভরাট করছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ডালিম ও হারুন মিয়া । এ সময় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তারা নড়েচড়ে বসে। ছবি তুললে তাদের অনেককেই ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের পিছু নিয়ে ধাওয়া করতে থাকে। পরক্ষণেই প্রভাবশালী মহলটি সাময়িক সময়ের জন্য বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিনগুলো বন্ধ করে দেয়।
একই এলাকার কয়েকজন জমির মালিক হাজী খুরশীদ, মাছ ব্যাপারী আলী, মনিরুল, চবদর আলী জানান, যে জমি থেকে বালু তোলা হচ্ছে সেই জমিসহ আশপাশের সমস্ত জমি তাদের। সেই জমিতে এক মাস আগে থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী ডালিম ও হারুন জোরপূর্বক আত্মঘাতী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা শুরু করেন। পরে মুরাদনগর নির্বাহী অফিসার কে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলে ও কোর্টে পিটিশন করেও কোনো সুফল মিলেনি। বরং প্রভাবশালীরা তাদের নানা হুমকি-দুমকি দিচ্ছেন।

অভিযুক্ত হারুন মুন্সি বলেন,আমি মানবাধিকার অধিকার সংগঠনে সদস্য, সবাইকে খরচ দিয়ে আমি ব্যবসা করি, আপনারা লেখে আমগো খেটে আঘাত করেন না।

আরেক অভিযুক্ত মোহাম্মদ ডালিমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দীন ভূঞা জনী বলেন, ড্রেজার বন্ধে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি। মুরাদনগরের প্রতিটি ইউনিয়নের আমাদের অভিযান চলছে। ড্রেজার দেখামাত্রই আমরা জব্দ করছি। আমাদের এই অভিযান অব্যহত থাকবে। আর কে বা কারা খাল দখল করছে, এটা নিয়ম বহির্ভূত। আমরা খোঁজ নিয়ে আমার নায়েব কে আমি সেখানে পাঠাবো। এই বিষয়ে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, বরিং ড্রেজার দিয়ে ভুগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমি মুরাদনগরের ইউএনওকে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে অবৈধ ড্রেজার মালিক ও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।