কুমিল্লায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেন ক্ষুন্ন না হয় -শাহাজাদা এমরান

সময়ের কড়চা
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে দেশের অন্য জেলাগুলো থেকে কুমিল্লা অনেক বেশি সহনশীল । এজন্যই কুমিল্লাকে বলা হয় শিক্ষা,সাহিত্য ও সাংস্কৃতির পাদপীঠ। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে গত ১২-১৩ বছর ধরে সারাদেশে যেভাবে চলছে কুমিল্লাও তার ব্যতিক্রম নয়। তারপরেও বলব, কুমিল্লা কুমিল্লাই। এর রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য, যার কারণে অন্য জেলাগুলোর তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই কুমিল্লারকে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আলাদা করা যায়।

গত কয়েক মাস ধরেই কয়েকটি বড় ধরনের ঘটনা ছাড়া সারা দেশেই মোটামুটি বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপি কিছু কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ , তারা ক্রমান্বয়ে সরকার বিরোধী একটি বড় আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার চেষ্টা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২২ আগস্ট থেকে বিএনপি দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ে জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভোলার দুই নেতার নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল পালন করে আসছে।

২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বিএনপির এই প্রতিবাদ সমাবেশে কোথায়ও আওয়ামী লীগ-বিএনপি, কোথায়ও বিএনপি-পুলিশ আবার কোথায়ও আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলেই আসছে। বিএনপির তৃনমূলের এই কর্মসূচি যে পদে পদে বাধাগ্রস্থ, হামলা মামলার শিকার হচ্ছে তা প্রতিদিনের গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিনিয়ত খবর আসছে। কিন্তু আমার আজকে সময়ের কড়চার উদ্দেশ্য কিন্তু সারা দেশ নয় । আমার লেখার মূল প্রতিপাদ্য, সারা দেশে কি হচ্ছে সেটা বিবেচ্য নয়, আমার বিবেচ্য আমাদের কুমিল্লায় কি হচেছ।

বিএনপির তৃণমূলের এই আন্দোলনে ইতিমধ্যে গত ৩০ আগস্ট তিতাস উপজেলা ও গতকাল (৩১ আগস্ট) নাঙ্গলকোট উপজেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে এবং বিএনপির তৃণমূলের এই কর্মসূচি পন্ড হয়েছে। এই দুটি উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, পুলিশও আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের শান্তি পূর্ণ মিছিল সমাবেশে হামলা করে আমাদের নেতাকর্মীকে আহত করেছে। আর নাঙ্গলকোটে কিন্তু পুলিশের কয়েকজনও আহত হয়েছে। অথচ, গত ৩০ আগস্ট আদর্শ সদর উপজেলার বিএনপির কর্মসূচি পালিত হয়েছে কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্রে কান্দিরপাড়স্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লার কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এত লোক আর দেখা যায়নি। এই কর্মসূচি কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আমার প্রশ্ন, জেলা সদরে যদি বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারে তাহলে উপজেলাগুলোতে সমস্যা কোথায় ? সমস্যা কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নাকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ, না কি বিএনপি নিজেই?

আমি আজ এই লেখার মাধ্যমে কুমিল্লার নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বিপিএম(বার) মহোদয়কে অনুরোধ করব, যেহেতু রাষ্ট্রীয়ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিরোধী দলের মিছিল মিটিংয়ে যেন কোন বাধা না দেওয়া হয়। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর সেই কথাটি রাখেন।
মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম একটি সৌন্দর্য। কোনোভাবেই যেন পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি দেখার কিন্তু অবশ্যই দায়িত্ব রয়েছে জনগণের বন্ধু হিসেবে পরিচিত পুলিশের।

আমরা সাধারণ জনগণ আর দেখতে চাই না, গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমাতে পুলিশ কাজ করছে। রাষ্ট্রের জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত আমাদের পুলিশ বাহিনী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে কাজ করবে, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে না, কুমিল্লার জনগণ নবাগত পুলিশ সুপারের কাছে এটাই প্রত্যাশা করে। তবে হ্যাঁ, বিরোধীদল যদি তাদের অহিংস আন্দোলনকে নিজেরাই সহিংসতার জায়গায় নিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে পুলিশ জনগণের জান এবং মাল রক্ষার স্বার্থে তার নিজস্ব দায়িত্ব পালন করবে – এতে আমাদের বলার কিছুই নেই।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলব, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি আপনারা সম্মান প্রদর্শণ করবেন। কেউ যাতে না বলতে পারে পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে অনভিপ্রেত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রামে যেন পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলকে সহায়তা করার অভিযোগ না আসে পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে পুলিশকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।

তিতাস এবং নাঙ্গলকোটে কেন বিরোধীদলের স্বাভাবিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হলো এটা তিন পক্ষকেই যার যার ইমেজের স্বার্থেই খতিয়ে দেখতে হবে। আরেকটি কথা, শুনেছি, লাকসাম-মনোহরগঞ্জসহ ক্ষমতাসীন দলের ভয়ে অনেক উপজেলায় বিএনপি নামতেই পারছে না।

সবশেষে , কুমিল্লা জেলার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতবৃন্দৃকে বলব, বিরোধীদল যদি তাদের কর্মসূচিতে একশজন নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ মানুষ হাজির করতে পারে সেই ক্ষেত্রে আপনারা দুইশ জন হাজির করে প্রমাণ করুন, আপনারা তাদের চেয়ে জনপ্রিয়। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কোনোভাবেই বিরোধীদলের ওপর হামলা করা বীরত্বের লক্ষণ হতে পারে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, বিএনপিও তো ক্ষমতায় থাকাকালে আমাদের সাথে একই আচরণ করছে। সেই ক্ষেত্রে আমি বলব, বাহে, তুমি অধম হইলে আমি উত্তম হবো না কেন?

লেখক : সাংবাদিক,সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক।