কুমিল্লায় লেগুনা স্ট্যান্ড দখল দ্বন্দ্বে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

আমার বুকের ধনকে ওরা মেরে ফেলল - বাবা
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ মাস আগে

এম. হাসান ।।

লেগুনা স্ট্যান্ড দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার শহরতলীর শাসনগাছায় স্থানীয় দু’পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও তিনজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের সবাইকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। নিহত ছাত্রদল নেতা মো. জামিল হাসান অর্ণব (২৭) শাসনগাছা মধ্যপাড়া এলাকার আজহার উদ্দিনের ছেলে। অর্ণব কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। সবশেষ সে ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে কুমিল্লা শহরতলীর (আদর্শ সদর উপজেলা) শাসনগাছা লেগুনা স্ট্যান্ড এলাকায় এ সংঘর্শ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে জানান কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কামরান হোসেন।

পুলিশ জানায় নিহত অর্ণবের বিরুদ্ধে একাধিক রাজনৈতিক মামলাও রয়েছে। অর্ণব শাসনগাছা বাস টার্মিনালের সততা বাস সার্ভিসের ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করতেন।
এদিকে, এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ নাজমুল হোসেন ও অনিক নামের দুইজনের অবস্থা আশংকাজনক। তাদের কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিশাদ নিশু নামের আরেকজনের অবস্থাও গুরুতর।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শাসনগাছা লেগুনা ও সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে শাসনগাছা মধ্যমপাড়া দফাদার বাড়ি ও মোল্লা বাড়ির দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। শুক্রবার জুমার নামাজের পর মধ্যপাড়ার আবুল কাশেম গ্রুপ এবং মোল্লা বাড়ির রাব্বি ও আলাউদ্দিন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এবং গোলাগুলি হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ৪ জন। যাদের মধ্যে অর্ণবের বুকের বাম পাশে গুলি লাগে।

গুলিবিদ্ধ চারজনসহ আহতদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অর্ণবকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনায় পর মোল্লা বাড়ির রাব্বির বাবা খলিল মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।

নাম প্রকাশ না শর্তে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, সংঘর্ষে জড়ানো আবুল কাশেম গ্রুপ এক সময় এই স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রক ছিলো। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় গত বছর রাজনৈতিক নেতারা রাব্বি-আলাউদ্দিনদের স্ট্যান্ডের দায়িত্ব দেন। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সংঘর্ষে জড়ানো দুই গ্রুপের যারা নেতৃত্বে আছেন- তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তবে নিহত অর্ণব ছাত্রদল করতেন।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, অর্ণব আমাদের একনিষ্ঠ কর্মী। এবারের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তার নাম বিবেচনায় রাখা হয়েছিল। সবশেষ সে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি চাই।

জেলা পুলিশ সুপার আব্দুর মান্নান বলেন, ছোট্ট একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দফাদার বাড়ি এবং মোল্লাবাড়ি ছেলেরা এই ঘটনার সাথে জড়িত। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। যে নিহত হয়েছে তার নাম জামিল হাসান অর্ণব। সে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র। জড়িতদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না পুলিশ জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান।

এদিকে ঘটনাস্থল থেকে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, গোলাগুলির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় একজন মারা গেছেন।

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, শাসনগাছা এলাকায় লেগুনা স্ট্যান্ডের বিরোধ নিয়ে দুইটি গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অর্ণব নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অপর তিনজনের মধ্যে নাজমুল ও অনিককে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। তবে এটা কোনো রাজনৈতিক বিরোধের ঘটনা নয়। লেগুনা-সিএনজি স্ট্যান্ডের আধিপত্য নিয়ে দুইপক্ষে সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছে জানিয়ে ওসি আরও বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত অর্ণবের বাবা আজহারউদ্দিন জানিয়েছেন আমার অভাবের সংসার এই ছেলেটা স্ট্যান্ডে কাজ করে ও টিউশনি করে সংসার চালাত। আমার বুকের ধনকে ওরা মেরে ফেলল; বিচারের আওতায় এনে আমি তাদের ফাঁসি চাই।