কুমিল্লা নগরীতে ৬ লাখ মানুষের জন্য ৬টি গণশৌচাগার !

নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে নেই একটিও
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

# পাবলিক টয়লেটের অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে – ডা. নিলুফা পারভীন
# কুসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে গণ শৌচাগার থাকা উচিত – আলী আকবর মাসুম
# শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণ গণশৌচাগার হবে – মেয়র রিফাত

কুসিকের হিসাব মতে, কুমিল্লা নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা হলো ৬ লাখ। এই ৬ লাখ লোকের জন্য গণশৌচাগার রয়েছে মাত্র ৬টি। অর্থাৎ প্রতি লাখ মানুষের জন্য গণশৌচাগার একটি। নগরীর অন্যতম প্রাণ কেন্দ্র কান্দিরপাড়ে নেই একটিও। ফলে প্রতিদিন নগরীতে চলাচলকারি নগরবাসী ও নগরীর বাহির থেকে আসা হাজার হাজার মানুষজনকে পোহাতে হয় নানা দূর্ভোগ। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে নারীদের দূর্ভোগ আরো বেশী। আর যে ৬টি আছে, সেগুলোও অপরিচ্ছন্ন । নানা অব্যবস্থাপনায় সেগুলোর অবস্থায়ও চরম পর্যায়ে। গণশৌচাগারের স্বল্পতা, অপরিচ্ছন্নতা, ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকায় প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর ৬টি গণশৌচাগার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গণশৌচাগার গুলোর বেশিভাগই দরজা নেই, ছিটকিনি নেই, বদনা নেই। কোনো কোনো বাথরুমে ময়লা-আবর্জনা ভরা। আবার কোনোটির কমোড ভাঙা।
গণশৌচাগার নিয়ে নগরীতে সবচেয়ে বড় সমস্য হচ্ছে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকা। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারীদের চলাচল। এ এলাকায় কোনো পাবলিক টয়লেট না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরীতে আসা যাওয়া হাজারো মানুষের।
সারা দিন বিশেষ করে বিকেলের পর থেকেই নগরীর টাউন হল মাঠে ব্যস্ততা শেষে একটু অবসরের সময় কাটানোর জন্য আসেন অনেকে। কিন্তু এ এলাকায় কোনো পাবলিক টয়লেট না থাকায়, টাউনহলের তিন পাশে যত্রতত্র স্থানে আগতদের প্রশ্রাব করতে দেখা যায় যা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ বিষয়। কুমিল্লা মহানগরীর কেন্দ্রীয় মসজিদ কান্দিরপাড় জামে মসজিদের দিকে এবং শহীদ মিনারের দিকে ফিরে অনেকেই প্রকৃতির কাজটি করে। যা পরিবেশের জন্যও খারাপ। টাউনহলের উত্তর ও পশ্চিম পাশে রয়েছে নগর মিলনায়তন ও কুমিল্লা অফিসার্স ক্লাব । সেখানেও একই কাজ করছে আগতরা। যদি এ এলাকায় পাবলিক টয়লেট থাকত তাহলে নিশ্চয়ই তারা যত্রতত্র ভাবে এ কাজটি করত না।
গতকাল মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) নগরীর রেল স্টেশন, ধর্মসাগর পাড়, চকবাজার, রাজগঞ্জ ও মোগলটুলি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সেগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব বলা হলেও সেগুলোতেও নেই স্যান্ডেল, পানি সরবরাহ, টয়লেট টিস্যু ও হ্যান্ডওয়াশ। মেরামতের অভাবে বিকল হয়ে রয়েছে পানি সরবরাহকৃত পানির কলগুলোও।
নগরীর রেল স্টেশন এলাকার পাবলিক টয়লেটটিতে গিয়ে দেখা যায়,হলদে হয়ে যাওয়া কমোড, ভাঙা বেসিন, মেঝেতে জমা পানি ও কাঁদা, ভাঙা দরজা, অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও সংস্কারের অভাবে উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তথ্যমতে, সিটি এলাকায় ২৭টি ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ৬টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ১ লক্ষ মানুষের জন্য ১টি করে পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই ৬টি পাবলিক টয়লেটের হাতেগুনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ ব্যবহারের অনুপযোগী।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের গাইনী বিভাগের অধ্যাপক ডা. নিলুফা পারভীন বলেন, সময় মত প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে সাধারণ মানুষ ও নগরবাসী। তাই নগরীর প্রাণ কেন্দ্র গণশৌচাগার থাকা বেশ জরুরি। শহরে এসে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার না করতে পারায় স্বাস্থ্যগত ঝুকিঁতে পড়ছে শ্রম ও পেশাজীবি নারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, ‘কুমিল্লায় পরিবেশ স্বাস্থ্য উপযোগী করে রাখার জন্য পাবলিক টয়লেটের বিকল্প নেই। জনসংখ্যার তুলনায় শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে নানা অসুবিধা তৈরি হবে। বিশেষ করে কুমিল্লা নগর অপরিকল্পনা এর জন্য দায়ী। সিটি করপোশন শুরু থেকে গণ শৌচাগারে বিষয় তেমন নজর দেয়নি।
আলী আকবর মাসুম আরো বলেন, আমি মনে করি, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে গণ শৌচাগার থাকা উচিত। বিশেষ করে নগরীর মূল কেন্দ্র গুলোতে গণ শৌচাগার করা কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া ছিন্নমূল, সাধারণ পথচারী, বিশেষ করে নারী শিশুদের জন্য গণশৌচাগার গুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা উচিত ।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, শহরে পর্যাপ্ত পরিমান গণশৌচাগার হবে। আমরা নতুন করে গণশৌচাগার জন্য নতুন টেন্ডার করবে। এছাড়া নগরীর কান্দিরপাড় এলাকা পুলিশ বক্সের সাথে একটি গণশৌচাগার করা হবে। তবে গণশৌচাগার করার জন্য বেশ কয়েকটি জায়গা দেখছি। আশা করি এ সমস্যা সমাধান হবে।