ছাত্রলীগের দফায়-দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ years ago

মহিউদ্দিন মাহি, কুবি ॥ ছাত্রলীগের দু’পক্ষের দফায়-দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় (কুবি)। শুক্রবার দুপুর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের উভয় পক্ষের মধ্যে ছোট-বড় অন্তত ছয়টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েকজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের আগে কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল রায়হানকে নামাজে যাওয়ার জন্য পথ দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশরাফুল রায়হান বঙ্গবন্ধু হল হয়ে মসজিদে যাচ্ছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের কর্মী সেলিম রেজা ও রিফাতসহ কয়েকজন তাঁর সামনে দিয়ে ধীরগতিতে হাঁটছিলেন। নামাজ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁদেরকে পথ দিতে বলেন আশরাফুল রায়হান। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে নামাজ শেষে আশরাফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রেজা ও রিফাতরা। এ থেকেই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন উভয় হলের নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনার রেশ ধরে ওইদিন সন্ধ্যায় নজরুল হলের ছাত্রলীগ কর্মী আবরারকে মারধর করেন বঙ্গবন্ধু হলের আকরাম ও সালাউদ্দিন সোহাগ নামে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় উভয় হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। উভয় পক্ষই একে অপরকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় বিভিন্ন নেতাকর্মীর হাতে লাঠি, রডসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। প্রায় এক ঘন্টা ধরে চলা সংঘর্ষ পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণে আনেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
এ ঘটনার পরই উভয় হলের ফটক বন্ধ রাখে হল প্রশাসন। তবে শনিবার দুপুরে খাবারের জন্য কয়েকজন বিচ্ছিন্নভাবে হল থেকে বের হতে থাকে। দুপুর ২ টার দিকে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও নজরুল হল ছাত্রলীগ কর্মী তানভীর আহমেদ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে খেতে গেলে তাকে মারধর করে বঙ্গবন্ধু হলের কয়েকজন কর্মী। এ ঘটনার জের ধরে ফের উত্তপ্ত হয়ে পড়ে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়। এরপর উভয় হলের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে প্রধান ফটকে। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যেই ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় প্রতিনিধি এবিএস ফরহাদ আহত হোন।
আহতদের মধ্যে আরও আছেন: বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো. সায়েম, একই হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার সাকিব, সাংগঠনিক সম্পাদক পাপন মিয়াজী, ছাত্রলীগ কর্মী কাউসার, সেলিম, মিরহাম রেজা, রাশেদ, বিজয় ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ, একই হলের কর্মী বায়েজিদ আহমেদ বাপ্পী, ফয়সাল, কামরুল, সাগর দেবনাথ, এমরান, আশিক, জামন, জয়রাজ, তানভীর, নাহিয়ান ও নাজিমসহ অন্তত ২৫ জন। এরমধ্যে বায়েজিদ আহমেদ বাপ্পীর বাপ্পীর মাথায় ১৬ টি সেলাই লেগেছে বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উভয় হলের নেতাকর্মীকে হলে আটকে রেখে আলোচনায় বসেছেন বিশ^বিদ্যালয় ও উভয় হল প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, এমন ঘটনা এই কমিটির প্রথম। হয়তো এটা আমাদের ব্যর্থতা। দুই হলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমি অভিযোগ শুনেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে আমি ব্যবস্থা নেব।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ বসে বিষয়টি মীমাংসা করবে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক স্থানে আছি। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।
তবে প্রক্টর ও উপাচার্যকে মুঠোফোনে কল দিয়ে কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।