তিতাস নদীর পাড়ে দর্শনার্থীদের ঢল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ।।
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তিতাস নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ এলাকায় এখন দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদ উৎসব পালন করতে দর্শনার্থীরা তিতাস ব্রিজ এলাকায় পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে আসছেন।

এ উপজেলায় বিনোদনের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য জায়গা না থাকায় বেশিরভাগ লোকজনই এখানে ছুটে আসছেন। তাই ওই স্থানে এখন যেন দর্শনার্থীদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠেছে। দর্শনার্থীরা মাতিয়ে তুলছেন পুরো এলাকা।

এক দিকে তিতাস নদী অন্য দিকে তিতাস ব্রিজ ও ডাবল রেল লাইন। সেই সঙ্গে রয়েছে হাল বিলের এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য। নদীর পাড়ে দক্ষিণা হাওয়া আর নির্ভেজাল নিঃশ্বাসে দর্শনার্থীদের যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। পড়ন্ত বিকেলে অপূর্ব মায়াভরা সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে দর্শনার্থীদেরকে যেন মুগ্ধ করে তুলছে। সকালে ওই স্থানে লোকজন না আসলেও বিকেলে বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা বয়সী লোকজন ছুটে আসছে। পড়ন্ত বিকেলে সেখানে আগত লোকজনরা প্রিয় জনদের সঙ্গে উৎসব মুখর সময় পার করার পাশপাশি সুন্দর মুহূর্তগুলো কেউ কেউ ক্যামেরা বন্দি করে রাখছেন।

দর্শনীয় স্থানটি ঢাকা-চট্রগ্রাম, আখাউড়া-চট্রগ্রাম, আখাউড়া-সিলেট রেলপথের আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পশ্চিমে তিতাস নদীর পাড়ে এ তিতাস রেলওয়ে ব্রিজটি অবস্থিত। দ্বিতীয় তিতাস রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় ফলে দর্শনার্থীদের কাছে এই স্থানটির গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া এই ব্রিজ থেকে সামান্য দূরেই রয়েছে হয়রত শাহপীর কল্লা শহিদ (রহ) এর মাজার শরীফ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈদ উৎসব পালন করতে তিতাস ব্রিজ এলাকায় নানা বয়সী লোকদের উপচে পড়া ভিড়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন করে তারা এখানে ছুটে এসেছেন। এরমধ্যে কেউ স্ত্রী, পুত্র নিয়ে, কেউ বা এসেছেন পরিবারের সদস্য নিয়ে ,আবার কেউ বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন নিয়ে। বিকেল থেকেই তরুণ তরুণীরা আড্ডা, গান বাজনা, আনন্দ আর হৈচৈ করে মাতিয়ে তুলছেন পুরো এলাকা। আর এই আনন্দগণ সময় স্মৃতিময় করতে অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেলফি তুলছেন। আবার কেউ বা ছবি তুলছেন। বিনোদন প্রেমিক লোকজন এভাবেই বিকেল থেকে সময় কাটায় রাত অবধি পযর্ন্ত। প্রতিদিন কমবেশি লোকজন এখানে আসলেও ঈদ থাকায় লোকসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দর্শনার্থীদেকে কেন্দ্র করে এখানে বিভিন্ন দোকানপাটও গড়ে উঠেছে।
পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকা থেকে ঘুরতে আসা মো. আশরাফুল আলম বলেন, চাকরি করার সুবাদে বেশি সময় বাইরে থাকা হয়। বাড়িতে আসলে ইচ্ছা থাকা সত্বেও কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসায় স্ত্রী,পুত্র,আর মেয়েকে নিয়ে তিতাস ব্রিজ এলাকায় ঘুরতে এসেছি। তিতাস পাড়ের মুক্ত বাতাস আর নয়নাভিরাম দৃশ্য আসলে খুবই ভালো লেগেছে।

উপজেলার আজমপুর থেকে আসা প্রবাসী মো. ফিরোজুর রহমান বাদল বলেন, দীর্ঘ বছর প্রবাসে থাকার পর ঈদের ১৫ দিন আগে ছুটিতে দেশে এসেছি। দেশে এসে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোথাও বের হয়নি। তাই ঈদ উপলক্ষে একটু আনন্দ পেতে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও বোনকে নিয়ে তিতাস পাড়ে আসা। এখানে এসে আমরা সবাই খুবই মজা করেছি।

শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে একমাত্র মেয়ের বায়না কোথাও বেড়াতে যাওয়া। তাই স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তিতাস ব্রিজ এলাকায় আসা। মুক্ত বাতাস, তিতাস পাড়ের সৌন্দর্য আর মনোরম পরিবেশ দেখে খুবই ভালো লেগেছে।

সদর উপজেলার চান্দি গ্রাম থেকে ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী মো. বাছির মিয়া বলেন, ঈদসহ বিশেষ দিন উপলক্ষে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সব সময় বেড়ানো হয়। কারণ বেড়ানো খুবই পছন্দ করি। তাই স্ত্রী, ছেলে মেয়েকে নিয়ে তিতাস পাড়ে আসা। সবাই মিলে গল্প করেছি এবং ছবি তুলেছি। অনেক লোকজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সব মিলিয়ে খুবই ভালো লেগেছে।

কলেজ শিক্ষার্থী পৌর শহরের তারাগন এলাকার মো. সাইফ হাসান বলেন, কলেজ খোলা থাকার কারণে বাড়িতে আসতে পারছি না। তাছাড়া বাড়িতে আসলেও পড়াশোনার চাপ থাকায় ইচ্ছে করলে দূরে কোথাও বেড়ানো সম্ভব হয় না। ঈদের ছুটি পাওয়ায় বন্ধুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। এখানকার মুক্ত বাতাস, দু’দিক থেকে ট্রেন আসা যাওয়ায় মনোমুদ্ধকর দৃশ্য দেখে খুবই ভালো লেগেছে।