মাত্র ৪ মাস আগে গোমতীতে প্রবল পাহাড়ি ঢলের রুদ্ররূপ দেখেছে দেবিদ্বার উপজেলাবাসী। দীর্ঘ সময় ধরে মাটি লুটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন নদীপারের বাসিন্দারা। বাঁধ মেরামত এবং বাঁধ পাহারা দিয়েও ঠেকানো যায়নি ভাঙন। অথচ ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই শুরু হয়ে গেছে মাটিখেকোদের লুটপাট। কৌশলে জিম্মি করে লুটে নেওয়া হচ্ছে অসহায় কৃষকের জমির মাটি। গোমতী চরসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে মাটি ব্যবসায়ী চক্রের এমন দৌরাত্ম্য।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, দেবিদ্বারে গোমতীর চরের মাটি কাটছে একাধিক চক্র। দিনে ফসলি জমি ও রাতে নদীর চরের মাটি কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে এ চক্র। ড্রেজার, ভেকু দিয়ে জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি যাচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিচু জমি ভরাটের জন্য। প্রশাসনের অভিযানের পরও কমছে না অবৈধভাবে মাটি কাটা। এতে অসহায় কৃষকের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
এদিকে মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে নদী রক্ষা বাঁধ আবারও হুমকির মুখে পড়েছে। ট্রাক্টর চলাচলের ফলে বাঁধ ও রাস্তার পাশের বাসিন্দাদের ধুলাবালিতে নাকাল হওয়ার জোগাড়।
গোমতীর মাটি কাটা বন্ধের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু মাটি কাটা বন্ধ হয়নি। জাফরগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, আসানপুর, খলিলপুর, শিবনগর, মাছুয়াবাদ, আবদুল্লাহপুর, শিবনগর, বারেরারচর, বড় আলমপুর, বিনাইপাড়, দুয়ারিয়া, রাজামেহার, ভিংলাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার চর ও ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে চক্রটি।
খলিলপুর এলাকার বাসিন্দা মোসলেহ উদ্দিনের ভাষ্য, মাটিখেকোদের অধিকাংশই প্রভাবশালী। তারা প্রথমে ছোট একটি জমি কিনে নেয়। তার পর ধীরে ধীরে আশপাশের জমির মাটিও কাটতে থাকে। পরে দালালদের মাধ্যমে কৃষকের জমির মাটি
বিক্রি করতে বাধ্য করে। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।
আবদুল্লাহপুর এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, দিনে কৃষকের জমির মাটি এবং রাতে চরের মাটি কাটে চক্রের সদস্যরা। নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে চরের মাটি লুট। শুক্র ও শনিবার অফিস বন্ধ থাকায় মাটি কাটার পরিমাণ বেড়ে যায়। অবিলম্বে মাটি কাটা চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন রুহুল জানান, গোমতীর চরের মাটি লুটের জন্য শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। চেষ্টা করেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। এতে চরের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রশাসন যদি জোরালো পদক্ষেপ নিতে না পারে, তাহলে চরের ভূমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। গত দুই দিনে বারেরা ও বড় আলমপুর এলাকার দু’জনকে আটক করে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ড্রেজার, ভেকু, ট্রাক্টর জব্দ ও চক্রের সদস্যদের জেল-জরিমানা করেও মাটি কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। সামনে আরও কঠোর অভিযান চালানো হবে।