দেবিদ্বারে শহীদ ৩৩ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

৩১ মার্চ, ঐতিহাসিক ‘ভিংলাবাড়ি-জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে মসজিদ যুদ্ধ’ দিবস। স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র ৫ দিনের মাথায় আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ১৫ সদস্যের একটি পাকিস্তানি সেনা দলকে পরাস্ত করে দেবিদ্বারের নিরস্ত্র বাঙ্গালীর গৌরব উজ্জল বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এ দিন।
১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত ১৫ সদস্যের একটি পাকিস্তানি সেনা দল পায়ে হেঁটে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। দলটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ময়নামতি সেনানিবাসের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে কাক ডাকা ভোরে দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ি এলাকায় স্থানীয়দের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়। হানাদাররা গুলি বর্ষণ করে অবরোধ ভেঙ্গে এগুতে থাকলে ওই দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ভিংলাবাড়ি থেকে জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে মসজিদ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। নিরস্ত্র বাঙালীরা সেদিন শত্রু সেনা নিধনে দেবিদ্বার থানার অস্ত্রাগার লুট করে। লুন্ঠিত অস্ত্র এবং দা, লাঠি, বল্লমের সাথে শুকনা মরিচ নামক বঙ্গজ হাতিয়ারটিও ওই যুদ্ধে ব্যবহার হয়েছিল। শত শত জনতার প্রতিরোধ যুদ্ধে টিকতে না পেরে সেদিন পাক সেনারা জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং জানালা দিয়ে জনতার উপর গুলি ছুড়তে থাকে।
বিকাল নাগাদ জনতা শ্রীপুকুর সাঁতরে পেছন দিক থেকে মসজিদের ছাদে উঠে সেই ছাদ ছিদ্র করে মরিচ পুড়িয়ে ধোয়া দিতে থাকে। মরিচের ধোয়ার তীব্র জ¦লোনিতে টিকতে না পেরে হানাদাররা মসজিদ ছেড়ে বেড়িয়ে এলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের হত্যা করে। মসজিদ থেকে বেড়িয়ে আসার পূর্বে পাক সেনারা তাদের সাথে থাকা টাকা-পয়সা, হাত ঘড়ি, ওয়ার্লেস, অস্ত্র-পাতি সব নস্ট করে ফেলে। অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত পাক হায়েনাদের পুরো দলটিকে পরাস্ত করতে ৩৩ বাঙালী শহীদ হন এবং আলফু ফকিরসহ অসংখ্যজন পংগুত্ব বরণ করেন। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র ৫ দিনের মাথায় পাক হায়েনাদের সাথে সম্মুখ সমরে পুরো দলকে পরাস্ত করে মুক্তিকামী জনতার বিজয় ছিনিয়ে আনার গৌরব বাংলাদেশে সম্ভবতঃ এটাই ছিল প্রথম। যে যুদ্ধটি ‘ভিংলাবাড়ি-জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে মসজিদ যুদ্ধ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
ওইদিন যুদ্ধে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলফু ফকির জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র ৫দিনের মধ্যে অত্যাধুনিক অস্ত্র-সস্ত্রে সু-সজ্জিত ১৫ সদস্যের একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে পরাস্থ করতে ৩৩ নিরস্ত্র বাঙ্গালী শহীদ হন এবং আমার মতো অনেকেই আহত হয়েছেন।
শহীদ আব্দুল মজিদ সরকারের ছেলে মো. খলিলুর রহমান সরকার বলেন, শহীদ ৩৩ বাঙ্গালীকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দানে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে ঘুরে ঘুরে চটি ক্ষয় করলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও সেই স্বীকৃতি আদায় করতে পারিনি। আমরা বেতন, সম্মানীসহ সুযোগ-সুবিধা চাই না, আমরা আমাদের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাবাদের স্বীকৃতি চাই।