যুদ্ধে যাত্রা যখন শুরু :
বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম বলেন,১৯৭১ সালে আমি আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর হাই স্কুলে দশম শ্রেনীতে পড়তাম। মার্চের শেষ দিকে যুদ্ধ শুরু হয়।যুদ্ধে যাওয়ার জন্য মন কেঁদে উঠল। কিন্তু কোন উপায় পাচ্ছিলাম না। একদিন হঠাৎ করে চাচাতো ভাই শাহ আলম জানতে চাইল যুদ্ধে যাব কিনা । আমি তো এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। তাই কাল বিলম্ব না করে বললাম,যাব। শাহআলম সাথে সাথে বলল, তাহলে এখনি ভারতে চল। শুরু হলো আমার যুদ্ধে যাত্রা।
প্রশিক্ষন যখন শুরু :
বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এপ্রিলের শেষ দিকে চাচাতো ভাই শাহ আলমের সাথে ভারতের সোনামুড়া যাই।সোনামুড়া ক্যাম্পে সকালে আমাদের সবাইকে লাইনে দাঁড়াতে বলে। তখন আমাদের ১৫জনকে লাইন থেকে থেকে বাছাই করে একটি গ্রুপ করেন। পরে ঐ দিনই আমাদের ১৫ জনকে মতিনগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । মতিনগরে এসে আবদুর রাজ্জাক নামে এক সেনা সদস্যকে পাই । যাকে আমি পূর্ব থেকে চিনতাম।এখানে আমাদের গ্রেনেডের উপর ১৭ দিন প্রশিক্ষন করানো হয়। পরে আমাদের ১৫জনকে নিয়ে একটি বৃত্তি বাহিনী গঠন করেন।এর কমান্ডার ছিলেন মুন্সিগঞ্জের হারুন অর রশীদ। আমাদের গ্রুপের মুল কাজ ছিল যেখানে হানাদার বাহিনী একত্রিত থাকবে বা তাদের বাংকারে সেখানে গিয়ে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে চলে আসা।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে আমাদের হাতিমারা ইয়ুথ ক্যাম্পে নেওয়া হয়। এখানে কয়েক দিন পর জানালো,তোমরা যারা রাইফেল চালাতে পার তারা আলাদা দাঁড়াও। এখানে আমরা মাত্র কয়েকজন রাইফেল চালাতে পারতাম। আরো কয়েক জায়গায় থেকে লোক এনে ১৫জন এর একটি গ্রুপ করে আবার ১৫ দিনের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। প্রশিক্ষন শেষ হলে অস্ত্র সস্ত্র দিয়ে আমাদের বুড়িচং সদর ক্যাম্পে পাঠানো হয় ।এখানে আমরা একাধিক যুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহন করি।
অণুগল্প :
যুদ্ধের অণুপম গল্প জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, আগষ্টের প্রথম দিকে গ্রেনেড নিয়ে প্রথম বারের মত দেশে প্রবেশ করি। একাধিকবার চেষ্টা করেও রসুলপুর ক্যাম্পে কিংবা তার আশেপাশে আমরা গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে পারতেছিলাম না। কারণ,এখানে হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী টিম ছিল আর রাজাকারও ছিল সক্রিয়। এক পর্যায়ে আমাদের টিমটিকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার আগে গ্রেনেডগুলো আমরা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে দিয়ে যাই।
নজরুল ইসলাম বলেন, একদিন পকেটে গ্রেনেড নিয়ে রাস্থা রেকি করার জন্য রসুলপুর দিয়ে যাচ্ছি। এমন সময় লক্ষ করলাম,সামনে দিয়ে কয়েকজন পাঞ্জাবী সেনা আসতেছে। মনে মনে দোয়া দরুধ পড়ে ভাবছি আজই আমার জীবন শেষ। তারা আমাকে সামনে পেলেই পকেটে হাত দিলে দেখবে গ্রেনেড। তখন আর রক্ষা নেই । হঠাৎ করে মহান আল্লাহর মেহেরবানীতে মাথায় বুদ্ধি এলো। নেমে পড়লাম এক ধানী জমিতে। জমির কৃষকদের সাথে আমিও ধান কাটা শুরু করলাম। এর ২ মিনিট পরই লক্ষ করলাম আমার পেছনে পাঞ্জাবীরা এসে উপস্থিত। পেছন দিক থেকে আমার কলার ধরে টান দিল। আমি দাঁড়ালাম। জানতে চাইল কেন আমি রাস্তা থেকে জমিতে নেমে এলাম। আমি উত্তর দেয়ার আগেই জমির মালিক বুদ্ধি খাঁটিয়ে উর্দুতে বলল,সে আমার জমির কাজের লোক। ধান কাটার জন্যই এসেছে। তখন আর কিছু না বলে তারা চলে যায়।
এরপর থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা বুড়িচং সদর ক্যাম্পে থেকে যুদ্ধ করি। ১৬ ডিসেম্বর আমড়াতলীর ইউনিয়নে এসে ক্যাম্প করি। এখানে জয়নাল আবেদীন,আবদুল ওহাব মাস্টার,আবদুল হান্নান ও সফিকুল ইসলাম প্রমুখরা ছিলেন।