নগরীর বাগিচাগাঁওয়ের আল-নূর হসপিটাল : ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু

# ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় সমঝোতা ! # থামছে না মায়ের আহাজারি
মোস্তাফিজুর রহমান।।
প্রকাশ: ৮ মাস আগে

কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার আল-নূর হসপিটালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।গত ২সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু নূর মোহাম্মদ বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মো.সবুজ মিয়ার ছেলে।
এ দিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে , নিহত শিশুর পরিবারের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাত্র ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা দিয়ে সমঝোতা করেছে বলে জানা গেছে। আর সন্তান হারা মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা।

রোববার(৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শনিবার সকাল ১০ টায় তানিয়া আক্তার এবং সবুজ মিয়া ছেলের প্রস্রাবের রাস্তার সমস্যা নিয়ে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও আল-নূর হসপিটালে ভর্তি হন। ডাক্তার বলেছে অপারেশন করলে সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে তাই । অপারেশনের জন্য রাত ৮ টায় ওটিতে নিয়ে যায় ডাক্তার। কন্ট্রাক হয় ২৫ হাজার টাকা। অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার দেবাশীষ চক্রবর্তী একটি এনেস্থিসিয়ার ইনজেকশন দিলে শিশু নূর মোহাম্মদ আস্তে করে চোখ বন্ধ করে ফেলে আর চোখ মেলেনি। রাত সাড়ে নয়টায় ডাক্তার জানায় শিশু নূর মোহাম্মদ মারা গেছে।

পুরো হসপিটাল জুড়ে ছিলো শোকের মাতম। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মায়ের আহাজারিতে আর কান্নায় ভারি হয়ে গেছে হসপিটালের ভিতর আর বাহির। স্বজনরা অভিযোগ করেন, রাত থেকেই নিহতের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দিয়েছে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। নিউজ সংগ্রহের কাজে গিয়ে অনেক সাংবাদিকও তাদের হামলার স্বীকার হয়েছে। ধামাচাপা দেওয়া বিষয়টি সাংবাদিকের কারণে আবার আলোচনায় আসায় সাংবাদিকদের উপরে অনেকটাই ক্ষিপ্ত হন হসপিটাল কর্তৃপক্ষ।

খবর নিয়ে জানা যায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সারাদিনের রফাদফার পরে সন্ধ্যার দিকে নিহতের বাবা সবুজ মিয়া এবং মা তানিয়ার হাতে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নগদ তুলে দেন হসপিটালের কর্তৃপক্ষ।
নিহত শিশুর মা মোসা. তানিয়া আক্তার বলেন, আমি আমার ভালো ছেলেকে নিয়ে হসপিটালে আসছি। আমার ভালো ছেলেকে তারা মেরে ফেলেছে। সন্ধ্যা ৭টায় এসে আমার স্বামীর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে ৮ টায় ওটিতে নিয়ে যায়। সেখানে ঢুকানোর পরে আমার ছেলেকে একটা ইনজেকশন দেয় সাথে সাথে আমার ছেলে অজ্ঞান হয়ে যায় আর চোখ মেলেনি। আমার ছেলে মারা গেছে রাত ৯ টায় এখন দুপুর ২টা বাজে এখনো আমার ছেলের লাশের মধ্যে বরাফ, মেডিসিন কিছুই দেয় নাই। তারা আমার ছেলেকে ফালাইয়া চলে গেছে । আর কোন খবর নেয় নাই। টাকার বিষয়ে তানিয়া বলেন, আমি চাই না আমার ছেলে আর কোন কষ্ট পাওক। তাই আমি রাজি হয়ে গেছি। তারা টাকা দিয়ে ছবিও তুলে রাখছে।
নিহতের স্বজনরা বলেন, রাত থেকে এখানে অনেক সাংবাদিক আসছে কিন্ত কেই নিউজ করে নাই। তারা মনে হয় হাসপালের পক্ষের সাংবাদিক। আমরা সমঝোতা চাইনি কিন্ত বাচ্চাটার কষ্ট হবে তাই মেনে নিয়েছি। এই ভুল চিকিৎসা দিয়ে মানুষ মারার বিচার আল্লাহ একদিন করবো।

নিহত শিশুর বাবা সবুজ মিয়া বলেন, আমার ভালো ছেলেকে তারা মেরে ফেলেছে। আমার ছেলে প্রস্রাবের রাস্তায় সমস্যা ছিলো । এই সমস্যার জন্য এতো বড় সমস্যা হতে পারে না। আমার স্বাক্ষর নিয়ে রাতে অপারেশন করানোর জন্য ওটিতে নিয়ে গেছে। একটু পরে এসে বলে আমার ছেলে মারা গেছে।

ডাক্তার দেবাশীষ চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে মুঠো ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

আল নূর হসপিটাল কর্তৃপক্ষের মুঠো ফোর বন্ধ থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আক্তারকে ফোন দিলে মুঠো ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা ডিপুটি সিভিল সার্জন ডা.নাজমুল আলম বলেন, আমাদের কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। আমরা যেহেতু বিষয়টি জেনেছি তদন্ত কমিটি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।