বুড়িচংয়ের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শিশু খাদ্যের সংকট তীব্র

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৯ মাস আগে

দুই দিন থেকে মনে করেছিলাম বাড়ি ছাড়তে হবে না। কিন্তু শনিবার বাড়িতে থাকার উপায় না পেয়ে পরিবার ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে বুড়িচংয়ের ফকির বাজার আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসি। কিন্তু এখানে শিশুর জন্য খাবার না থাকায় দুই বছরের মেয়েটি নিয়ে কষ্টে আছি। চিড়া মুড়ি তো মেয়েটা খেতে চায় না- এমন কথা জানালেন বলরামপুর গ্রামের দিনমুজুর নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বড়দের খাবারের সমস্যা নাই। বাড়িতে মেয়েটাকে বাজারের কেনা ডিব্বার দুধ ও সুজি দেওয়া হতো। টাকার অভাবে দুধ কেনা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার গোমতী বাঁধ ভাঙার কারণে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চালু করা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শিশুখাদ্যের সংকট দেখা গেছে। বাড়িতে আটকেপড়া শিশুদের একই অবস্থা। ঢাকা চট্টগ্রাম রেললাইনের পাশের বাকশীমুল ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পানিতে প্লাবিত। দুপুরে পিতাম্বর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি বড় পাতিল বসিয়ে শিশু তাইফাকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন তার বাবা ফরহাদ। তিনি জানালেন, গ্রামে শুকনো জায়গা নেই। ঘরের ভেতর শনিবার পানি উঠে গেলে চুলাও বন্ধ। চিড়া মুড়ি খেয়ে নিজেরা থাকতে পারলেও ছোট্র তাইফা নরম খাবার চাচ্ছে। মেয়েটা কান্নাকাটি করায় বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ি। গ্রামে আরও অনেক নারী শিশু আটকা পড়ে আছে। দুপুরে রেললাইনের পাশে পলিথিনে ঘেরা একটি পরিবারের ৫ সদস্যকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। এ সময় কুমিল্লা নগরী থেকে যাওয়া বক্তিগত উদ্যোগে তাদের মাঝে খিচুরি বিতরণ করতে দেখা গেছে। গৃহকর্তা আবদুল জলিল বলেন, বাকশীমুল গ্রাম থেকে সকালে চলে আসি। দেড় বছরের রিনাকে নিয়ে বিপদে আছি। বাড়িতে দুই দিন রান্না বন্ধ ছিল। আজ খিচুরি পেয়ে খেতে দিয়েছি। রাতে কি খাওয়াবো জানি না। শুধু জেসমিন ও তাইফা নয়; বন্যাকবলিত পুরো বুড়িচং এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ও বাড়িতে আটকে পড়া শিশুদের খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। রোববার ষোলনল ইউনিয়নের ভরাসার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি সংস্থার লোকজন শিশুদের প্যাকেট জুস কিনে দিয়েছেন। সেখানে আশ্রিত নারী তাছলিমা জানান, রাস্তার পাশে হওয়ায় প্রতিদিন শুকনো খাবার নিয়ে লোকজন আসছেন। কিন্তু শিশুখাদ্য কম আসছে। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, শুকনো খাবারের পাশাপাশি আমরা খিচুরি বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, নৌযান সংকটের কারণে রান্না করা খিচুরি কয়েক ঘণ্টা রাখা যাচ্ছে। বেশি সময় রাখলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবুও শিশুদের বিষয়ে মাথায় রেখে তাদের জুস, দুধসহ নরম খাবার বিতরণের জন্য নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে।