ব্রাহ্মনপাড়ায় দেবরের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের উপর হামলা, মামলা করে সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ

নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কুমিল্লার ব্রাহ্মনপাড়ার মালাপাড়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ ভূইয়ার বিধবা স্ত্রী পলাশি আক্তার ও তার সন্তানদের উপর একের পর এক হামলা ও মিথ্যা মামলা দায়ের করে এবং সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ উঠেছে আপন দেবর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। তার অব্যাহত অত্যাচার ও নির্যাতনে পরিবারটি আজ দিশেহারা হয়ে পড়ছে । মঙ্গলবার(১৫ নভেম্বর) দুপুরে নিজ বাড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ ভূইয়ার বিধবা স্ত্রী পলাশী আক্তার।

সংবাদ সম্মেলনে পলাশী আক্তার বলেন, আমার শ^শুর মৃত মাজেদুল হক ভুইয়ার তিন ছেলের মধ্যে মেজ ছেলে আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ ভুইয়াকে দীর্ঘ দিন ধরে নানী মাহমুদা খাতুনের সেবা যত্ম করায় সন্তুষ্ট হয়ে মৃত্যুর আগে ১৯৯১ সালে ২১২ শতক জমি দানপত্র করে দেন আমার নানী শাশুরী। নানী শাশুরী ও ফারুক আহমেদ ভুইয়া জীবিত থাকাবস্থায় এ নিয়ে পরিবারের মধ্যে কোন সমস্যা হয়নি।এরই মধ্যে ফারুক আহমেদের নানী মারা যায় এবং ২০০৮ সালে ফারুক আহমেদ ভুইয়াও মারা যান।

এরপর ফারুক আহমেদের বড় ভাই জাহাঙ্গীর ভুইয়া ও ছোট ভাই মিজানুর রহমান ভুইয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করা শুরু করেন। দেবর মিজানুর রহমান গং ভুয়া বিএস খতিয়ান করে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে নানীর দানকৃত বেশীর ভাগ সম্পত্তিই দখল করে নেন। এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পলাশী আক্তার বলেন, আর এস এবং দলিল মুলে আমার নানী শাশুরী আমার স্বামীকে তার সম্পত্তি দানপত্র করে গেছেন।

অন্যায় ভাবে আমাদের সম্পত্তি দখল করার প্রতিবাদে আমরা সামাজিক ভাবে বিচার চাইলে আমাদের মালপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আমাদের উভয় পক্ষের মধ্যে একটি আপোষনামা করে দেন। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে আমার দেবর মিজানুর রহমান ভুইয়া এই আপোষনামার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে আবারো আমাদের নানা ভাবে হয়রানী করতে থাকেন। ইতিমধ্যে আমার ও আমার ছেলেদের নামে দেওয়ানী মামলাসহ সে ৪/৫টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করেছে এবং বেশ কয়েকবার আমাদের উপর হামলা চালিয়ে আমার ছেলেদের আহত করেছে।

কান্না জর্জরিত কন্ঠে বীরমুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী পলাশী আক্তার আরো বলেন, গত ৯ নভেম্বর রাত ৮টায় আমার দেবর মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, ছেলে সিফাত জাহান তুহিন,দা, ছেনী, লোহার রড, লাঠি সোটা নিয়ে আমার বাড়ির উঠানে এসে আমার ছোট ছেলে রাফিকে বেধরক মেরে মারাত্মক আহত করে। এ সময় তারা আমার ছেলের সাথে থাকা মোবাইল ফোন, নগদ টাকা নিয়ে যায় এবং আমাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। পরে মারাত্মক যখম অবস্থায় আমার ছেলেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। দেবর মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী , ছেলেদের অত্যাহার নির্যাতনে আজ আমরা দিশেহারা এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

পলাশি আক্তার সাংবাদিকদের সামনে হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, আমার স্বামী ১৯৭১ সালে এই দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন। আজ সেই স্বাধীন দেশে তারই স্ত্রী হয়ে সন্তানদের নিয়ে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিনি, স্থানীয় এমপি এড. আবুল হাসেম,কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান,নির্বাহী অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে মিজানুর রহমান গংদের অত্যাহার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। এ সময় পলাশি আক্তারের দুই ছেলে মো. আল আমিন ভুইয়া ও নাফিজ আহমেদ রাফি উপস্থিত ছিলেন।

এ দিকে গত ৯ নভেম্বর বাড়িতে এসে ছোট ভাই রাফিকে নানা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করার অভিযোগ এনে গত ১৪ নভেম্বর ৩ জনকে আসামী করে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের ২নং আমলী আদালতে একটি মামলা করেন মৃত বীরমুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদের মেজ ছেলে মো. আল আমিন ভুইয়া। মামলার আসামীরা হলেন, সিফাত জাহান তুহিন(২৫) পিতা মো. মিজানুর রহমান, মোসা: নুরুন্নাহার বেগম(৫০) স্বামী মো. মিজানুর রহমান এবং মিজানুর রহমান(৫৫) পিতা মৃত মাজেদুল হক ভুইয়া।