সর্বাধুনিক মানব রোবট ‘নিকো’ তৈরী হলো কুমিল্লায়

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ বছর আগে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বাংলাদেশের সর্বাধুনিক মানব রোবট তৈরী হলো কুমিল্লায়। দীর্ঘ এক বছর ধরে গবেষণা করে রোবটটি তৈরী করেন কোয়ান্টা রোবটিক্স টিম। নতুন এই রোবটের নাম দেয়া হয়েছে নিকো।
জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থী এই রোবটটি তৈরী করেন। তারা হলেন কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও টিম লিডার সঞ্জিত মণ্ডল, আইসিটি বিভাগের ত্রয়োদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও হেড প্রোগ্রামার জুয়েল নাথ, আইসিটি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌসিফ বিন পারভেজ ও একই বিভাগের চর্তুদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন খান মাহি।
রোবটটির নাম নিকো। রোবটের ভার্সন ১.০, স্পিড ১.৫ গিগাহার্জ, সিক্সটি ফোর বিট য়ঁধফ-পড়ৎব এআরএম প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট র‌্যাম, ১২০ গিগাবাইট রম। ২৯ টি শক্তিশালী সার্ভো মোটর ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকার বডি পার্টস মুভমেন্ট এর জন্য, চলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে হাই টর্কের ডিসি মোটর। পরিচালনা করার জন্য রয়েছে সেভেন ইঞ্চ রাসবেরি পাই টাচ ডিসপ্লে।
কোন প্রকার তার সংযোগ ছাড়াই সরাসরি কথা বলে রোবটটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম নির্মিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত সবচাইতে এডভান্স রোবট।
টিম লিডার সঞ্জিত মণ্ডল বলেন, কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এই রোবট যে কারো ছবি দেখেই তার বায়োডাটা বলে দিতে পারে। যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। এটি তৈরীতে ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ টাকা। সঞ্জিত আরো জানান, রোবটটিকে কর্মক্ষেত্রে যেকোন কাজে ব্যবহার করা যাবে। মানুষের মতোই যেকোনো কাজ করতে সক্ষম আমাদের এই রোবটটি। রোবটিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহারের কারণে মানুষের মতই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে পারবে রোবট। এক চার্জেই প্রায় সাড়ে ছয় ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম এই রোবটটি। বাংলাদেশে এমন ধরনের রোবট সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করা হয়েছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ফ্যাব ল্যাবে।
সঞ্জিত আরো বলেন, আমাদের টিম কোয়ার্টার রোবটিক্স এর পূর্বে আরো দুইটি রোবট তৈরি করেছিল। রোবট নিকো আমাদের নির্মিত তৃতীয় রোবট। যেটি বাংলাদেশের সবচাইতে এডভান্স রোবট। এর পূর্বে বাংলাদেশ আগে কখনই ফুল থ্রিডি প্রিন্টেড রাসবেরি পাই বেইস কোন রোবট তৈরি হয়নি।।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফ্যাবল্যাবে তৈরী রোবটটি মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় লঞ্চ করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। রোবটটি এখন কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থাকবে। পরবর্তীতে যারা রোবট নিয়ে কাজ করবে তাদের সহযোগীতা করবে নিকো নামের এই রোবট।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আমি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকে একটা বিষয় মাথায় কাজ করছিলো যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। প্রযুক্তিজ্ঞান ছাড়া এই বিপ্লবে সামিল হওয়া সম্ভব হবে না। আমাদের আগামী প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমূখী করতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফ্যাবল্যাব তৈরী করেছি। এখানে যে কেউ গবেষণা করতে পারেন। এছাড়াও একটি রোবটিকস স্কুল নির্মাণ করেছি। যার নাম দিয়েছি স্কুল অব রোবটিকস। প্রত্যেকটি উপজেলায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব তৈরী করেছি। সবমিলিয়ে বলা যায় কুমিল্লার বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তিগত শিক্ষায় দারুণ আগ্রহ বেড়েছে। এর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকলে কুমিল্লাসহ পুরো দেশের মানুষ উপকৃত হবে।
কুমিল্লা কালেক্টেরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসে চলছে স্কুল অব রোবটিক্স। অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার তার প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে স্কুলটিতে বিভিন্ন বয়সী দুই শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস করেন। সপ্তাহে শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার এই তিন দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঠদান হয়।
অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথ ইস্ট, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত। তৃতীয় শ্রেণি থেকে ৫০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এখানে ক্লাস করেন।