সেদিন কল্পনাও করিনি যে আমরা বাঁচব : সেলিম হোসেন

বীরমুক্তিযোদ্ধার অনুগল্প- ৪
শাহাজাদা এমরান ।।
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

যুদ্ধের যাত্রা যখন শুরু :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন ঐতিহাসিক রেইসকোর্স ময়দানের ভাষন শুনার পরই বুঝতে পেরেছিলাম আর দেরি নয়, শিগগিরই শুরু হচ্ছে যুদ্ধ। কিন্তু কিভাবে যুদ্ধ শুরু হবে আমরা কিভাবে যুদ্ধে অংশ নিব এটা প্রথম দিকে বুঝে উঠতে পারিনি। পরে ২৫ মার্চ সংগঠিত গণহত্যার পরই বুঝে গিয়েছি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম। ২৮ মার্চ রাতে দেশকে হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত করার জন্য চলে গেলাম ভারতে। ভারতে গিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই নেতৃবৃন্দদের পেয়ে যাই। এরপর নেই প্রশিক্ষণ।
প্রশিক্ষণ যখন শুরু :
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কাঁঠালিয়া ক্যাম্পে আমরা ৩০০ থেকে ৪০০ জনের একটি দল প্রশিক্ষন গ্রহন করি। এখানে আমাদের ২০ জন করে একটি গ্রুপ করে দেওয়া হয়। যাতে প্রশিক্ষন শেষে এই ২০ জনের টিম নিয়েই আমরা যুদ্ধে চলে যেতে পারি। এখানে প্রশিক্ষ চলাকালে আমাদের সাথে ছিলেন ক্যাপ্টেন রেজা,হাবিলদার সিরাজ,কুমিল্লা জেলার বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল।প্রশিক্ষন শেষে আমরা ২নং সেক্টরে যুদ্ধ করার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের কমন্ডার ছিলেন মাহবুব কমান্ডার ও কবীর কমান্ডার। আমাদের যুদ্ধ ক্ষেত্র ছিল বিবির বাজার, চৌয়ারা, শশীদল, রাজাপুর, বুড়িচং ও ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলার অন্যান্য এলাকা এবং আদর্শ সদর উপজেলায়।
যুদ্ধের অনুপম গল্প :
যুদ্ধের অনুপম গল্প বলতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এম সেলিম হোসেন বলেন, ছোট বড় অনেক যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এক একটি যুদ্ধ এক একটি ইতিহাস। কোনটা থেকে কোনটার গুরুত্ব কম না। মে মাসের ৯ তারিখে ক্যাপ্টেন রেজার নেতৃত্বে বিবির বাজার আমরা ডিফেন্স করি। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অতর্কিত ভাবে আমাদের ডিফেন্সে আক্রমন করে। আমরা তাৎক্ষনিক ভাবে সর্বশক্তি দিয়ে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ি। সম্ভবত তখন আমার হাতে থ্রি নট থ্রি রাইফেল ছিল। সেদিন কল্পনাও করিনি যে আমরা বাঁচব। ক্যাপ্টেন রেজা ভাই বললেন, একটা গুলি থাকতেও কেউ পিছু হটবে না। এই পর্যায়ে আমাদের আক্রমণ আরো শক্ত করে এগুলাম। এক পর্যায়ে দেখলাম হানাদার বাহিনীর ডিফেন্স থেকে গুলি আসছে না। বুঝে নিলাম যে তারা পিছু হঁটছে। এই যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর প্রায় ১৮ থেকে ২০ জন নিহত হয়। আর আমাদের ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এই মুহুর্তে তাদের নাম মনে করতে পারছি না। তবে অসীম সাহসী ছিল তারা। বিবির বাজার এই যুদ্ধে আমাদের সাথে ছিলেন বর্তমান কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুলও।
পরিচয় :
বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এম সেলিম হোসেন। পিতা মৃত মো. হারিছ মিয়া ও মাতা মৃত সুফিয়া বেগম। ১৯৫১ সালের ২ নভেম্বর চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মাতার ৬ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়।১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন তিনি। ডিগ্রি পাস করেই চলে যান যুদ্ধে।১৯৭৯ সালে হোসনেআরা বেগমের সাথে তিনি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তিনি বর্তমানে এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা।
কাল বুধবার ছাপা হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদের অণুগল্প