সবুজে ভরে উঠেছে আমন ক্ষেত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ।।
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

দিগন্তজোড়ে সবুজের সমারোহ। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সবুজ আর সবুজ চোখে পড়ছে। ফাঁকা নেই যেন ফসলের মাঠ। রোদ-বৃষ্টির খেলায় সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা, যেন সবুজের গাঢ় রঙ্গে একাকার হয়ে আছে।

সকালের সূর্যের আলো ছড়িয়ে দেয় এক ধরনের মুগ্ধতা, দুপুরে অন্যরকম, বিকেলের গোধুলীর রং ছড়িয়ে পড়ে সবুজ ঘেরা মাঠে।
গরম আর হাল্কা হাওয়ায় আপন মনে দোল খাচ্ছে আমন ক্ষেত। আমন ক্ষেতে সবুজের ঢেউ খেলানো এমন দৃশ্য চোখে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায়।

চলতি মৌসুমে এ উপজেলার কৃষকরা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাল চাষ, সেচ পানি দিয়ে আমন আবাদ করেন। আর কৃষকের আগামীর সোনালী স্বপ্ন যেন লুকিয়ে আছে সবুজ ধান ক্ষেতের মাঝে। এর মধ্যে এ ধানের ক্ষেতকে ঘিরে স্থানীয় কৃষকরা যেন স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছেন।

গত বোরো মৌসুমে উন্নত প্রযুক্তির বীজ আর সেচ সুবিধা ভালো থাকায় ধান আবাদে তাদের ফলন ভালো হওয়ায় এবার আমনে তাদের উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আমন ধান রোপণের পর জমিতে ভালো পরিচর্যা নেয়ায় মাঠের অবস্থা খুবই ভালো। এখন পর্যন্ত যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে স্থানীয় কৃষকরা বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন।

এদিকে কৃষকদের স্বপ্ন পূরণে ক্ষুধা মুক্ত, খাদ্যে স্বনির্ভর বাংলাদশে বিনির্মাণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকারও। সেই সঙ্গে কৃষি বিভাগের আন্তরিকতায় কৃষিতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সেই সঙ্গে জমিতে ফলন ভালো ফলাতে নিয়মিত তারা তদারকি করছে। রোগ বালায়ের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে কৃষকদেরকে ধান জমিতে কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে পাখি দিয়ে পোকা মাকড় দমনে তারা উৎসাহিত করছেন। এ উপজেলায় ব্রি-আর ২৮, ব্রি-আর ২৯, ব্রি-৮৭, ৭৫, ৯৩, ৯৪, ৯৫,হীরা জাগরনীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ করা হয়। বোরোর চাইতে আমন আবাদে জমিতে ফলন ভাল ফলাতে কৃষকরা সর্বাত্তক চেষ্টা করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪ হাজার ৩ শ হেক্টর জমিতে ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধানের ফলন বৃদ্ধিতে তারা সব রকমের পরামর্শ ও সহযোগিতা কৃষকদেরকে করে আসছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, খড়মপুর, দূর্গাপুরসহ উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আমন ক্ষেতে সবুজে সমারোহ হয়ে আছে। সবুজে ঘেরা আমনের মাঠে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা রয়েছে অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মৌসুমে আমনের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষক মো. আবু মিয়া বলেন, এ মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। নিয়মিত বৃষ্টি হওয়া সময় মতো সার দেওয়াসহ সঠিক ভাবে জমির পরিচর্যা করায় এখন ধান গাছের অবস্থা খুবই ভালো। জমির যে অবস্থা বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।

কৃষক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে এ মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়। এবার চারা রোপণের পর থেকে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। এক বিঘা জমি আবাদ করতে শ্রমিক মজুরি, সারসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। বর্তমানে জমি সবুজে ভরে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে ধানের শীষ আসবে। নিয়মিত জমির পরিচর্যা করা হচ্ছে। আশা করি গত বছরের চাইতে এবার ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারবো।

কৃষক মো: আমির হোসেন বলেন, আমন আবাদের শুরুতে দফায় দফায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি। জমিতে বৃষ্টির পানি থাকায় আমন চারা রোপণে পানি নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। এতে রোপণে তার খরচ ও অনেক কমে এসেছে। বর্তমানে ক্ষেতের অবস্থা বেশ ভালো আছে।

কৃষক আবু মিয়া বলেন, এক সময় ধান আবাদে লোকসান গুনতে হতো। কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদে লাভবান হচ্ছেন। এ মৌসুমে রোধ বৃষ্টি ভিজে দিন রাত পরিশ্রম করে ৮ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করা হয়। জমির দিকে তাকালে মন জুড়িয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, গত বোরো মৌসুমে ফলন ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি লাভবান হয়েছিলেন। আশা করছি এ মৌসুমে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মদ তানিয়া তাবাসসুম বলেন, বর্তমানে আমন ধানের ক্ষেত সবুজে ভরে উঠেছে। তবে প্রথম দিকে টানা বৃষ্টিপাত হলে ও সময় মতো পানি চলে যাওয়ায় বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে খোঁজ খবর রাখছি। জমিতে ফলন ভালো করতে সার্বিকভাবে স্থানীয় কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করা যায়।