লালমাইয়ে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শাশুড়ি ও ভাসুর ও ননদের বিরুদ্ধে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার উত্তর হাজতিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রবাসী এবাদ উল্লাহ তার বড় ভাই মোঃ শহিদুল্লাহ (৩৫), বোন স্বপ্না বেগম (৩৭), বোনের স্বামী মোঃ সুমন (৪০) এবং মা আংকুরের নেছা (৬০) কে অভিযুক্ত করে লালমাই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী উম্মে সালমা সাদিয়ার সঙ্গে বেশ কয়েক বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় প্রবাসী এবাদুল্লাহ’র৷ পরে, সৌদি আরব প্রবাসী এবাদ উল্লাহ গত ডিসেম্বরে ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন। এদিকে, তার বড় ভাই মোঃ শহিদুল্লাহ, বোন স্বপ্না বেগম, বোনের স্বামী মোঃ সুমন এবং মা আংকুরের নেছা তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে জমি ও বসতভিটার মালিকানা নিয়ে বিরোধ চালিয়ে আসছেন। এ বিরোধের জের ধরে অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে এবাদ উল্লাহ’র স্ত্রী উম্মে ছালমা সাদিয়া কে মারধর ও অত্যাচার করে আসছেন।
রক্তাক্ত অবস্থায় প্রবাসীর স্ত্রী উম্মে সালমা
পরে, ঘটনার দিন দুপুরে অভিযুক্তরা এবাদ উল্লাহর বসতভিটায় জোরপূর্বক প্রবেশ করে টিনের ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে। পরে, এবাদ উল্লাহ তাদের বাধা দিলে তারা তাকে রামদা, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করে। এ সময় তার পিঠ, ডান পা, বাম হাতসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর জখম হয়।
এদিকে, এবাদ উল্লাহর স্ত্রী উম্মে ছালমা সাদিয়া যিনি ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তার স্বামীকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলে এবাদ উল্লাহ’র মা ও বড় ভাই মিলে উম্মে সালমা’কে রামদা দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এছাড়াও, অভিযুক্তরা তার চুল ধরে টানাটানি করে এবং তলপেটে লাথি মারে। পরে, ঘটনাস্থলে আশপাশের লোকজন চিৎকার শুনে ছুটে এলে অভিযুক্তরা এবাদউল্লাহ ও তার স্ত্রীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় এবাদ উল্লাহ ও তার স্ত্রীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মেডিকেলে আহত স্ত্রীর পাশে বসে আছেন স্বামী এবাদ উল্লাহ।
এদিকে, ভুক্তভোগী এবাদ উল্লাহ’র কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমার ২ মাসের অনাগত বাচ্চাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে আরেকটু হলেই হারিয়ে ফেলতাম। আমার নিজের মা, ভাই কিভাবে পারে আমাকে আর স্ত্রী’কে এভাবে মারধর করতে। গত ১৪ বছর পূর্বে আমার বাবা মারা যাওয়ায় আমার মা এর অন্যত্র বিবাহ হলে আমার মায়ের সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়। সেই থেকে আমার ভাই, বোন আর মা আমার ও পরবর্তীতে আমার স্ত্রীর সাথে খুবই খারাপ ও উশৃঙ্খল আচরণ করে। আমি আগে অনেক টাকাপয়সা দিয়েছি প্রবাস থেকে তাদেরকে। আমার অনেক টাকা আমার ভাই আমাকে ঠকিয়ে নিয়ে গিয়েছে৷ এখন এই কারণে আর টাকা দিই না বলে আমার স্ত্রীর উপর তাদের ক্ষোভ। তারা আমার জায়গা জমিও দখল করতে চায়। এইজন্য আমার স্ত্রীর মাথায় হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে ও আমাকে মারধর করে৷ আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।
অভিযোগকারী এবাদ উল্লাহ প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত বিচার চেয়েছেন।
এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত শহিদুল্লাহ বলেন, আমি ওইদিন ঘটনাস্থলে ছিলাম না। অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এই বিষয়ে লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, এই বিষয়ে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে নিয়েছে৷ তদন্ত চলমান রয়েছে আমাদের। এই ঘটনায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।